ইসলামে অসিয়তের গুরুত্ব ‘হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমাদের কারও যখন মৃত্যুর সময় এসে উপস্থিত হয়; অসিয়ত করার এ মুহূর্তে তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে দুইজন ন্যায়পরায়ণ মানুষকে সাক্ষী বানিয়ে রাখবে....। ’ -সূরা মায়েদা: ১০৬
মৃত্যুর আগে অনেকেই তার সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা করে যান।
মৃত্যুর আগে অনেকেই তার সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা করে যান। আইনের ভাষায় সেটাই উইল।
উইলকে ভবিষ্যৎ দান বলা যেতে পারে, যা দাতার মৃত্যুর পর কার্যকর হয়। ইসলামি আইন ও পরিভাষায় উইলকে অসিয়ত বলা হয়। জীবনের ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতিকার করার শেষ সুযোগ এ অসিয়তের বিধান এবং সেই সঙ্গে এটা উত্তম কাজ করে বিদায় নেওয়ার এক সুন্দরতম ব্যবস্থা বটে।
অসিয়ত শুধু সম্পত্তি বিলিব্যবস্থার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয়। অসিয়ত হতে পারে মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধ, দাফন-কাফন, জানাজা নামাজ পড়ানো, সম্পত্তির বাটোয়ারা, বিয়েশাদি, ছোটদের পড়াশোনা, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ ও জনকল্যাণমূলক যেকোনো কাজের বিষয়ে।
তবে সম্পত্তি বিলিব্যবস্থার ক্ষেত্রে সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলমান তার অনাত্মীয়কে অর্থাৎ যিনি তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন না, তাকে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পারেন।
কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির ওপর বেশ কয়েকটি দায় থাকে। ওই ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যয়, মৃত্যুশয্যাকালীন ব্যয় এবং ঋণ (যদি থাকে) তার সম্পত্তি থেকে মেটাতে হবে। এরপর যে সম্পত্তি থাকবে, তার এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করা যায়। অসিয়ত মৌখিক বা লিখিত করা যেতে পারে। এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করা হলে, তার জন্য ওয়ারিশের সম্মতি প্রয়োজন হবে। কোনো ওয়ারিশের অসম্মতিতে তার অংশ হারাহারিভাবে বাতিল হবে।
অসিয়তকারী নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর আগে অসিয়ত বাতিল করতে পারেন। অসিয়তকারীর কিছু কার্যক্রমের মাধ্যমে অসিয়ত আপনাআপনি বাতিল হয়ে যেতে পারে। যদি অসিয়তকারী নতুন অসিয়ত করেন, অসিয়ত করা সম্পত্তি বিক্রি, দান কিংবা অন্য কোনোভাবে তার জীবদ্দশায় নিষ্পত্তি করেন বা ওই সম্পত্তির আকার-আকৃতি এমনভাবে পরিবর্তিত হয়- যাতে তা আর চেনা যায় না বা ওই সম্পত্তিতে যদি কোনো নির্মাণকাজ করেন, তবে পূর্ববর্তী অসিয়ত আপনাআপনি বাতিল হয়ে যায়।
যে জন্মগ্রহণ করেনি, তাকে অসিয়ত করা যায় না। তবে অসিয়তের সময় শিশুটি যদি মাতৃগর্ভে থাকে এবং অসিয়তের ছয় মাসের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে, সে ক্ষেত্রে অসিয়তটি বৈধ। যখন অসিয়ত করা হয়, তখন অসিয়ত করা সম্পত্তির অস্তিত্ব না থাকলেও অসিয়তকারীর মৃত্যুর সময় ওই সম্পত্তি বাস্তবে থাকলে অসিয়তটি বৈধ হবে। শর্তযুক্ত অসিয়ত করা যায় না। যদি কোনো শর্তযুক্ত অসিয়ত করা হয়, তবে অসিয়তটি অবৈধ হবে না; বরং শর্তটি বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে কোনো অসিয়তে কোনো বিকল্প রাখা হলে অসিয়তটি বৈধ নয়।
ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধানের মতো মরহুমের অসিয়তের গুরুত্ব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তার অসিয়ত শুনে নেওয়ার পর (নিজেদের স্বার্থে) তা পরিবর্তন করে নিলো তাদের জানা উচিত, এটা পরিবর্তনের অপরাধের দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে। আল্লাহতায়ালা সবকিছুই শোনেন এবং সবকিছুই তার জানা। অবশ্য কারও যদি অসিয়তকারীর কাছ থেকে আশঙ্কা থাকে যে, কারও প্রতি অবিচার করে গেছে, কিংবা বেইনসাফ করা হয়েছে, তাহলে মূল বিষয়টি সংশোধন করে দেয়, এতে তার কোনো দোষ হবে না; আল্লাহ পাক বড়ই ক্ষমাশীল, মেহেরবান। ’ -সূরা বাকারা: ১৮১-১৮২
মৃত ব্যক্তির অসিয়ত পালনের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের যত্নবান হতে হয়। মৃত ব্যক্তির বৈধ অসিয়ত পালনে কোনো ধরনের গড়িমসি কাম্য নয়। আর অসিয়ত সাক্ষীর সামনে করতে হয়। অসিয়ত গোপনে করা যায় না।
এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমাদের কারও যখন মৃত্যুর সময় এসে উপস্থিত হয়; অসিয়ত করার এ মুহূর্তে তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে দু’ জন ন্যায়পরায়ণ মানুষকে সাক্ষী বানিয়ে রাখবে, আর তোমরা যদি প্রবাসে থাকো এবং এ সময় যদি তোমাদের ওপর মৃত্যুর বিপদ এসে পড়ে, তখন বাইরের লোকদের মধ্য থেকে দুইজন ব্যক্তিকে সাক্ষী বানিয়ে নেবে। ’ -সূরা মায়েদা: ১০৬
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৩
এএটি