ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

৩০ দিনের জন্য নওয়াজের পদত্যাগের দাবি ইমরানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৪
৩০ দিনের জন্য নওয়াজের পদত্যাগের দাবি ইমরানের ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ৩০ দিনের জন্য হলেও পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছেন সরকারবিরোধী আন্দোলনরত তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান।

শনিবার দেশটির জাতীয় সংসদের বাইরে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে তিনি এ দাবি জানান।



সাবেক ক্রিকেটার ইমরান বলেন, বিচার বিভাগীয় কমিশনের তদন্তের স্বার্থে নওয়াজকে ৩০ দিনের জন্য হলেও পদত্যাগ করতে হবে, এর মধ্যেই তদন্ত শেষ হয়ে যেতে পারে।

ইমরান আশ্বাস দিয়ে বলেন, যদি নওয়াজ সত্যিকার অর্থেই নির্বাচনে জিতেছেন বলে তদন্ত কমিশন ঘোষণা দেয়, তবে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব নেবেন।

চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নওয়াজের সঙ্গে শনিবারই বৈঠক করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও অন্যতম বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি।

বৈঠকে নওয়াজ সরকারকে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জারদারি।

এই বৈঠকের প্রতি ইঙ্গিত করে ইমরান বলেন, সময়ই বলে দেবে তারা (নওয়াজ ও জারদারি) গণতন্ত্র বাঁচাতে কাজ করেছেন, নাকি আমি!

তিনি বলেন, নওয়াজের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত আমি এ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবো, এমনকি তিনি যদি সিদ্ধান্তটি নিতে পুরো বছরও কাটান।

চলমান অচলাবস্থা নিরসনে তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসেও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি পিটিআই ও সরকারপক্ষ। পিটিআই নওয়াজের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে। অপরদিকে, সরকারের তরফে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় পরিষদ (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) থেকে পদত্যাগ করেন ইমরানসহ পিটিআই’র ৩৪ সদস্য।

স্পিকার আইয়াজ সাদিকের অনুপস্থিতিতে শুক্রবার সংসদ সচিবের কাছে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন।

সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্তও ইসলামাবাদের রেড জোনে (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা) অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিল পিটিআই ও আওয়ামী তেহরিক (পিএটি)।

দেড় সপ্তাহব্যাপী এ অবস্থান কর্মসূচির প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তানে সংবিধানবহির্ভূত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য যে চাপ দেওয়া হচ্ছে তার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র।

এরপর শুক্রবারও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, কোনো সংবিধানবহির্ভূত পরিবর্তনেও বিশ্বাসী নয় ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করে পিটিআই প্রধান ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিবৃতির মাধ্যমে সবকিছুতে তাদের নাক গলানোর ব্যাপারটিই স্পষ্ট হলো।

কূটনীতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখারও আহ্বান জানান ইমরান।

আগাম নির্বাচন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিসহ বিক্ষোভকারীদের ৬টি দাবির মধ্যে প্রথম দাবিই হলো প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার ভাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পদত্যাগ।

নওয়াজের পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান সংসদের উভয়কক্ষে
পিটিআই ও পিএটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের পদত্যাগ দাবি করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান সংসদের নিম্নকক্ষ (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) ও উচ্চকক্ষ (সিনেট)।

প্রথমে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আলোচনার পর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস হয় এবং সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর শুক্রবারও এ সংক্রান্ত আলোচনার পর সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস হয় এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।

ইমরান-ক্বাদরির ওপর অসন্তুষ্ট অন্য বিরোধী দলগুলো
গত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নওয়াজ শরিফ সরকারের পদত্যাগ দাবি করে নতুন নির্বাচন চেয়ে ইমরান-ক্বাদরিরা আন্দোলনে নামলেও তাদের এ দাবিতে সংহতি নেই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের। এমনকি ইমরান-ক্বাদরিরা অন্য বিরোধী দলগুলোকে রাজপথে নামার আহ্বান জানালেও তারা উল্টো ইমরান-ক্বাদরিদেরই আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন।

বিরোধী দলগুলো চাইছে না, ইমরান-ক্বাদরির এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কোনো অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা অস্পষ্ট
স্থানীয় সংব‍াদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পিএটি ও পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ ইসলামাবাদের রেড জোন অভিমুখে রওয়ানা দিলে ওই এলাকার সুরক্ষায় ৭শ’ সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।

সেনাবাহিনীও বিক্ষোভকারীদের সংসদ, সরকারি ভবন ও রেড জোটে অস্থিরতা সৃষ্টির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

কিন্তু এ সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালেই গত বুধবার ভোরে রেড জোনে প্রবেশ করে সংসদ ভবনের বাইরে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় বিক্ষোভকারীদের কোনো রকমের বাধা দিতে দেখা যায়নি সেনা সদস্যদের।

পাকিস্তানের ইতিহাসের দুই তৃতীয়াংশ সময়ই সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে গেছে বলে ইমরান-ক্বাদরিদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদজুড়ে অজানা শঙ্কা ডানা মেলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।