এদিকে ট্রাম্পের অবমাননাকর টুইটের প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। সোমবার রাতেই ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড হ্যালেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়।
পাকিস্তানকে এই ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার সামরিক সহায়তা স্থগিত করার পর হোয়াইট হাউস বলেছে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সহায়তা আর দেবে কি না, তা নির্ভর করবে পাকিস্তান সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয় তার ওপর।
সোমবার (০১ জানুয়ারি) নববর্ষের প্রথমদিনে ট্রাম্প তার টুইটে বলেছিলেন, ‘গত ১৫ বছরে একদম বোকার মতো পাকিস্তানকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা হিসেবে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা আমাদের নেতাদের বোকা মনে করে মিথ্যা আর ঠকবাজি ছাড়া কিছুই দেয়নি।
আরও পড়ুন>>
** পাকিস্তান ‘ঠকবাজ’ ও ‘সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য’
পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য’ আখ্যা দিয়ে টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা তাদের যৎসামান্য সহযোগিতা নিয়ে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বেড়াচ্ছি, অথচ পাকিস্তান হয়ে উঠেছে তাদের নিরাপদ ঘাঁটি। অনেক হয়েছে, আর নয়। ’
ট্রাম্পের কড়া টুইটবার্তার পর মার্কিন প্রশাসন ঠিক একই দিনে যে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল, তা এক কথায় নজিরবিহীন।
সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। এসব ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে হুমকিতেই তা সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন দেখিয়ে দিল যে, তারা কথা নয়, বরং যা ভাবে তা করে দেখাতেই বিশ্বাসী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) মার্কিন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পাকিস্তানের সন্ত্রাসী-তোষণ মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্ব্যর্থহীন অবস্থানের জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, তিনি চান পাকিস্তান যেন তার দেশে সক্রিয় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান গ্রহণ হরে। পাকিস্তানের ভূমিকার ওপরই নির্ভর করবে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটি কেমন হবে। আমরা তাদের সামরিক ও নিরাপত্তামূলক খাতে সাহায্য অব্যাহত রাখবো কি রাখবো না। মার্কিন প্রশাসন এবিষয়ে পাকিস্তান কি করছে না করছে, সেদিকে কড়া নজর রাখছে। পাকিস্তানকে অবশ্যই তার বদ খাসলত বদলাতে হবে। ’
ট্রাম্পের টুইটের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব
ট্রাম্পের টুইটবার্তার পরপরই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ তার দেশের সংবাদমাধ্যমের কাছে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা শিগগিরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইটের জবাব দেবো, ইনশাল্লাহ...দুনিয়াবাসীকে আমরা সত্যটা জানাবো...গালগল্প আর প্রকৃত বাস্তবতার মধ্যে যে ফারাক সেটা তুলে ধরবো। আমরা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছি, আমরা আর পারবো না তাদের সহযোগিতা করতে, সুতরাং ট্রাম্প এখন যে ‘আর নয়’ বলছেন, এটা অনর্থক। ’
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাকিস্তান যে অর্থ সহায়তা নিয়েছে, তার ব্যয়সহ যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করতে ইসলামাবাদ প্রস্তুত বলেও জানান খাজা আসিফ।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে খাজা আসিফের প্রতিক্রিয়া জানানোর পর রাত ৯টায় ট্রাম্পের টুইটের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায় ইসলামাবাদ। এজন্য সেদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড হ্যালেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। রাষ্ট্রদূতকে তলব করার সত্যতা দ্য ট্রিবিউন পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছে মার্কিন প্রশাসন।
পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের টুইটের পর সবচে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্ত করেছে পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান লড়াইয়ে সহাযোগিতা করার প্রতিদানে পাকিস্তান আসলে কিছুই পায়নি। পেয়েছে কেবল ‘অবিশ্বাস আর চোখ রাঙানি’।
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিত্র’ হিসেবে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে বিনামূল্যে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। স্থল ও বিমান যোগাযোগ, সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ, গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ। এসব সুবিধা পেয়েই গত ১৬ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র আল কায়েদার বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়ে যেতে পেরেছে। কিন্তু এসবের বিনিময়ে তারা আমাদের উল্টো ভর্ৎসনা ও হুমকি ধমকি দিচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়ালেন ট্রাম্প
সোমবার টুইট বার্তায় পাকিস্তানকে একহাত নেবার পর ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো বিচে ক্রিসমাস ও নববর্ষের ছুটি কাটিয়ে হোয়াইট হাউসে ফেরেন ট্রাম্প। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকেরা তার কাছে জানতে চান, ‘পাকিস্তানের ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা কি, মি প্রেসিডেন্ট?’ কিন্তু প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান ট্রাম্প।
ট্রাম্পের পাকিস্তান-নীতির পক্ষে মার্কিন নেতারা
ট্রাম্প পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে অনমনীয় অবস্থান নিয়েছেন, বেশিরভাগ মার্কিন নেতাই তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই প্রকাশ্যে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তবে বেশিরভাগই রিপাবলিকান।
ওকলাহোমার রিপাবলিকান কংগ্রেস নেতা মার্কওয়েইন মুল্লিন বলেন,‘পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে আমি সমর্থন করছি’।
তার ভাষায়, ‘হয় আপনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়াবেন নয়তো বিপক্ষে। আমাদের প্রেসিডেন্ট যে ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতির বাস্তবায়ন করছেন, তাতে আমি গর্বিত। ’
কেন্টাকি থেকে নির্বাচিত সিনেটর র্যান্ড পল বলেন, ‘ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হবার কোনো সুযোগ নেই। পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য বন্ধ করার জন্য আমি বহু বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এবার সিনেটেও এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখবো আমি। ’
এছাড়া সিএনএন’র জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক সামান্থা ভিনোগ্রাদও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘আর নয় যথেষ্ট হয়েছে-পাকিস্তানকে একথা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেবার জন্য এটা (ট্রাম্পের পদক্ষেপ) এক মোক্ষম উপায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি তার এই কড়া অবস্থানকে ধরে রাখতে পারেন তাহলে তা বেশ কাজে দেবে। ’
এদিকে ট্রাম্প-তনয় ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রও তার পিতার পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে সোমবার করা এক টুইটে বলেন, ‘শুরুটা খুব দারুণ হয়েছে। যেসব দেশ আমাদের দুষমনদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, সেসব দেশের পেছনে কেন আমরা কোটি কোটি টাকা ঢালতে যাবো!’’
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৮
জেএম/