‘ফলাফল আগে থেকেই জানা’ এমন এক নিয়মরক্ষার নির্বাচনে রোববার ভোট দেবেন রাশিয়ার ভোটাররা।
টানা দ্বিতীয়বার এবং সব মিলিয়ে ৪র্থবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন সেন্ট পিতাসবুর্গে জন্ম নেওয়া বর্তমান দুনিয়ার রাজনীতির সবচেয়ে বড় দাবা খেলোয়াড় ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন।
পুতিনের সবচে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ধনকুবের আলেক্সি নাভালনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা আছেন তাদের সবার ভোট ১৫ শতাংশ হয় কিনা এ নিয়েও সংশয় ঢের। এসব কারণে রাশিয়ায় রোববারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়কে ‘ওয়ান হর্স রেস’ বা ‘এক ঘোড়ার দৌড়’ বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রোববারের নির্বাচনে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া ক্রিমিয়ার জনগণও অংশ নেবে। রাশিয়া এখন তাদেরও দেশ। ১৮ মার্চ তারিখটা ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার চতুর্থবার্ষিকী দিবসও বটে। ২০১৪ সালের এই দিনে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ হয়।
রোববার নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোট। প্রথম পর্বের ভোটে নিরঙ্কুশ জয়ী না-পাওয়া গেলে দ্বিতীয় পর্বের ভোট হবার কথা আগামী ৮ এপ্রিল। কিন্তু সে সম্ভাবনা কোটিভাগের একভাগও নেই। কেননা পুতিনের জযী হওয়া নিয়ে তার পাঁড় দুষমনের মনেও কোনো সংশয় নেই।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন-পরবর্তীকালে দ্বিতীয়বার ভোটগ্রহণের প্রয়োজন একবারই হয়েছিল। সেটা ১৯৯৬ সালে। সেবার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় গেন্নাদি জুগানভের সঙ্গে তাকে দ্বিতীয়বার ভোটযুদ্ধে নামতে হয়েছিল। পরে অবশ্য ইয়েলৎসিনই জয়ী হন। এরপর অসুস্থ ইয়েলসিন তার পছন্দের ‘যোগ্য লোক’ পুতিনের হাতে রাশিয়া নামের রাষ্ট্রের দায়িত্বভার অর্পণ করে যান। ইয়েলসিনের আস্থা আর নিজের যোগ্যতার প্রমাণ পুতিন দিয়ে চলেছেন কড়ায় গণ্ডায়—খোদ আমেরিকাকেও ক্ষণে ক্ষণে ঘোলা জল খাইয়ে। আজকের দিনের রাশিয়ায় তার যোগ্যতা ও ক্যারিশমার ধারেকাছে কেউ নেই আর।
পুতিন ছাড়া প্রার্থী আছেন আরো ৭ জন। পুতিনসহ সব মিলিয়ে ব্যালট পেপারে নাম ও মার্কা উঠবে মোট ৮ জনের। পুতিনের ৭ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে মাত্র তিনজন কিছুটা উল্লেখের দাবি রাখেন। বাকিদের নামের উল্লেখ বাহুল্যমাত্র।
তিন উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, রাশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পাভেল গ্রুদিনিন, উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং আচরণগত সমস্যা ও ফ্যাসিবাদী মানসিকতার জন্য সবার হাসির খোরাক সত্তরোর্ধ্ব ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি ও সাবেক টিভি ব্যক্তিত্ব ও সমকামীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার নারীপ্রার্থী কাসেনিয়া সোবচাক। সোবচাককে গোটা রাশিয়ার সব ভোটার ঠিকঠাক চেনে কিনা সন্দেহ।
পাভেল গ্রুদিনিনকে লোকে কিছুটা চেনে। ৭/৮ শতাংশ সমর্থনও হয়তো তার আছে। কিন্তু পুতিনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠার ক্যারিশমা তো আর এতো কম ভোটপুঁজিতে হয় না! গ্রুদিনিন আগে পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি করতেন। পরে তিনি পক্ষত্যাগ করে কমিউনিস্ট পার্টির ছায়াতলে ভিড়েছেন। জনমত জরিপে বলা হয়েছে, গ্রুদনিন বড় জোর ৮ শতাংশ ভোট টানতে পারেন।
আর উল্টাপাল্টা আচরণের জন্য কুখ্যাত ঝিরিনোভস্কির ভোট বড় জোর ৫ বা ৫ শতাংশের কিছু বেশি হবে। তবে ৭১ বছর বয়সী ঝিরিনোভস্কির ‘পুতিনের কেনা লোক’ বলে বদনাম আছে।
আর নারীপ্রার্থী কাসেনিয়া সোবচাকের ভাগ্যে এক বা দুই শতাংশ ভোটও মিলবে কিনা সন্দেহ। তার যেসব এজেন্ডা সেসব রুশরা একদমই পছন্দ করে না। যেমন, সোবচাক মনে করেন ক্রিমিয়া ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেয়া উচিত, আমেরিকার নির্বাচনে রাশিয়া আসলেই হস্তক্ষেপ করেছিল এবং এজন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। ফলে সোবচাকের নির্বাচনে দাঁড়ানো আর না দাঁড়ানো সমান কথা।
এবার জিতলে পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন ২০২৪ সাল অব্দি। কেননা এবার থেকে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বেড়ে হয়েছে ৬ বছর।
এর মানে রোববারের নির্বাচন শেষে পৃথিবী ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাবে পুতিনকে। পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় চোখের কাঁটা ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দাদাগিরির পথের কাঁটা হয়ে রাজনীতির দাবার ছক আর জুডো-কারাত নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকবেন। রোববার সকালটা পুতিনের দেশ শাসনের নতুন ছাড়পত্র পাবার মঞ্চ কেবল!
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
জেএম