আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত যে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন, রাশিয়া তাতে সাড়া না দেয়ায় টেরিজা মে সরকার স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলো। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি কূটনীতিক বহিষ্কারের মধ্যেই শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপটি সীমিত নয়।
টেরিজা মে বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ২৩ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণাটি দেবার সময় বলেন, কূটনীতিক বহিষ্কারের বাইরেও চলতি বছর অনুষ্ঠেয় ফুটবল বিশ্বকাপে রাশিয়ায় সরকারি প্রতিনিধি পাঠানো থেকেও বিরত থাকবে তার সরকার।
‘‘যুক্তরাজ্য চায় না আলোচনার সব পথ বন্ধ করে দিতে; তবে সম্পর্কটা আর আগের মতো থাকতে পারে না। যুক্তরাজ্য রাশিয়ার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। ’’
২৩জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে তারই ষোলকলা পূর্ণ করলো তার সরকার।
বহিষ্কৃত এই ২৩ কূটনীতিককে ‘‘অঘোষিত গোয়েন্দা কর্মকর্তা’’ বলে অভিহিত করে টেরিজা মে তাদেরকে যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যাবার জন্য এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেন। পাশাপাশি তিনি ঘোষণা করেন, যুক্তরাজ্য তার দেশে রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তির সকল নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেবে। বৈরি রাষ্ট্রগুলোর অশুভ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য নিজেকে সুরক্ষিত করার সব কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বৈরি রাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করবে। যেসব লোক যুক্তরাজ্যে আসবে তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে এবং এদের প্রতিটি গতিবিধি নজরে আনা হবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে যুক্তরাজ্য সফরের যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তা প্রত্যাহার কারা হলো।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মতবিরোধ ও সম্পর্কের এই অবনতির জন্য টেরিজা মে সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেন।
‘‘রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চলমান এই লড়াইয়ে যুক্তরাজ্য একা নয়’’ বলে উল্লেখ করে টেরিজা মে বলেন, এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্রিটেনে থাকা রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্য রুশ ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ের ওপর এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলা রাশিয়াই চালিয়েছে বলে মনে করে। কেননা ‘নোভিচক’ নামের এই স্নায়ু বিকলকারী নার্ভ গ্যাসটি রুশরাই তৈরি করেছে এবং এটি আর কারো হাতে যাবার কোনো উপায় নেই। কেননা এটি রুশ অস্ত্রভাণ্ডারের অংশ। তাহলে ব্রিটেনের মাটিতে এই নার্ভ গ্যাস হামলা কী করে করা হলো। মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যে পুতিন উপযুক্ত জবাব না দিলে বা দিতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাজ্য পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য রুশ ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ের ওপর এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলা রাশিয়াই চালিয়েছে বলে মনে করে। সোমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে টেরিজা মে ব্রিটেনের মাটিতে ভয়াবহ নার্ভ গ্যাস হামলার জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করে বলেন, এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলা কেন চালানো হলো তার ব্যাখ্যা রাশিয়াকে দিতে হবে। তা না হলে যুক্তরাজ্য পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে ক্রেমলিনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, নার্ভ গ্যাস হামলা ব্রিটেনের মাটিতে ঘটেছে। সুতরাং এটি একান্তভাবেই ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ বিষয়ে রাশিয়া মোটেই আগ্রহী নয়।
বাংলাদেশ সময়: ...ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮/ আপডেট ২০০৪ ঘণ্টা
জেএম