ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জেনে নিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া

সজিব তৌহিদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
জেনে নিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: পুরো বিশ্বের মনোযোগ এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। বিশ্ববাসীর মতো তুমুল আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশিদের মধ্যেও।

হবেই না বা কেন? এই দেশটিই যে এখন পুরো বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে, আর সে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভবন হোয়াইট হাউসের ‘প্রভাব’ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অঙ্গনে।

আগামী ৮ নভেম্বর সেই বহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্টশাসিত গণতান্ত্রিক দেশটির নির্বাচনী প্রক্রিয়া যথেষ্ট সময় ও আনুষ্ঠানিকতাসাপেক্ষ ব্যাপার। অনেক নিয়ম-নীতি আর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রায় এক বছর ধরেই চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। আমরা কতটুকু জানি দেশটির নির্বাচনী পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে? সে বিষয়ই বাংলানিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

মেয়াদকাল ও শর্ত
দেশটির সংবিধানের ধারা-২ এর দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী চার বছর পরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে।

প্রথমত- প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে, দ্বিতীয়ত- ৩৫ বছর বয়সী হতে হবে এবং তৃতীয়ত-অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে।

অঙ্গরাজ্য ও প্রাথমিক নির্বাচন
দেশটিতে ৫০টি অঙ্গরাজ্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্য হলো আলাস্কা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন পেতে হয়। এজন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। এই নির্বাচনকে আমেরিকানদের ভাষায় বলা হয়-‘প্রাইমারি’। পযার্য়ক্রমে সব অঙ্গরাজ্যে প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হয়।

সেই প্রাইমারিতে বার্নি স্যান্ডার্সকে পেছনে ফেলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। অপরদিকে, টেড ক্রুজ ও জন ক্যাসিচকে হটিয়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইলেকটোরাল কলেজ
বাংলাদেশে যেমন মেম্বার অব পার্লামেন্ট বা এমপি কিংবা সংসদ সদস্য। সেদেশে তেমন ইলেকটোরাল কলেজ। এদেশে যেমন জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা-৩০০টি, সে দেশের ৫৩৮টি।

অর্থাৎ ইলেকটোরাল কলেজ হলো একটি পরিষদ। যারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। খোলাসা করে বললে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ নির্বাচিত করে ইলেকটোরাল কলেজকে, আর এই কলেজে যাদের আসন বেশি, তাদের দল থেকেই নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পেতে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়। ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে।

আইন সভা
বাংলাদেশের আইন সভার নাম ‘জাতীয় সংসদ’। যুক্তরাষ্ট্রের আইন সভার নাম ‘কংগ্রেস’। বাংলাদেশের সংসদ এককক্ষ বিশিষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। এক. উচ্চ কক্ষ, এর নাম সিনেট। সিনেটের সদস্যদের বলা হয় সিনেটর। কংগ্রেসে ১০০ জন সিনেটর থাকেন। দুই. নিম্নকক্ষ, এর নাম হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। এর সদস্য সংখ্যা ৪৩৫ জন। এর সদস্যদের বলা হয় কংগ্রেসম্যান।

বাংলাদেশের সংসদে বিল উত্থাপিত হওয়ার পর তা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেলে পাস হয়ে যায়, কার্যকরের জন্য প্রয়োজন হয় প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের।

আর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বিল পাসে দু’কক্ষেরই অনুমোদন লাগে। প্রথমে বিল হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে উত্থাপন করা হয়। সেখানে এটি পাস হলে যায় সিনেটে। সিনেটেও পাস হয়ে গেলে এটি প্রেসিডেন্টের কাছে যায়, প্রেসিডেন্ট সে বিল অনুমোদন দিতে অথবা আটকে দিতে (ভেটো) ১০ দিন সময় পান।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চলমান। মূলনীতি হলো প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তিন পর্বের প্রেসিডেন্ট বির্তক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বিতর্ক স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এ বিতর্কে অংশ নেন। এবারের তিনটি বিতর্কেই হিলারি ক্লিনটন জয় পেয়েছেন।

ভোট প্রক্রিয়া
দেশটির একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিকে ভোট দেন। ভোটাররা ইলেকটর নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়ে থাকেন। মূলত এই ইলেকটরদের ভোটেই নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।

নির্বাচনের প্রার্থী ও প্রতীক
এবারের নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থী ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর হিলারি ক্লিনটন আর রিপাবলিক পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমজনের নির্বাচনী প্রতীক ‘গাধা’, আর দ্বিতীয়জনের প্রতীক ‘হাতি’। হিলারির রানিং মেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) হিসেবে রয়েছেন ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন। আর ট্রাম্পের রানিং মেট হিসেবে রয়েছেন মাইক পেন্স।

এছাড়া লিবার্টারিয়ান পার্টি থেকে নিউ মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর গ্যারি জনসন, গ্রিন পার্টি থেকে ম্যাসাচুটেসের ড. জিল স্টেইন এবং কনস্টিটিউশন পার্টি থেকে ড্যারেল ক্যাসেল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন।

আরও পড়ুন...

**  হিলারিকে সমর্থন দিয়ে ফ্রি বার্গার পেলো ওবামাকন্যা শাসা

** বড় নির্বাচনী তহবিল হিলারির, পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা

** হিলারিকেই প্রেসিডেন্ট চান ইন্ডিয়ান-আমেরিকানরা
** ট্রাম্পকে ‘উচ্ছেদ’ করে গর্বিত জেমি ওটিস!
**
মঞ্চে মিস ইউনিভার্সকে ট্রাম্পের যৌন হয়রানি (ভিডিও)
** ই-মেইল বিতর্কের দ্রুত সমাধান চেয়েছেন হিলারি

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
টিআই/এইচএ/

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।