ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা

শারমিনা ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১০
বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা

শ্রীলঙ্কা:  সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তামিল টাইগারদের দীর্ঘ দিনের যুদ্ধের অবসান হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন নির্বাসিত অনেকে।

হাজারো প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবার ঘরমুখো হতে চাইছেন দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমরা। তারা স্বপ্ন দেখছেন নতুন করে বাঁচার।

২০ বছরের বিদ্রোহের পর দীর্ঘ সময় নির্বাসনে থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আগের পেশায় ফিরতে চান  কেউ কেউ।

এদের মধ্যে একজন শাহ্জাহান একজন নৌকা মেরামতকারী। তিনি তার ২০ বছর আগের দোকান ঠিক করে আবার নৌকা মেরামতের কাজ করবেন বলে জানান।

শাহ্জাহান বলেন, ১৯৯০ সালের মুসলিম তামিলদের যুদ্ধ ছিল ২০০৪ সালের সুনামির সঙ্গে করা যুদ্ধের মতোই কঠিন।

শাহজাহান ২০ বছর সৌদী আবর কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ঐ সময়ে শ্রীলঙ্কার  দণিাঞ্চলে তার জন্য কোনো কাজ ছিল না। বাধ্য হয়ে তিনি এই দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান করেন।

১৯৯০ সালে তামিল টাইগাররা প্রায় এক লাখ মুসলিমকে উত্তর শ্রীলঙ্কা ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। তাদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার অভিযোগ করে তামির বিদ্রোহীরা।

তামিলরা মুসলিমদের ২০ টি মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়। তারা স্কুল আর বাড়িও ধ্বংশ করতে ছাড়েনি।

মারুফ মাশফি শরিফের বাড়িটিও বিদ্রোহীরা জ্বালিয়ে দিয়েছিল। মারুফ যখন তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যান তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।

মারুফ তার বাড়ির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ২০ বছর পর ফিরে এসে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি দেখে, কতটা কষ্ট পেয়েছেন, বলে বোঝাতে পারবেন না ।

মারুফ এবং তার ভাই দেশের দণিাঞ্চলে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে হার্ডওয়ারের ব্যবসা করতেন। তারা ভালোভাবেই জীবন কাটাচ্ছিলেন। তবে সব সময় তিনি চাইতেন উত্তরাঞ্চলে ফিরে আসতে।

মারুফ বলেন, ‘এখানে মানুষ ফিরে আসছে, এই অঞ্চলের এখন অনেক উন্নয়ন হবে। আমি ভাবছি একটি ব্যবসা করব। বিশেষ করে হার্ডওয়ার ব্যবসা। কারণ সেখানে অনেক নির্মান কাজ হবে’।

দীর্ঘ দিন অন্য জায়গায় থাকার পর মানুষকে এই অঞ্চলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে এই ফিরে আশা এখনো স্বেচ্ছা প্রবৃত্ত। সুশৃঙ্খল নয়।

এখনো উত্তরাঞ্চলে ফিরে আসতে সরকারের অনুমতি এবং রেশনের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

ফিরে আসাকে  চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে রহিম বলেন, ‘এটি একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। যারা ফিরে আসছেন তারা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন’।

সিথি ফাতেমা (৬৯) বলেন , তিনি তার ছেলে ইয়াসিন এবং নাতিদের নিয়ে অস্থায়ী বাড়িতে থাকেন। তার বাড়ির নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। কেউ হাত দিলেই ঘর ভেঙ্গে পড়বে। বাড়ির চার পাশে সাপ, হাতির মতো হিংস্র প্রাণী ঘুরে বেড়ায়।    

দীর্ঘ দিন পর ফিরে আসা মুসলিমদের তামিলরা ভাইয়ের মতো স্বাগত জানিয়ে বুকে টেনে নিবেন এটাই প্রত্যাশা।  

এখানে কোনো তিক্ততা নেই।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯ ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।