ভারতীয় পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশন সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট চলার কথা।
বিরোধীরা এদিন প্রথম থেকেই পার্লামেন্টে হইচই শুরু করেন একাধিক বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানার জন্য এবং তা নিয়ে আলোচনার জন্য। এমন পরিস্থিতিতেই মুলতবি করে দেওয়া হয় অধিবেশন।
প্রথম দিনের অধিবেশনে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীরা। মণিপুর পরিস্থিতি, ওয়াকফ বিল ও আদানি ইস্যুতে ক্ষোভ ঝাড়েন সদস্যরা।
অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। সেখানে তিনি সরাসরি কংগ্রেসকে নিশানা করেন। বিরোধী এমপিদের নিয়ে তার মন্তব্য, পার্লামেন্ট যাতে চলতে না পারে, তার জন্য তারা অধিবেশনের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করেন। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা যায় না।
ঝাড়খণ্ডে বিজেপি শেষ পর্যন্ত সরকার গড়তে না পারলেও মহারাষ্ট্রে তারা বিরোধীদের কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে হরিয়ানাতেও সরকার গড়েছে বিজেপি।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় শক্তি বাড়িয়ে এবারের লোকসভা অধিবেশনে বিজেপি অনেক বেশি সরব থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দিনের ভাষণেও তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অশান্ত মণিপুর। সম্প্রতি নতুন করে গোলমাল শুরু হয়েছে সেখানে। ওই রাজ্যে বিজেপির নেতৃত্বে বীরেন সিংয়ের সরকার চলছে।
লোকসভার আগের অধিবেশনেও বিরোধীরা বারবার মনিপুর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে। এ বছরের অধিবেশনের প্রথম দিনেই বিরোধীরা বুঝিয়ে দিয়েছে, চলতি অধিবেশনেও মণিপুর নিয়ে তারা সরব থাকবে।
শিল্পপতি গৌতম আদানি বর্তমান বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। এবিষয়ে সবচেয়ে বেশি সরব কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ আদানিকে অনৈতিকভাবে সাহায্য করেন বলে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি একটি মার্কিন রিপোর্টে আদানির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে ঘুষ এবং জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত আদানি। পার্লামেন্টে এই বিষয়েও বিরোধী এমপিরা সরব হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন পার্লামেন্ট শুরু হওয়ার আগে বিরোধী জোটের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে পার্লামেন্টের সূত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন। সরকারকে আদানি প্রসঙ্গে কোণঠাসা করার চেষ্টা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এবারের অধিবেশনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ হতে পারে পার্লামেন্টে। তার মধ্যে অন্যতম ওয়াকফ বিল। এ বিল আইন হলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ওয়াকফ সম্পত্তির ধারণা বদলে যাবে।
ভারতের প্রথম সারির মুসলিম সংগঠনগুলো গত কয়েকমাস ধরে এ নিয়ে সরব। তারা জানিয়ে দিয়েছে, কোনোভাবেই নতুন বিল তারা মেনে নেবে না। পার্লামেন্টে ওয়াকফ বিল নিয়েও তীব্র বিতর্ক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পার্লামেন্টের বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, এবারের অধিবেশনে এক দেশ এক ভোটের বিলও প্রস্তাব আকারে পেশ হতে পারে। অর্থাৎ লোকসভা এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হওয়ার প্রস্তাব।
বিরোধীরা গোড়া থেকেই এই নীতির বিরোধিতা করছেন। বিলটি উত্থাপিত হলেও প্রবল বিতর্ক হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে শাসক গোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত এবারের অধিবেশনে বিলটি পেশ করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ডয়চে ভেলে বাংলা অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
আরএইচ