‘আহত সেই শিশুর বিছানাজুড়ে যে একাকীত্ব, তা মহাবিশ্বে আর কোথাও নেই, যাকে দেখার মতো কোনো পরিবার নেই। ’ গাজা সিটিতে কাজ করা ব্রিটিশ চিকিৎসক গাসান আবু সিত্তাহ অনলাইনে কথাটি লিখে পোস্ট করেন।
তিনি যুক্তরাজ্যে প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জন হিসেবে কাজ করেন। এখন তিনি কাজ করছেন গাজা শহরের আল শিফা হাসপাতালে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি।
হামাস গেল সপ্তাহে ইসরায়েলে হামলা চালায়। জবাবে ইসরায়েলও হামলা চালানো শুরু করে। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই। বিধ্বস্ত গাজায় হাসপাতালগুলো এখন নানা সংকটে ভুগছে।
ইসরায়েলের হামলায় ২ হাজার ৮০০ এর বেশি লোকের প্রাণ গেছে। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত ১ হাজার ৪০০ এর বেশি।
গাসান আবু সিত্তাহ বিবিসি রেডিও ফোরকে বলেন, হাসপাতালে আসা আহতদের ৪০ শতাংশই শিশু। এগুলো বিস্ফোরণের আঘাত। বোমার আঘাতে ভয়াবহ ক্ষত তৈরি হচ্ছে। পুড়ে যায়, দেয়াল ভেঙে পড়ে ক্ষত হয়। লোকজনকে বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে টেনে বের করতে হয়।
গাজায় এই চিকিৎসক যা দেখছেন তার বর্ণনা দিলেন। সেখানে অনেক আহত শিশু রয়েছে, যার পরিবার আর বেঁচে নেই। তিনি বলেন, প্রতিদিনই এই ধরনের ঘটনা দেখছি। আমাদের বলা হয়, শিশুটিই পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য।
রোববার তিনি বলেন, তিনি পাঁচ বছর বয়সী দগ্ধ এক মেয়ে শিশুর চিকিৎসা করেছেন। চার বছর বয়সী আরেক শিশুর চিকিৎসা করেছেন, যার মুখের অংশ পুড়ে গেছে এবং মাথায় আঘাত রয়েছে।
এই চিকিৎসক বলেন, ধ্বংসাবশেষে নিচে চাপা পড়া পরিবারের সদস্যের মধ্যে শুধু তাদেরই খুঁড়ে বের করে আনা গেছে।
কিছুদিন আগে তিনি গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে এক চিকিৎসকের সন্তানের চিকিৎসা করছিলেন। ওই চিকিৎসক ও তার আরেক সন্তান নিহত হয়েছেন। আহত মেয়েটিই শুধু তার পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা সদস্য।
গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে নিহতদের এক চতুর্থাংশই শিশু। আর সেখানে আহত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। হাজারখানেক লোক ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিএএফএবি নামে একটি আন্তর্জাতিক সামাজিক পরিষেবা নেটওয়ার্ক চালান ক্যারোলিন হাউসম্যান। যুদ্ধে যাদের আর কেউ বেঁচে নেই তাদের সাহায্য করে সংস্থাটি। ক্যারোলিনের সংস্থাটিও অনুমান করতে পারে না কতজন এমন পরিবারছাড়া হয়েছে। তবে সংস্থাটির ধারণা এই সংখ্যা অনেক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৩
আরএইচ