আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথিদের আমন্ত্রণপত্রে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
অন্যদিকে আশিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন। সেখানেও সরকারি নথিতে তাকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’ বলা হয়েছে। ছেঁটে ফেলা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মোকাবিলায় নাজেহাল বিজেপি ও সরকার দেশের নাম বদলাতে চলেছে?
ভারতের সংবিধানের প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইস ভারত’ কথাটি। সংবিধানকাররা দুটি নামই নিয়েছিলেন। আরএসএস অবশ্য বরাবরই ভারত ব্যবহার করে। তারা ইন্ডিয়া ব্যবহার করে না। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ইন্ডিয়া ছেঁটে ফেলে দেশের নাম ভারত রাখা উচিত।
সম্প্রতি ২৮টি বিরোধী দল মিলে যে জোট গঠন করেছে, সেটির নাম রাখা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’।
এরপরই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া ছেঁটে দিয়ে শুধু ভারত রাখার পর অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
এখন প্রথম ও প্রধান প্রশ্ন হলো, তাহলে কি এবার ইন্ডিয়া বাদ দিয়ে দেশের নাম শুধু ভারতই রাখা হবে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, এই নামবদলকে পাকা করতেই কি সংসদের বিশেষ জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়েছে? তৃতীয় প্রশ্ন, এবার বিরোধীরা কী করবে? চতুর্থ প্রশ্ন, এই সিদ্ধান্ত বদল করে কি ভোটের ময়দানে লাভ পাবে বিজেপি?
দেশের নামবদল কোনো বিরল ঘটনা নয়। কিন্তু নামবদলের একটা কারণ থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কেন ইন্ডিয়া ছেঁটে ফেলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষত্রে শুধু ভারত ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
প্রথমে সামনে আসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণপত্র সামনে আসে। এরপর বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র আশিয়ান সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্ড টুইট করেন। পাশাপাশি একটি লাইনই তিনি লেখেন, প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্রের ছবি দিয়ে টুইট করে জাতীয় সংগীতের একটি লাইন তুলে লিখেছেন, জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্যবিধাতা।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও টুইট করে বলেছেন, রিপাবলিক অব ভারত- আমি খুশি ও গর্বিত যে, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে অমৃতকালের দিকে যাচ্ছি।
এদিকে বিশেষ জরুরি অধিবেশন ডাকা নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে টুইট করে বলেছেন, এই অধিবেশন ডাকার আগে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। তাদেরও কিছু জানানো হয়নি। গণতন্ত্র এভাবে চলে না।
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেছেন, ইন্ডিয়া ছেঁটে ফেলাটা বোকার মতো কাজ হবে। কংগ্রেস নেতা ও রাহুল গান্ধীর অন্যতম পরামর্শদাতা জয়রাম রমেশের দাবি, বিরোধীরা একসঙ্গে এসেছে, তারা জোটের নাম রেখেছে ইন্ডিয়া। তাই এখন দেশের নামবদল করা নিয়ে নাটক করা হচ্ছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রশ্ন, বিরোধীরা এবার যদি নিজেদের জোটের নাম ইন্ডিয়া থেকে ভারত করে দেয়, তাহলে কি দেশের নামই বদলে দেওয়া হবে?
আরজেডি নেতা মনোজ ঝা-র বক্তব্য, বিরোধীদের কাছ থেকে ইন্ডিয়া বা ভারত কোনোটিই কেড়ে নেওয়া যাবে না।
নামবদলের কথা সামনে আসার পর সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে কংগ্রেস নেতাদের জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে মূলত দল কী কৌশল নেবে তানিয়ে কথা হয়। এরপর জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন খাড়গে।
বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেছেন, যে কংগ্রেস ভারত জোড়ো নাম দিয়ে যাত্রা করে, তারা ভারত মাতা কি জয় বলতে ঘৃণা করে।
ডয়চে ভেলে অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
আরএইচ