ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জেলে ভরার সংস্কৃতি

ভয়াবহ সামাজিক সঙ্কটের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৪
ভয়াবহ সামাজিক সঙ্কটের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে বন্দির হার বিশ্বে সর্বাধিক। কারণে অকারণে দেশটির আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জেলে ভরার এই সংস্কৃতি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ সামাজিক সঙ্কটের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।



আইন প্রযোগের ক্ষেত্রে দেশটির আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর বৈষম্যই এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিজনেস ইনসাইডারে বৃহস্পতিবার ‘আমেরিকা ইজ ফেসিং ইটস গ্রেটেস্ট সোস্যাল ক্রাইসিস ইন মডার্ন হিস্টোরি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর কুফল তুলে ধরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এই ব্যাপক কারা প্রেরণ।

এই মুহূর্তে প্রায় ২৪ লাখ আমেরিকান দেশটির কয়েক হাজার কারাগারে বন্দি রয়েছ। যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রিজন পলিসি ইনিটিয়েটিভ’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এই হার পৃথিবীর যে কোনো দেশের থেকে অনেক গুণ বেশি। এমনকি অনেক স্বৈরশাসক কবলিত দেশের থেকেও এই হার অনেক বেশি।

নিউইয়র্কের কারাবন্দির হার আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশ রুয়ান্ডার থেকেও বেশি। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়া সহ আরও কয়েকটি রাজ্যের কারাবন্দির হার কিউবা কিংবা রাশিয়ার থেকেও বেশি।

বিষয়টি আমেরিকার ত্রুটিপূর্ণ বিচার ব্যবস্থারই ইঙ্গিত দেয় বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

কৃষ্ণাঙ্গ এবং অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসররাই যুক্তরাষ্ট্রের এই ত্রুটিপূর্ণ বিচার ব্যবস্থার শিকার হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দাস প্রথার আমলের থেকেও বর্তমানে পরিস্থিতি খারাপ বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন ৬০ লাখ মানুষ সরকারের ‘কারেকশনাল সুপারভিশন’ এর নজরদারির আওতায় রয়েছে, যা স্টালিনের সময়কার কুখ্যাত গুলাগ প্রথার থেকেও বেশি।

দেশটির বর্তমান সমাজব্যবস্থাও একজন সাবেক কারাবন্দির জন্য অনুকূল নয়। যুক্তরাষ্ট্রে জেলখাটা একজন ব্যক্তির পক্ষে পরবর্তীতে চাকরি পাওয়া কিংবা অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভও অনেক কঠিন।

শিকাগোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে এমনকি ৫০ বছর আগে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে পাস হওয়া ‘সিভিল রাইটস অ্যাক্ট’ এর সময়ও বর্তমানের থেকে ভালো ছিলো।

গবেষণায় দেখা গেছে, গায়ের রংয়ের সঙ্গে অপরাধ প্রবণতার সম্পর্ক নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে কালো ও হিস্পানিক বংশোদ্ভূতরাই পুলিশি তৎপরতার শিকার হন বেশি।

২০১১ সালে নিউইয়র্ক পুলিশ ৭ লাখ ‘স্টপ অ্যান্ড ফ্রিস্ক’ তল্লাশি অভিযান চালায়। এর ৮৫ শতাংশই কালো বা হিস্পানিকদের বিরুদ্ধে। যদিও তারা নগরীর জনসংখ্যার অর্ধেক।

একইভাবে মাদক সংক্রান্ত অপরাধগুলোর ক্ষেত্রেও এই বৈষম্য প্রকট। কালো ও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে মারিজুয়ানা গ্রহণের হার প্রায় সমান। কিন্তু এই অভিযোগে কালোরা শ্বেতাঙ্গদের থেকে ৩.৭ গুন বেশি গ্রেফতার হচ্ছে। পেনসিলভানিয়া,ইলিনয় ও অন্যান্য আরও কয়েকটি রাজ্যে এই হার ৫ গুণেরও বেশি।

আর এর সব কিছু্ট প্রভাব ফেলছে আমেরিকার সামাজিক জীবনে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক অধিকার কর্মী এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি অনেকটা বাতাসের মত, আপনি চোখে দেখবেন না, কিন্তু এর প্রভাব ঠিকই বুঝবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।