ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেই সর্বনাশের সূচনা!

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেই সর্বনাশের সূচনা! ডোনাল্ড ট্রাম্প

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলে প্রার্থিতার দৌড়ে বেশ মজবুত অবস্থানে আছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি অনেকে এরই মধ্যে তাকে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবেও দেখতে শুরু করেছেন।

আবার অনেকেই নানা মন্তব্য ও কট্টর অবস্থানের জন্য সমালোচিত এই নেতাকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনাশের সূচনা ঘটবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রথম সমালোচিত হন ট্রাম্প। এরপর গত নভেম্বরে ক্যালিফর্নিয়ায় মুসলিম দম্পতির নির্বিচারে গুলির ঘটনায় মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্য করেন তিনি। এতে তার সমালোচনা নতুন মাত্রা পায়। বিশ্ব নেতারাও জড়িয়ে পড়েন এতে। এসবের সঙ্গে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী প্রবেশ করছে মন্তব্য করে দেশটির সঙ্গে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের দাবি তুলে তিনি নতুন করে সমালোচিত হন। এবার স্বয়ং পোপ তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রার্থিতার দৌড়ে একের পর এক উৎরে গেলেও সমালোচনা তার পিছু ছাড়ছে না।

মেক্সিকোর বর্তমান ও সাবেক তিন শীর্ষস্থানীয় নেতা তো ট্রাম্পকে এরই মধ্যে ‘হিটলার’ খেতাব দিয়ে বসেছেন। আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমনভাবে তার প্রশংসা করেছেন যে, তা প্রশংসা কম নিন্দাই বেশি বলে মনে হয়েছে। তবে ইউরোপের ডানপন্থি রাজনীতিকরা ট্রাম্পের আন্তরিক প্রশংসাতেই মেতেছেন।

ওয়াশিংটনের ইতিহাসবিদ জেমস থারবার এ ব্যাপারে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতার দৌড়ে রয়েছেন, এমন কোনো মার্কিন নেতার ব্যাপারে বিশ্বনেতাদের এমন মন্তব্য নজিরবিহীন। সিরিয়া সংকট, মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব, স্প্যানিসভাষী দেশগুলোর সমালোচনা, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে উদ্ভট সব মন্তব্য ও সংস্কার প্রস্তাব করে তিনি এমন সমালোচনা কুড়াচ্ছেন। সত্যিকার অর্থেই তিনি জনবিচ্ছিন্ন।

মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো বলেছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য শুনলে মনে হয় বেনিতো মুসোলিনি আর হিটলার কথা বলছেন।

শুধু মেক্সিকোই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, ইসরায়েল ও সৌদি আরবেও ট্রাম্পের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে কানাডীয় জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান লিগার পরিচালিত দেশটিতে এক জরিপে দেখা গেছে, সেখানকার ৬৫ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের ব্যাপারে শঙ্কিত। তাদের মতে, তিনি যদি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন পান ও কোনোভাবে নভেম্বরের দ্বৈরথে উৎরে যান, তাহলে বিশ্ব এক বিভিষিকা দেখতে চলেছে।

মার্কিন ইতিহাসবিদ জেফ্রি টুলিস বলেছেন, ১৯৮০ সালে রোনাল্ড রিগ্যানও সমালোচিত হয়েছিলেন, যখন তিনি প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দ্বৈরথে নেমেছিলেন। কিন্তু সে সমালোচনা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচনার তুলনায় কিছুই না।

এবার জেনে নেওয়া যাক, রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে বিশ্বনেতাদের কার কি মনোভাব-

কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

গত ৬ মার্চ অভিবাসন নীতি সংস্কার ও শরণার্থী ইস্যুতে ট্রাম্পের সমালোচনা করে জাস্টিন ট্রুডো মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিবিএস-এর একটি প্রোগ্রামে বলেছেন, একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনই পৃথিবী থেকে হিংসা ও বিদ্বেষকে দূর করে দিতে পারে।

এর পরদিন সুর একটু নরম করে হাফিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি এখনই ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছি না। তাই বলে আমি তাকে সমর্থনও করছি না। অত্যন্ত নিবীড়ভাবে আমি যুক্তরাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি অবলোকন করছি।

জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর সিগমা গ্যাব্রিয়েল

অভিবাসী সংকটে ধুকতে থাকা ইউরোপী দেশগুলোর একটি জার্মানি। শরণার্থী ইস্যুতে ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গত ৬ মার্চ এক সাক্ষাৎকারে দেশটির ভাইস চ্যান্সেলর সিগমা গ্যাব্রিয়েলে বলেছেন, ট্রাম্প ও তার মতো কথা বলা ডানপন্থি নেতারা শুধু শান্তি ও সামাজিক সুসংহতির জন্যই হুমকি নন, তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও অন্তরায়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন

মুসলিমদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের ব্যাপারে ট্রাম্পের সমালোচনা করে গত ডিসেম্বরে ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, তার এ অর্থহীন মন্তব্য বিভক্তি সৃষ্টিকারী ও ভুল।

সে সময় ট্রাম্পকে নিজেদের দেশে নিষিদ্ধের ব্যাপারে ব্রিটিশ সংসদে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য দাবিও তুলেছিলেন। লক্ষাধিক ব্রিটিশ নাগরিক অনলাইনে এ ব্যাপারে একটি পিটিশনে স্বাক্ষরও করেছিলেন।

সৌদি যুবরাজ আলওয়ালীদ বিন তালাল বিন আব্দুলাজিজ আল-সৌদ

সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন সৌদি যুবরাজ বিন তালাল বিন আব্দুলাজিজ আল-সৌদ। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকেই সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্পের প্রতি।

গত জানুয়ারি মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি ও ট্রাম্প তো রীতিমত যুদ্ধেই নেমেছিলেন। সূচনাটা অবশ্য ঘটিয়েছিলেন ট্রাম্প। টুইটারে তিনি ফক্স নিউজের উপস্থাপিকা মেগিন কেলির পাশে দাঁড়ানো সৌদি যুবরাজের একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, এই সংবাদ চ্যানেলটিতে আলওয়ালীদ বিন তালাল বিন আব্দুলাজিজ আল-সৌদের মালিকানা রয়েছে। এরপরই তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ক্যালিফর্নিয়ায় মুসলিম দম্পতির নির্বিচারে গুলির ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের সাময়িক নিষিদ্ধের আহ্বানের পর ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও। তার এ প্রতিবাদে ক্ষেপে গিয়ে ট্রাম্প তার পরিকল্পিত ইসরায়েল সফর বাতিলেরই সিদ্ধান্ত নেন।

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়া

ইকুয়েডরের বামপন্থি প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়া অবশ্য ট্রাম্পকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাইছেন। এ ব্যাপারে দেশটির সংবাদপত্র ‘এল দিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের বক্তৃতাগুলো নির্বুদ্ধিতায় ঠাসা। তিনি এতটাই উগ্র ও মোটা মাথার যে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনাশের সূচনা ঘটবে। এটা অবশ্যই আমার জন্য আনন্দের হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

বেশিরভাগ বিশ্বনেতা ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর হলেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার প্রশংসায় মেতেছেন। তার মতে, ট্রাম্প অসামান্য ও প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সুচতুর বুদ্ধির পুতিন এ প্রশংসা করে ট্রাম্পকে খোঁচাই দিয়েছেন হয়তো। কারণ এখন পর্যন্ত তার মধ্যে অসামান্য কিছুই দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।