অলক্ষুনে পুরুষের টিকি না মাড়িয়ে অসংখ্য মেক্সিকান ললনা এবার দলে দলে প্রাণ-মন-হৃদয় সঁপে দিচ্ছে এক 'সদা-নীরব', উচু-লম্বা দশাসই এক প্রেমিককে। যে প্রেমিক কথা বলে না, সব সময় চুপ করে থাকে।
হ্যাঁ, মেক্সিকোর মেয়েরা এখন দলে দলে গাছকেই বাহুডোরে মায়াডোরে বাঁধছে। তাও আবার ঘটা করে। সাধারণ আর দশটা বিয়েতে যেমন প্রাদ্রি-পুরোত ডেকে প্রথা ও ধর্মীয় রীতি মেনে আচার অনুষ্ঠান হয়। গাছের সঙ্গে বিয়েতেও তা করা হচ্ছে ষোল আনা। ‘যদিদং হৃদয়ং মম...হৃদয়ং তব’ –জাতীয় মন্ত্রটন্ত্র পাঠও করা হয় প্রাণের আবেগ আর অর্ঘ্য ঢেলে।
‘একটা গাছকে ভালোবাসো' বা 'ম্যারি আ ট্রি’ নামের এক অভিনব ক্যাম্পেইন শুরু করেছে প্রকৃতিবান্ধব সংগঠন ‘বেদানি’। পৃথিবী বা বসুন্ধরা নামের আমাদের প্রিয় এই গ্রহকে, এর গাছপালা তরুলতাকে কাঠচোর, তরুঘাতক কাঠব্যবসায়ী মাফিয়াচক্রের করাল কুঠারাঘাত থেকে বাঁচাতেই ‘বেদানি’ শুরু করেছে এক বৃক্ষরক্ষা ক্যাম্পেইন। তারা ‘একটা গাছকে বাসো ভালো’, ‘একটা গাছকে বিয়ে করো ’, ‘গাছ নামের প্রেমিক তোমায় ছেড়ে যাবে না’—এরকম মনকাড়া স্লোগান নিয়ে সুন্দরী ললনাদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছে বেদানি। গাছকে বিয়ে করার জন্যিউদ্বুদ্ধ করছে তরুণীদের।
মজার ব্যাপার, তাতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে দিয়েছে। পাজী পুরুষের চেয়ে শান্ত গাছকেই তারা ঢের যোগ্য প্রেমিক ও বর হিসেবে বেছে নিয়েছে। গাছের সঙ্গে গণবিয়ের এক হৈহৈ রৈ রৈ কাণ্ড হয়ে গেল সেদেশে বেশ ঘটা করে বহু মানুষের উপস্থিতি। মানুষ-কনেদের আর গাছরূপী বরদের গণবিয়ের এই অভিনব আয়োজনে পাদ্রী বা পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন পেরুভীয় অভিনেতা ও প্রকৃতিবাদী বিচার্ড তোরেস।
কিন্তু বিয়ে মানেই তো দুপক্ষের সম্মতি। কিন্তু গাছ তো আর কথা বলতে পারে না। তাহলে গাছের সম্মতি আছে সেটা জানার উপায় কি? আয়োজকদের মতে, ‘মৌনং সম্মতিং লক্ষণম!’। আরে ভাই এই বিয়ের ছাড়াছাড়ি, বিচ্ছেদ এসবের জন্য তো আর আদালতে দৌড়তে হবে না। তাহলে বাধা কোথায়!
এবার যে তরুণীরা গাছকে ভালেঅবেসে বিয়ে করলো, এটা মেক্সিকো ওয়াক্সাকা প্রদেশের সান হাকিন্তো আমিলকান বনভূমিতে নির্বিচার বৃক্ষনিধন ও অবৈধভাবে গাছ কেটে বনউজাড়েরই এক শিল্পিত প্রতিবাদ। গাছকে ভালোবাসা ও বিয়ে করার মধ্য দিয়ে মেক্সিকোর সুন্দরী ললনারা চায় গাছকে করাত-কুড়ালের দাতের কামড় থেকে বাঁচাতে। গাছকে সবচেয়ে আপন ভেবে আগলে রাখতে। পত্রেপুষ্পে বর্ণেগন্ধে ছায়ায় মায়ায় এক মনোরম পৃথিবীর স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে।
এই তরুণীরা শপথ করেছে, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, ততক্ষণ তাদের ‘বরদের গায়ে’ কাউকে কুড়াল বসাতে দেবে না তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
জেএম