ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দিলমা রোউসেফ: সমাজতান্ত্রিক গেরিলা থেকে ব্রাজিলের হবু প্রেসিডেন্ট?

রানা রায়হান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১০
দিলমা রোউসেফ: সমাজতান্ত্রিক গেরিলা থেকে ব্রাজিলের হবু প্রেসিডেন্ট?

রিও ডি জেনিরো: লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল প্রথম বারের মতো একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেতে যাচ্ছেন। রোববারের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে দিলমা রোউসেফই হবেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।



নির্বাচনপূর্ব এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, দিলমার পক্ষে ৮০ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। নির্বাচিত হলে তিনি লুই ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার স্থলাভিষিক্ত হবেন।

লুলা দ্য সিলভা নিজেও তার উত্তরসূরীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরেই লুলা ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাবেন। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তিনি ব্রাজিলকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন। সেকারণেই তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পেরেছেন তিনি।

রিও ডি জেনিরোর বাসিন্দা হোসে মারিও বলেন, ‘আমি দিলমাকে ভোট দিতে যাচ্ছি। এটা যতটা না দিলমার জন্য, তার চেয়ে বেশি প্রেসিডেন্ট লুলার অনুরোধে। ’

রিও ডি জেনিরোর দুই কোটিরও বেশি বস্তিবাসী মানুষের দারিদ্র দূর করেছেন তিনি। গত দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এই কাজের জন্য ব্রাজিলের মানুষ লুলাকেই কৃতিত্ব দেন।

ব্রাজিল এ মুহুর্তে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। অনেকেই মনে করেন, লুলার প্রচেষ্টা ও দরিদ্রদের সহায়তার নীতিকেই অনুসরণ করবেন দিলমা।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নয়জন। এর মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা রোউসেফ সহ হোসে সেরা, মেরিনা সিলভা ও প্লিনিও দ্য আরুদা সাম্পাইয়ো রয়েছেন।

এর আগে লুলা দ্য সিলভার জ্বালানি মন্ত্রীর দায়িত্ব করেছেন দিলমা। সর্বশেষ চিফ অব স্টাফের দায়িত্বও পালন তিনি।

১৯৪৭-এ জন্ম দিলমা রোউসেফ-এর বাবাও মার্কসবাদী রাজনীতিক ছিলেন। ছোট বয়সেই বাবার প্রেরণায় পড়াশুনার অভ্যাস তৈরি হয়। বাবা ছিলেন বুলগেরীয় বংশোদ্ভূত। তরুণ বয়সে মার্কসবাদী গেরিলাদের সঙ্গে যুক্ত হন। নিষিদ্ধ আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি করেন। সেই সময়েই অস্ত্র চালনা থেকে শুরু করে সব গেরিলা কৌশল রপ্ত করেন। মার্কসবাদে দীক্ষা নেন। রেগিস ডিব্রে’র বিখ্যাত বই `রেভল্যুশন ইনসাইড দ্য রেভল্যুশন` পড়ে প্রচণ্ড অনুপ্রাণিত হন। ব্রাজিলের তৎকালীন সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে সশস্ত্র লড়াই করেন। এই অপরাধে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত জেল খেটেছেন। এসময় তার ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হয়।

দিলমার মতে, বিদ্যালয় জীবনেই তিনি তার দেশের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ওয়ার্কার্স পলিটিক্স নামের সংগঠনে যোগ দেন। সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের প্রশ্নে সংগঠনটি একসময় দুই ভাগ হয়ে যায়। এক অংশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে মতা দখলের পে যায়, আরেক অংশ সশস্ত্র সংগ্রামকেই বেছে নেয়। সশস্ত্রপন্থী দলটির নাম হয় কমান্ড অব ন্যাশনাল লিবারেশন। দিলমা বেছে নেন এই দলকেই। এসময় মার্কসবাদী আদর্শ ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করেন।

১৯৭২ সালে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর বিভিন্ন কাজ করেন তিনি। পড়াশুনার চেষ্টাও করেন। পুরনো গেরিলা বন্ধুদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। ২০০০ সালে যোগ দেন লুলার ওয়ার্কার্স পার্টিতে (পারতিদো দস ত্রাবালহাদোরেস--পিটি)। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর লুলা তাকে জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

ব্রাজিলের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। আর ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে জনগণ তার সঙ্গেই রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।