ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মস্কোয় হামলার সময় শতাধিক প্রাণ বাঁচাল যে মুসলিম কিশোর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
মস্কোয় হামলার সময় শতাধিক প্রাণ বাঁচাল যে মুসলিম কিশোর ইসলাম খলিলভ

মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলের কনসার্ট ভেন্যুতে শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক লোককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে এক কিশোর রীতিমতো নায়ক বনে গেছে। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরের নাম ইসলাম খলিলভ।

 

কিশোরটি ক্রোকাসের একটি ক্লোকরুমে পার্ট-টাইম চাকরি করে। ভিডিও সংস্থা রুপ্টলির কাছে বিভীষিকাময় সেই সন্ধ্যার বর্ণনা দেয় সে।

কনসার্ট ভেন্যুটির অবস্থান মস্কোর ঠিক বাইরে। রাশিয়ান রক ব্যান্ড পিকনিকের পরিবেশনার আগে সেটি দর্শনার্থীদের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে যায়। আর তখনই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের একটি দল ভবনটিতে ঢুকে পড়ে।  

তারা পালাতে থাকা দর্শনার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। এরপর কনসার্ট হলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, হামলায় অন্তত ১৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং প্রায় ১৮০ জন আহত হন।

খলিলভ ভিডিও সংস্থাটিকে বলে, সেখানে উপস্থিত লোকজন এস্কেলেটর থেকে, সিঁড়ি থেকে যখন দৌড় শুরু করে, তখন সে বুঝতে পারে, জরুরি কিছু ঘটছে। তখন সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজে লেগে পড়ে। ক্রোকাস সিটি কমপ্লেক্সে আরেকটি ভবনের দিকে দর্শনার্থীদের দ্রুত সরিয়ে নিতে সেখানকার পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান কিশোরটি কাজে লাগায়।

সে বলে, আমি পুরো হলজুড়ে চিৎকার শুরু করি। উপস্থিতদের বলতে থাকি, গোলাগুলি হচ্ছে। সবাই এক্সপোর দিকে দৌড়ান। আমি তাদের দেখাচ্ছিলাম কোন দিকে যেতে হবে। সবাইকে সাহায্য করছিলাম।  

সেখানে পদদলিত হওয়ার একটি ঘটনা ঘটে। সবাই প্রথমে হতবাক হয়ে যান। কেউ জানতেন না কোনদিকে যেতে হবে, কোথায় যেতে হবে।  

খলিলভ জানায়, তার সঙ্গে থাকা দর্শনার্থীদের কেউ যাতে পেছনে পড়ে না যান, সেজন্য সে সবার পেছনে দৌড়াচ্ছিল। কিশোরটি স্বীকার করেছে, সে সত্যিই ভীত ছিল। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে লোকেদের কীভাবে সরিয়ে নিতে হবে, আগে পাওয়া সেই নির্দেশনার সঠিক ব্যবহার সে করতে পেরেছিল।  

রুপ্টলিকে সে বলে, এক পর্যায়ে এক সন্ত্রাসীকে দেখে ফেলে। কিশোরটি বলে, দাঁড়িওয়ালা সবুজ পোশাকের একজনকে আমি দেখতে পাই। তিনি রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।  

হামলাকারীদের একজনের হাতে এক দর্শনার্থীকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যেতে দেখে খলিলভ। এই দৃশ্য সে ভুলতে পারে না। ১৫ বছর বয়সী এ কিশোর নিজেকে নায়ক মনে করে না। তার ভাষ্য, সে শুধু নিজের কাজটিই করেছিল।

কী তাকে ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল, সেই সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার যুক্তি, একশত লোকের মৃত্যুর চেয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দেওয়া ভালো।

খলিলভের এই বীরত্ব রাশিয়ার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচার হয়। এরপর তার প্রিয় ফুটবল ক্লাব এফসি স্পার্টাক মস্কো তাকে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানায়। ক্লাবের ম্যাচের ফ্রি পাসও তাকে দেওয়া হয়।  

জনপ্রিয় রাশিয়ান র‍্যাপ আর্টিস্ট মরগেনস্টার্ন বলেছেন, তিনি ১০ লাখ রুবল (১১ হাজার ডলার) কিশোর খলিলভকে দিয়েছেন। সেও মিডিয়াকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।  

রাশিয়ার মুসলিমদের নেতা মুফতি রাভিল গাইনুদ্দিন ঘোষণা দিয়েছেন, সাহসিকতার জন্য খলিলভ একটি মেডেল পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।