ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

করোনায় বেড়েছে অনলাইনে কেনাকাটা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২০
করোনায় বেড়েছে অনলাইনে কেনাকাটা

ঢাকা: কোভিড-১৯ করোনা মহামারিতে ব্যবসা-বাণিজ্য যেখানে স্থবির সেখানে বেচাকেনা বেড়েছে ডিজিটাল এবং অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্য সেবা তথা ই-কমার্স খাতে। গেল ঈদে অন্যান্যবারের তুলনায় অন্তত চারগুণ বেশি অর্ডার পেয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। ডিজিটাল মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের প্রবণতাও বেড়েছে গ্রাহকদের মাঝে।

গেল মার্চের শেষ দিকে বাংলাদেশে করোনা হানা দেওয়ার সময় থেকে প্রায় দুই মাস বন্ধ ছিল দেশের বিপনীবিতানগুলো। ঈদের মৌসুমেও খোদ রাজধানীতেও খোলেনি বড় বড় শপিং সেন্টারগুলো।

আর পুরো করোনাকালই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য অফলাইনে ভরসা ছিল পাড়া মহল্লার মুদি দোকান এবং সুপার শপে। তবে ঘর থেকে বের হয়ে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করতে হয় বলে ছিল স্বাস্থ্যঝুঁকি।

 এমনই প্রেক্ষাপটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যোগানের হাল ধরাই নয় বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা ইকমার্সগুলো। ঈদ উল ফিতরের সময়েও সচেতন মানুষদের কেনাকাটার অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে ই-কমার্স। ফলে আগে থেকেই ই-কমার্স সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত থাকা গ্রাহকদের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নতুন গ্রাহক।  

ই-কমার্সখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, একদম সঠিক হিসেব এখনই না থাকলেও আগের অন্যান্য যেকোন ঈদের সময়ের থেকে এবার অর্ডার হয়েছে অন্তত চারগুণ বেশি।

ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমি কায়সার বাংলানিউজকে বলেন, ই-কমার্স খাত এই সময়ে নিজেদের সক্ষমতা দেখিয়েছে যে অনলাইনে কেনাকাটা করা সম্ভব। প্রচুর নতুন নতুন সেলার (বিক্রেতা) তৈরি হয়েছে যারা হয়তো এর আগে অফলাইন মাধ্যমেই ব্যবসা করতেন। কিন্তু এবার তারা ই-কমার্সের সুবিধাগুলো বুঝেছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমনটাই হয়ে থাকে।

 অনলাইনভিত্তিক পাইকারি কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম সদাগরডট কমের প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী বলেন, আমরা যারা বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) প্ল্যাটফর্ম আছি তাদের গড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অনলাইন সেল হয়েছে। আমাদের সদাগরডট কমেই প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্য হয়েছে। যারা রিটেইল ই-কমার্সে আছেন তাদের অর্ডারের অনুপাত অন্যান্য ঈদের সময় থেকে চারগুণ পর্যন্ত বেশি হয়েছে বলে আমরা জানতে পারছি। আর সামগ্রিকভাবে তো তাদের ব্যবসাও বেড়েছে।

 ই-কমার্স ভিত্তিক মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, করোনা ই-কমার্সের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যৎ কমার্স মানেই ই-কমার্স। সেই সক্ষমতা প্রদর্শন এবং আমাদের আর কী কী করার আছে, কী প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার একটা উপলক্ষ এটা। যেমন আমরা ইভ্যালি থেকে এই সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়েও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করেছি। এর মাধ্যমে ইকমার্সেও যেমন নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন তেমনি নতুন নতুন ব্যবসায়ীও যুক্ত হয়েছেন।  

তিনি আরো বলেন, এছাড়াও ঈদের সময়ে আমরা প্রচুর অর্ডার পেয়েছি। আগের ঈদের সময়ের থেকে অনেক বেশি। প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের পাশাপাশি প্রায় সমপরিমাণ নতুন নতুন ব্র্যান্ড আমাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে এবারের ঈদে তাদের পণ্য বিক্রি করেছে। এখন ফলের মৌসুম আসছে। অনেক ফল ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় আছেন। তাদের জন্য আমরা চালু করতে যাচ্ছি ‘ফ্রেস ভ্যালি’। এর মাধ্যমে ফলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তো বটেই, ফল চাষীরাও সরাসরি তাদের ফল দেশের যেকোন স্থানে থাকা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

রাসেল আরও বলেন, অনলাইনে কেনাবেচায় মূল্য ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধ করার সুযোগ থাকছে। ইভ্যালিতে মূল্য ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধের শতভাগ সুযোগ রয়েছে। ফলে দাম পরিশোধ নিয়েও কোন রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকছে না। এটাই ই-কমার্সের শক্তি।

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসা বাড়তি অর্ডারের চাপ সামলাতে হয়েছে লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও। দেশের অন্যতম শীর্ষ ডিজিটাল কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা এবং চিফ এক্সিলেন্স অফিসার বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, ২০১৯ সালের ঈদ আর ২০২০ সালের ঈদের মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল। আগে থেকেই ই-কমার্সের একটি গ্রাহক শ্রেণী ছিল। এর মাঝেও কিছু কেনাকাটা অফলাইনে হতো, কিছু অনলাইনে। কিন্তু এবার আরও বেশি সংখ্যক মানুষ ই-কমার্সে যুক্ত হয়েছে এবং বেশিরভাগ কেনাকাটাই শুধু অনলাইনে হয়েছে। ফলে ই-কমার্সগুলোর উপর যেমন একটি চাপ ছিল আমাদের উপরও ছিল।  

তিনি আরো বলেন, আমাদের ই-কুরিয়ারসহ মোটামুটি সবাই অন্যান্যবারের থেকে তিন গুণ বেশি পণ্যের অর্ডার পেয়েছি এবার। এরজন্য আমাদের আগে থেকেই একটা ব্যাক-ক্যালকুলেশন করা ছিল। আমরা ই-কুরিয়ার থেকে ঠিক ততটুকুই অর্ডার নিয়েছি, যতটুকু আমরা দিতে পারি। ২০ মে পর্যন্ত আমরা ইকমার্সগুলোর থেকে পার্সেল সংগ্রহ করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে, আরও বেশি লোকবল থাকলে হয়তো আমরা আরও বেশি পণ্য সরবরাহ করতে পারতাম।   

 বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
এসএইচএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।