সংসদ ভবন থেকে: বাংলাদেশে তৈরি ১০ হাজার টাকার ল্যাপটপের ‘দোয়েল’ বিপণন বন্ধ রাখা হয়েছে। দোয়েল-২১০২ মডেলটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট না করা এবং শুধু অ্যানড্রইড অপারেটিং সিস্টেমে (যা মূলত মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেম) কাজ করায় এ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সুবিদ আলী ভূঁইয়ার এক প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এ তথ্য জানান।
তবে আবার কবে নাগাদ এর বিপণন শুরু হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দেননি।
‘দোয়েল’ কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জানান, দোয়েল-২১০২ মডেলের নেটবুক উৎপাদন এবং বিপণন কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও কম দামে টেশিসে ট্যাবলেট পিসি সংযোজনের কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন।
তিনি আরও জানান, এ দেশের বেশিরভাগ কমপিউটার ব্যবহারকারী উইন্ডোজে অপারেটিংয়ে অভ্যস্ত। এ ছাড়াও এ মডেলের খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়া এবং এ মুহূর্তে ট্যাবলেট পিসির বাজার প্রতিযোগিতার বিবেচনায় এ মডেলটি আপগ্রেড করা প্রয়োজন। অথবা আরও কমমূল্যে ট্যাবলেট পিসি সংযোজনের কার্যক্রম নেওয়া প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞ কমিটি মতামত দিয়েছে।
গত বছরের ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোয়েল ল্যাপটপ সংযোজন এবং বিপণন কার্যক্রম উদ্বোধনের পর দোয়েল-২১০২ মডেলের প্রতিটি ১০ হাজার টাকায় স্বল্পসংখ্যক নেটবুক বিতরণ করা হয়।
সেসময় মন্ত্রীর পরামর্শে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় দোয়েল ল্যাপটপ ব্যাপকভাবে উৎপাদন ও বিপণনের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ ও প্ল্যান্টের অত্যাধুনিকীকরণ, ক্ষমতা বাড়ানোসহ প্রভৃতি বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে।
এম এ মান্নানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে রাজিউদ্দিন রাজু জানান, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মোবাইল সেটও তৈরি করা হবে। এ সেটগুলোতে বাংলা কিবোর্ড থাকবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বেসরকারিভাবে যারা মোবাইল সেট আমদানি করবে এগুলোতে বাংলা কিবোর্ড থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ইসরাফিল আলমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, সরকারের মালিকানাধীন টেলিটকে বিদেশি অনুদানের পরিমাণ অনেক কম। অন্য সব প্রতিষ্ঠানে হাজার-হাজার কোটি ডলার বিদেশি অনুদান দেওয়া হলেও সে তুলনায় টেলিটকে অনেক কম। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন টেলিটক ছিল লোকসানে। এখন তা লাভজনক।
ইসরাফিল আলমের তারকা চিহ্নিত একটি প্রশ্নের জবাবে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জানান, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত চালু মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৫৪ লাখ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের তিন কোটি ৬৫ লাখ, বাংলালিংকের দুই কোটি ৩৮ লাখ, রবির ১ কোটি ৬১ লাখ, এয়ারটেলের ৬০ লাখ, সিটিসেলের ১৮ লাখ এবং টেলিটকের গ্রাহক ছিল ১২ লাখ।
তিনি জানান, মোবাইল গ্রাহকরা ২০১১ সালে ১৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি সেবামূল্য পরিশোধ করেছেন।
মো. সফিকুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী রাজু সংসদকে জানান, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা প্রতিরোধে আরও গেটওয়ে যেমন, আইজি (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে), আইসিএক্স (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ) ও আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এবং ভিএসপি (ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাইডার) লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
তিনি জানান, গত তিন বছরে অবৈধ ভিওআইপি কার্যক্রম প্রতিরোধে বিটিআরসি অবৈধ স্থাপনায় ৮৭টি অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯০টি মোবাইল সিম, ৩৮টি মামলা দায়ের, ২১টি অপারেটর লাইসেন্স বাতিল ছাড়াও ৩০ হাজার ৭৮৯টি আইপি অ্যাড্রেস বন্ধ করা হয়।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় বৈধ পথে গড়ে প্রতিদিন দুই কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল বিনিময় হতো। বর্তমানে বৈধ পথে গড়ে প্রতিদিন চার কোটি ৫০ লাখ মিনিট কল বিনিময় হচ্ছে। ফলে এ খাতে সরকারের উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১৮৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১২