ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এমএইচ৩৭০

নিখোঁজের দুই বছর পরও অন্ধকারেই রহস্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৬
নিখোঁজের দুই বছর পরও অন্ধকারেই রহস্য ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: এমএইচ৩৭০। বেসামরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রহস্য হয়ে রয়েছে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এই ফ্লাইট।

সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকার ও অনুসন্ধানকারী দলগুলোর সক্ষমতায়ও বড় ধরনের একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন এর নিখোঁজ রহস্য।

২০১৪ সালের ৮ মার্চ ২৩৯ আরোহী নিয়ে চীনের বেইজিংয়ের উদ্দেশে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে উড়াল দেয় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের প্লেন এমএইচ৩৭০। কিন্তু উড্ডয়নের এক ঘণ্টারও কম সময় পর দক্ষিণ চীন সাগরের উপর থাকাকালে রাডার থেকে হারিয়ে যায় প্লেনটি।

নিখোঁজ হওয়ার পরপরই প্লেনটির সন্ধানে মালয়েশিয়া ও চীনকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে বহুজাতিক অনুসন্ধান শুরু হয়। ১৩০ মিলিয়ন ডলার (৭৮ টাকায় ডলার হিসাবে ১ হাজার ১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা) ব্যয়ে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে ১ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তন্নতন্ন করে অনুসন্ধানও চালিয়েছে এ দল। কিন্তু নিখোঁজের পর দুই বছর কেটে গেলেও, নিখোঁজ আরোহীদের পথ চেয়ে থাকা স্বজনদের দৃষ্টি শুকিয়ে এলেও কোনো হদিস মেলেনি প্লেনটির বা এর আরোহীদের।

মাঝেমধ্যে আশার আলো জাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় এমএইচ৩৭০ এর ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মেলার খবর সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে পরিণত হয়। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বেশিরভাগই অন্য কোনো প্লেনের অংশ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে গত বছর জুন মাসে ফ্রান্সের লা রিউনিয়ন দ্বীপে সন্ধান মেলা একটি বোয়িং-৭৭৭ সিরিজের প্লেনের ডানার অংশ কিছুটা আশার সঞ্চার করে। পরীক্ষায় তা এমএইচ-৩৭০ এর বলে প্রমাণিতও হয়। এরপর আবার সব অন্ধকার।

গত সপ্তাহে মোজাম্বিকে এক মিটাল লম্বা একটি অংশ পাওয়া গেছে। এটিও কোনো বোয়িং-৭৭৭ সিরিজের বলে মনে করা হচ্ছে। ধ্বংসাবশেষটি এমএইচ৩৭০ এর কি না, তা নিশ্চিত হতে এখন মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ দল অবস্থান করছেন আফ্রিকার ওই দেশটিতে।

এমএইচ৩৭০ এর পরিণতি কি হয়েছিল, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্বও দাঁড়িয়েছে গত দুই বছরে। কেউ বলছেন, প্লেনটি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে। কারোর দাবি, প্লেনের দুর্বৃত্ত পাইলট এটিকে বিধ্বস্ত করিয়েছেন। আবার কেউ মনে করেন, মধ্য আকাশে হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটিতে এটি বিধ্বস্ত হয়ে সাগর গর্ভে হারিয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার আরো একটু আগ বাড়িয়ে দাবি করেন, ভীনগ্রহবাসী এলিয়েনরা প্লেনটিকে চুরি করে নিয়ে গেছে।

কোনো তত্ত্বের পক্ষেই এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে ফ্রান্সের লা রিউনিয়ন দ্বীপে পাওয়া ধ্বংসাবেশষটি এমএইচ৩৭০ এর বলে প্রমাণিত হওয়ায় এটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে এখন মোটামুটি নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা।

এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দিন যত যাচ্ছে, প্লেনটির খুঁজে পাওয়ার আশা ততই ফিকে হয়ে আসছে বিশ্ববাসীর কাছে। তবে এখনো আশাবাদী মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।

এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেছেন, এমএইচ৩৭০ এর সন্ধান পাওয়ার ব্যাপারে তিনি এখনও আশাবাদী।

তবে নির্ধারিত এলাকায় কোনো হদিস না মিললে চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে মালয়েশিয়া, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে।

অবশ্য সমালোচকরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধান বন্ধই করা হবে। এক্ষেত্রে তাদের দাবি, এমএইচ৩৭০ কে ঘিরে রহস্য অন্ধকারে রাখতেই মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ও মালয়েশিয়ার সরকার এমনটা করার উদ্যোগ নেবে।

তবে এয়ারলাইন্স ও মালয়েশিয়ার সরকার বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

এদিকে, এমএইচ৩৭০ এর নিখোঁজের প্রাক্কালে গত সোমবার (০৭ মার্চ) বেইজিংয়ে নিখোঁজ ১২ চীনা যাত্রীর স্বজনরা একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ঝ্যাং কিহুআই বলেছেন, প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ ও এর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের জন্যই এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনুসন্ধান করা হবে।

নিখোঁজ অন্য ৩২ যাত্রীর স্বজনরা মালয়েশিয়ায় অপর একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই সঙ্গে নিউইয়র্কেও ৪৩ জন যাত্রীর স্বজনরা মামলা করেছেন। এছাড়া বিশ্বজুড়ে এ ব্যাপারে আরো কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে।

আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, একটি প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার পর দুই বছর অতিবাহিত হলে হতভাগ্য যাত্রীদের স্বজনরা আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৬
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।