রাশিয়ার ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন দেশটিতে বিধ্বস্ত হওয়া একটি উড়োজাহাজের যাত্রী তালিকায় রয়েছেন। এমনটি বলছে রাশিয়ার বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, ওয়াগনারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন জানায় যে, প্রিগোজিনের মালিকানাধীন প্রাইভেট উড়োজাহাজটি রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল।
উড়োজাহাজটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাচ্ছিল। এতে সাত যাত্রীর সঙ্গে তিনজন ক্রুও ছিলেন।
গেল জুনে প্রিগোজিন রুশ সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে বা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
এই বিধ্বস্ত হওয়ার খবর একই দিন এলো যেদিন রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে বিমান বাহিনীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেল।
জেনারেল সুরোভিকিনের সঙ্গে প্রিগোজিনের সুসম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। তবে বিদ্রোহের পর থেকে তাকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
ওই উড়োজাহাজটি তিভিয়ের অঞ্চলের কুঝেনকিনো গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হয়। স্থানটি মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রায় মাঝামাঝি দূরত্বে।
গ্রে জোন জানায় স্থানীয় বাসিন্দারা উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে দুটি ধাক্কার শব্দ শুনতে পান এবং ধোঁয়ার লেজ দেখতে পান।
বার্তাসংস্থা তাস বলছে, প্রিগোজিনকে বহন করা এমব্রায়ের লিগ্যাসি উড়োজাহাজে আগুন ধরে মাটিতে গিয়ে পড়ে।
এটি আরও বলছে যে, উড়োজাহাজটি আধ ঘণ্টারও কম সময় উড্ডয়ন করেছিল।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। জরুরি সেবাদান সংস্থা ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
আরেক বার্তাসংস্থা আরআইএ বলছে, আটটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রে জোন বলছে, প্রিগোজিনের মালিকানাধীন আরেকটি জেট বিমান মস্কো অঞ্চলে নিরাপদে অবতরণ করেছে।
৬২ বছর বয়সী প্রিগোজিন ২০১৪ সালে ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন। এই গোষ্ঠীতে এখন ২৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছেন।
ওয়াগনার ইউক্রেন, সিরিয়া, পশ্চিম আফ্রিকায় সক্রিয়। নির্মমতার জন্য এর খ্যাতি রয়েছে।
প্রিগোজিন ২৩-২৪ জুন বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইউক্রেন থেকে তার সৈন্য সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ অন ডন দখলে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে টানাপোড়েনের পর এই পদক্ষেপ নেন প্রিগোজিন।
এই বিদ্রোহ একটি চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল, যা ওয়াগনার সৈন্যদের বেলারুশে যেতে বা রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতি দিয়েছিল।
প্রিগোজিন নিজে বেলারুশে স্থানান্তরিত হতে রাজি হয়েছিলেন। তবে দৃশ্যত তিনি স্বাধীনভাবেই চলাফেরা করতে সক্ষম হন। তাকে রাশিয়ায় জনসমক্ষে উপস্থিত হতে দেখা যায় এবং আফ্রিকায় তার একটি ভিডিও প্রকাশ পায়।
বিদ্রোহের পর তাকে অনেকে হেঁটে যাওয়া মৃত মানুষ হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রিগোজিনের চ্যালেঞ্জের প্রতি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল ভীতিকর। এটিকে ২৪ জুন একটি ভিডিওবার্তায় বিশ্বাসঘাতকতা এবং পিঠে ছুরিকাঘাত বলে অভিহিত করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
সেই চুক্তির অর্থ এই ছিল না যে তিনি নিরাপদ ছিলেন।
প্রতিশোধ, সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নসের মন্তব্য, এই খাবারের ঠান্ডা পরিবেশন পুতিনের পছন্দ।
এর কোনটিই অবশ্যই প্রমাণ করে না যে, প্রিগোজিন এবং তার কর্মীদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল।
কিন্তু পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো দাবিতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হলে এটি যে দুর্ঘটনা ছিল, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভ্রু কুঁচকানো দেখা যাবে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হলে কেউ অবাক হবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
আরআইএস/আরএইচ