ঢাকা: সাত বছর আগে ২০০৯ সালে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের চকরাতা দিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন সৈনিক ধর্মবীর সিং। তার সঙ্গে ছিলেন আরও দুই সৈনিক।
রাস্তায় একটি ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গাড়ি উল্টে যায়। এই দুর্ঘটনার দুই সৈনিক বেঁচে ফিরলেও হদিস মিললো না ধর্মবীরের। পরে সংশ্লিষ্ট রেজিমেন্ট ৩৯ বছর বয়সী ধর্মবীরকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে। রাজস্থানের আলওয়ারে বসবাসরত তার পরিবারকে দেওয়া হয় পেনশন।
কিন্তু স্বামীর ‘মৃত্যু’ সংবাদ কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি মনোজ দেবী। স্বামীর কল্যাণ কামনায় তিনি নিয়মিত উপোস রাখতে শুরু করেন। বিশ্বাসও ধরে রাখেন, কোনো এক অলৌকিক শক্তির বলে ফিরে আসবেনই তার স্বামী।
তার এ বিশ্বাস বেঁচে রয় দেরাদুনের অর্ধশত কিলোমিটার দূরের শহর হরিদ্বারে।
দেরাদুনে দুর্ঘটনার পর স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় ধর্মবীরের। সেখান থেকে ঘুরতে ঘুরতে তিনি চলে যান হরিদ্বারে। সাত বছর ধরে সেখানে দিন কাটাতে থাকেন ভিক্ষা করে। গত সপ্তাহ পর্যন্তও হরিদ্বারের পথে পথেই ভিক্ষা করে কাটান ধর্মবীর।
সেদিন হঠাত্ একটি মোটরসাইকেল এসে ধাক্কা মারে তাকে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ধর্মবীর। তৎক্ষণা তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
তারপরের গল্পটা যেন চলচ্চিত্রকেও হার মানায়। চিকিত্সার পর জ্ঞান ফিরে পান ধর্মবীর। একে একে মনে পড়তে থাকে তার পুরনো সব স্মৃতি।
পরে সেই মোটরসাইকেল চালকই ধর্মবীরকে ৫০০ রুপি দেন বাড়ি ফেরার জন্য। হরিদ্বার থেকে ধর্মবীর দিল্লি পৌঁছান, সেখান থেকে পৌঁছান রাজস্থানের আওয়ারের কাছে তার ভিতেদা গ্রামে।
গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। এরপর কড়া নাড়েন বাড়ির দরজায়। তখন তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার কৈলাস যাদব ভাবছিলেন, নেশাগ্রস্ত কেউ হয়তো বিরক্ত করছে।
কিন্তু দরজা খুলে যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার পান কৈলাস যাদব। যে সন্তান প্রায় স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল, সে সন্তান যেন রাতের আকাশের চাঁদ হয়ে নামলো তার দোরের গোড়ায়।
পরিবারে ফিরে আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েন ধর্মবীর। দুই মেয়ে যে এতোদিনে এত্ত বড় হয়ে গিয়েছে, তাও যেন বিশ্বাস হয় না তার। সাত বছর আগে ছেড়ে যাওয়া দুই সন্তানের একজন এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে, অন্যজন পড়ে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
এইচএ/