ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আলজেরীয় প্লেন বিধ্বস্ত

ঘটনাস্থলে ফরাসি সেনা ইউনিট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৪
ঘটনাস্থলে ফরাসি সেনা ইউনিট

ঢাকা: ১১৬ জন আরোহী নিয়ে মালির উত্তরাঞ্চলে ‘বিধ্বস্ত’ হওয়া আলজেরীয় উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে ঘটনাস্থলে সামরিক ইউনিট পাঠিয়েছে ফ্রান্স।

বৃহস্পতিবার পশ্চিম মধ্য আফ্রিকার দেশ বুর্কিনাফাসোর রাজধানী ওয়াগাদৌগৌ থেকে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের অভিমুখে উড্ডয়নের ৫০ মিনিট পর থেকে নিখোঁজ হয় এয়ার আলজেরির এএইচ৫০১৭ উড়োজাহাজটি।

ঘণ্টা কয়েক পর নিশ্চিত করা হয় উড়োজাহাজটি মালির উত্তরাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, আলজেরিয়ার ৫০ কিলোমিটার দূরে মালি সীমান্তে দায়িত্বরত ফরাসি সেনা ঘাঁটি থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম চালাবে ইউনিটটি।

উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ।

তার কার্যালয় থেকে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঘটনাস্থল সংরক্ষণে এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে একটি সামরিক ইউনিট পাঠানো হয়েছে। ’

উড়োজাহাজটি ভেঙে গেছে বলা হলেও বিবৃতি এ বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট করা হয়নি।

বুর্কিনাফাসো সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবারই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল গিলবার্ট দিয়েন্দেরে বলেন,  এই মুহূর্তে আমাদের কাছে যাত্রীদের অবস্থার বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই, তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দেহাবশেষ খুঁজে বের করার।

জেনারেল দিয়েন্দেরে বলেন, সীমান্ত অতিক্রম করে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে একমত হয়েছে মালি। এর আগে, দেশটির গোসি শহরের একজন বাসিন্দা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি উড়োজাহাজকে বিধ্বস্ত হতে পড়ে যেতে দেখেন বলে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে জানান।

বুর্কিনাফাসো সেনাবাহিনীর এই মুখপাত্র আরও বলেন, স্থানীয়রা মৃতদেহ ও উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ একেবারে পুড়ে ছাই ও চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থায় পেয়েছে।

মালির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম নিশ্চিত করে, উড়োজাহাজটি গোসি শহরের কাছে বৌলিকেসি গ্রামে বিধ্বস্ত হয়।

ফরাসি যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি জাতিসংঘের হেলিকপ্টারগুলোও মালির গাও এবং তেসালিত প্রদেশের মধ্যবর্তী দুর্গম মরুভূমিতে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বৃহস্পতিবার দুপুরে জানায়, এএইচ৫০১৭ নং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পৌনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর থেকে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারায়।

এয়ার আলজেরির উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আলজেরি প্রেস সার্ভিস (এপিএস) জানায়, বৃহস্পতিবার ওয়াগাদৌগৌ থেকে আলজিয়ার্সগামী উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের ৫০ মিনিট পর থেকে বিমান পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এটির সবরকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

উড়োজাহাজটির সঙ্গে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সময় বুধবার দিনগত রাত ০১টা ৫৫ মিনিটে সর্বশেষ যোগাযোগ করা হয় এবং আন্তর্জাতিক সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে এটির অবতরণ করার কথা ছিল।

এয়ার আলজেরি প্রতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে চার ঘণ্টা দূরত্বের ওয়াগাদৌগৌ-আলজিয়ার্স রুটে। এএইচ৫০১৭ নিখোঁজ হওয়ার পর এর ভাগ্য অনুসন্ধানে জরুরি কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

উড়োজাহাজটির মালিক স্প্যানিশ এয়ারলাইন সুইফটএয়ার নিশ্চিত করে, পর্তুগিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা ডিসি-৯ উড়োজাহাজটিতে ১১০ যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। এদের মধ্যে ফ্রান্সের নাগরিকই ছিলেন ৫১ জন। এছাড়া, বুর্কিনফাসোর নাগরিক ছিলেন ২৭ জন, লেবানিজ ৮ জন, আলজেরিয়ান ৬ জন, কানাডিয়ান ৫ জন, জার্মান ৪ জন, লুক্সেমবার্গের দুই জন এবং একজন করে ছিলেন সুইস, বেলজিয়ান, মিশরীয়, ইউক্রেনিয়ান, নাইজেরিয়ান, ক্যামেরুনিয়ান ও মালিয়ান। আর ছয় ক্রু’ই ছিলেন স্প্যানিশ নাগরিক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আলজিয়ার্স-বামাকো রুটে চলাচলকারী বিপরীত দিক থেকে আসা একটি উড়োজাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি এড়াতে এএইচ৫০১৭ এর পাইলটকে নির্দেশনা দেওয়ার সময় উড়োজাহাজটির গন্তব্য আলজেরিয়া সীমান্তের খুব বেশি দূরে ছিল না। অর্থাৎ রুট পরিবর্তন করার পরই উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যায়।

অবশ্য আলজেরিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী দাবি করেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেই উড়োজাহাজটির পাইলটকে কন্ট্রোল রুম থেকে রুট পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছিল।

আপাতদৃষ্টে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলা হলেও ‘অন্য’ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষত উড়োজাহাজটিতে ৫১ জন ফরাসি নাগরিক ছিলেন বলে ‘অন্য কোনো সম্ভাবনা’ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মালিতে আল কায়েদা-সংশ্লিষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সরকারি বাহিনীর ‍বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাজধানী বামাকো অভিমুখে এগিয়ে যেতে চাইলে তাদের প্রতিহত করতে সেনা পাঠায় ফ্রান্স। এরপর জুলাইয়ে পুরো দেশটিতে সেনা মোতায়েন করে ইউরোপীয় পরাশক্তি দেশটি। এখন পর্যন্ত বেশ ক‘টি ঘাঁটি স্থাপন করে মালির সরকারি বাহিনীকে সহযোগিতা করে আসছে ফরাসি সেনাবাহিনী।

মূলত এই সূত্র ধরেই অন্য শঙ্কার কথা ব্যক্ত করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৪

** ১১৬ যাত্রীবাহী আলজেরীয় প্লেন মালিতে ‘বিধ্বস্ত’
** আট দিনে তিনটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা!
** আলজেরীয় প্লেনটিকেও ভূপাতিত করা হয়েছে!
** ১১৬ যাত্রীবাহী আলজেরিয়ান উড়োজাহাজ ‘নিখোঁজ’
** প্লেনযাত্রীদের পরিচয় মিলেছে, ৫১ জনই ফরাসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।