বাংলাদেশে ২০১১ সালে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে টেলিকমিনিকেশন খাত। দেশে মোট ৬টি মোবাইল অপারেটর আছে।
দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এ সেবার সুবিধা উপভোগ করছে। এশিয়ায় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যার তুলনায় এটা নেহাত কম অর্জন নয়। এ সেবার প্রসারের মাধ্যমেই সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে প্রদান করা হচ্ছে বহুমাত্রিক সুবিধা।
দেশে প্রচলিত ৪৫০১টি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে এ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। এ বছর অনলাইন ব্যাকিং সেবার সঙ্গে মোবাইল ব্যাকিংও জনপ্রিয় হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি যৌথউদ্যোগে মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ৮০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা, মোবাইল বার্তায় দেওয়া হচ্ছে কৃষি এবং শিক্ষা বিষয়ক তথ্য।
এখন মোবাইল ফোনে জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ এবং ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য প্রদান বাংলাদেশের টেলিকমের খাতের বড় অর্জন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে ৬টি মোবাইল অপারেটরের মধ্যে সর্বোচ্চ গ্রাহক সংখ্যায় এগিয়ে আছে গ্রামীণফোন।
২০১১ সালের শেষদিকে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এটি মোট সংখ্যার ৪৫ ভাগ। নতুন হিসাবে এগিয়ে আছে এয়ারটেল। এদের গ্রাহক সংখ্যা এবার ৫১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। গত বছর দ্রুত প্রসারের ক্ষেত্রে এয়ারটেলের তুলনায় এগিয়ে ছিল বাংলালিংক।
টেলিকমের অন্যতম আরেকটি খাত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। এ বছর এ খাতে ‘ওয়াইম্যাক্স’ প্রযুক্তির ইন্টারনেট যুক্ত হয়েছে। এ মুহূর্তে ফাইবার অপটিকে ইন্টারনেট সেবাদাতা আইএসপির সংখ্যা ২৪০টি।
ওয়াইম্যাক্স ২০১০ সালে ঘোষিত হলেও এর কার্যক্রম শুরু হয় এ বছরে। ইন্টারনেট মবিলিটির চাহিদা পূরণে এ সেবা নিয়ে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক অস্থিরতা তৈরি হয়। কিন্তু ওয়াইম্যাক্সের নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ বছর শেষেও সুনিশ্চিত না হওয়ায় এটি আইএসপি বাজারকে সেভাবে হুমকিতে মুখে ফেলতে পারেনি।
২০১২ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭ লাখ ৫ হাজারে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার এখনও ০.৫ ভাগ। ২০১১ সালে বিটিসিএল কর্তৃক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম প্রতি এমবি ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২০০৭ সালে এর দাম ছিল ৭৬ হাজার টাকা।
প্রতি এমবি ওয়াইম্যাক্সের প্রসারে ২০১১ মধ্যভাগে ঢাকার ভোক্তারা ৫০০ টাকায় ৫১২ কেবিপিএস গতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়। তবে ওয়াইম্যাক্স সেবা এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক।
ঢাকার বাইরে দু একটি বিভাগীয় শহরে এর নামমাত্র কার্যক্রম থাকলেও নেই ক্রেতা সন্তুষ্টি। এ মুহূর্তে বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্সের গ্রাহক সংখ্যা ২০ হাজার। কিউবির দাবি দৈনিক ব্যবহৃত ইন্টারনেটের ৬ ভাগের ১ ভাগ ট্রাফিক তাদের। এ ছাড়াও দেশের তৃণমুল পর্যায়ে এখনও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটই একমাত্র ভরসা।
দেশে ১৬ কোটি জনসংখ্যার ৩ ভাগের একভাগ অর্থাৎ ৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার বয়স ৩০ বছরের নিচে। এ বিপুল জনসংখ্যাকে কাজে লাগানো এবং কর্মসংস্থানের অন্যতম খাত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিকম।
বিদেশি বিনিয়োগের ৬০ ভাগই আসে মোবাইল সেবার জন্য। সুতরাং এ জনগোষ্ঠিকে যদি মোবাইল ফোনের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষিত করা যায় তবে তা কর্মবান্ধব উদ্যোগ হবে। একই সঙ্গে সরকার এ খাতে সিমের ওপর কর রেয়াত ছাড়াও গণমুখি উদ্যোগ নিতে পারে।
বাংলাদেশ সময় ২১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১১