ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বেহেশত পেতে আত্মঘাতী হওয়ার স্বপ্ন

নুসরাত জাহান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১০
বেহেশত পেতে আত্মঘাতী হওয়ার স্বপ্ন

বিবিসি অনলাইন: ‘ফিদায়েন (আত্মঘাতী হামলাকারী) হলে বেহেস্তে যাওয়া যায়। কেয়ামতের দিন যদি জানতে চাওয়া হয় পৃথিবীতে কি করেছ, আর উত্তরের যদি বলা হয় কিছুই না, তাহলে দোজখে যেতে হবে।



এভাবেই মগজ ধোলাই করা হয় আব্দুস সালামের। তাকে এটা বিশ্বাস করানো হয়েছে যে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। আর পুরস্কার হিসেবে রয়েছে বেহেস্ত।

তাই মুসলিম জঙ্গিরা সালামকে বলে আত্মঘাতী হামলাকারী হতে হবে।

জঙ্গিদের কথা বিশ্বাসও করেন সামাল। একজন সফল আত্মঘাতী হামলাকারী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও নেয়।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়েছে। তার চেতন ফিরেছে।

সালামের বয়স ১৪। অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসে সেঘটনার বর্ণনা দিয়েছে বিবিসি’র সাংবাদিক সায়েদ শোয়েব হাসানের কাছে।

সালাম বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই। আমার বড় ভাই বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করে। আমার বাবার নির্মাণ-যন্ত্র ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা আছে। আমার পরিবার গত ৩০ বছর থেকে করাচির শোহরাব গোতে বসবাস করছেন। ’

‘আমি আগে স্থানীয় একটি দোকানে জাহিরের সঙ্গে কাজ করতাম। তখন আমরা জিহাদ, ফিদায়েন (আত্মঘাতী হামলা) ও এমন আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলাপ করতাম। ’

‘জহিরের সঙ্গে আমার তিন বছরের পরিচয় এবং একদিন সে ফিদায়েন হতে যাচ্ছে বলে আমাকে জানায়। ’

কেন সে তা হয়ে চায় এর উত্তরে সে বলে, ‘ফিদায়েন হলে আমি অন্তত বেহেস্তে যেতে পারবো। কেননা কেয়ামতের দিন যদি আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে আমি কি করেছি এবং উত্তরের যদি আমি বলে কিছুই না, তাহলে আমাকে দোজখে যেতে হবে। ’

‘এসময় জহিরের সঙ্গে যেতে চাইলে সে আমাকে শের রহমানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ’

‘তবে আমি আফগানিস্তান যেতে চাইলেও তারা ওয়াজিরিস্তানের কথা বলে। আর যেকোনো জায়গা থেকে হামলা করলেই বেহেশতে যাওয়া যায় বলে তারা আমাকে আশ্বস্থ করে। ’

‘তবে আমাদের এ আলোচনা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশ দেয় শের। আর বললে আমার মাথা কেটে নেওয়ার হুমকি দেয় শের। তখন আতঙ্কে আমার জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা। ’

সালাম বলেন, এর কিছুদিন পর শের আমাকে জাইনুল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি আমার কাছে ফেদায়েন হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আমি বলি, ‘এমনকি হামলার জন্য মাঝরাতে ডেকে আনা হলেও আমি তা করবো। আমি ফেদায়েন হতে ও বেহেস্তে যেতে চাই। খুব কমই মানুষই বেহেস্ত যাওয়ার সুযোগ পায়। ফেদায়েন হতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ’

আফগানিস্তানে লড়াই করে ফিরে এসে জহির আমাকে বলে, ‘ফেদায়েনদের জ্যাকেট পরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তুমি দেখতে পাবে যে তোমার সামনে বেহেস্তের দরজা খুলে যাচ্ছে। তুমি তখন বেহেস্তে প্রবেশ করবে এবং পেছনে যারা বোমার আঘাতে উড়ে যাচ্ছে তাদের নিয়ে কিছুই উপলব্দি করবেনা। ’

‘এসময় থেকে আমি প্রতিটি মুহূর্ত ফেদায়েন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। যখন আমার শিক্ষক আমাকে পড়াতে আসতেন, যখন আমি কাজ করতাম- প্রতিটি সময় আমি ফেদায়েন হওয়ার এবং বেহেস্তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। ’

দিনের ২৪ ঘণ্টা আমি শুধু চিন্তা করতাম, ‘বেহেস্ত, ফেদায়েন, ফেদায়েন, বেহেস্ত। ’

‘আমার বাবার ডায়াবেটিক আছে। এটা শোনার পর থেকে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। আর এখন তিনি রাতে ঘুমাতে পারেননা। ’

‘কিন্তু আল্লাহ আমাকে এখন নতুন জীবন দিয়েছেন। আমি এখন পড়াশোনায় মনোযোগী এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৭৫৭ ঘন্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।