বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন বিজয় দিবস।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। স্বাধীনতার বিজয় নিয়েও রয়েছে ইসলামের ভাবনা। বিজয় দিবস উদযাপনে ইসলামে কোনো বিরোধিতা নেই। বরং দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয় উদযাপনে মহান রাব্বুল আলামিনের পবিত্রতা ঘোষণা এবং তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাই ইসলামের নির্দেশ।
আমাদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলাম প্রচারের কারণে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেছিলেন মদিনায়। দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর সফলতার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মক্কা নগরী স্বাধীন করেন। অর্জন করেন মহান স্বাধীনতা ও বিজয়। নবীজি (সা.) দেশত্যাগের সময় বারবার অশ্রুসিক্ত নয়নে জন্মভূমির দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘হে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার অধিবাসীরা যদি আমাকে অত্যাচার-নির্যাতন করে বিতাড়িত না করত, আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যেতাম না। ’
দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) আনন্দ উদযাপন করেছেন। বিজয়ের প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন ৮ রাকাত নফল নামাজ। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন, যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে রাসূলুল্লাহ (সা.) সেদিন ঘোষণা করেছিলেন- যারা কাবা ঘরে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে, তারা যত অত্যাচার-নির্যাতনকারীই হোক, তারাও নিরাপদ। এই ছিল দয়ার নবী (সা.) এর মক্কা বিজয়ের আনন্দ উৎসবের ঘোষণা।
বিজয় দিবস উদযাপনে প্রিয় নবী (সা.) এর একটি যুগোপযোগী হাদিস তুলে ধরা হলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে এক দিন ও এক রাত (দেশের) সীমানা পাহারা দেওয়া এক মাসব্যাপী রোজা পালন ও মাসব্যাপী রাত জাগরণ করে নামাজ আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। এই অবস্থায় যদি ঐ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে; তবে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, মৃত্যুর পরেও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে। তার রিজিক অব্যাহত থাকবে, কবর ও হাসরে ঐ ব্যক্তি ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে’। (সহিহ মুসলিম)
দেশপ্রেম, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রহরা ও বিজয় দিবসে তাসবিহ, ক্ষমাপ্রার্থনা এবং আনন্দ উৎসবও দেশের প্রতিটি নাগরিকের আবশ্যকীয় কাজ। এ বিজয় দিবসে দেশের জন্য আত্মদানকারী সব শহিদের জন্য দোয়া করা ইমানের একান্ত দাবি। যেমনটি আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন,
اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰهِ وَ الۡفَتۡحُ
‘ইজা ঝাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহ্
অর্থ: ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে।
وَ رَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اَفۡوَاجًا
ওয়া রাআইতান্নাসা ইয়াদখুলুনা ফি দ্বীনিল্লাহি আফওয়াঝা
অর্থ: আর আপনি দেখবেন মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে (জীবন ব্যবস্থা ইসলামে) প্রবেশ করছে।
فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ وَ اسۡتَغۡفِرۡهُ اِنَّهٗ کَانَ تَوَّابًا
ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াসতাগফিরহু ইন্নাহু কানা তাওয়্যাবা’।
অর্থ: সুতরাং আপনি আপনার প্রভুর প্রশংসা পবিত্রতা পাঠ করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুলকারী’। (সূরা: নাসর)
সূরাটির মূল বক্তব্য
যেকোনো বিজয়ের জন্য আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। সে কারণেই মানুষকে অনন্ত কালের জন্য এ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, যেকোনো বিজয় বা সফলতার জন্য আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে। তবে তিনি দান করবেন বিজয় বা সফলতা। আর সাহায্য চাইতে হবে, আল্লাহ প্রশংসা, পবিত্রতা ঘোষণা এবং তাওবাহ-ইসতেগফারের মাধ্যমে। যা বাস্তবায়িত হয়েছে প্রিয় নবী রাসূলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে। (সূরা: নসর)
রব্বুল আলামিন তিনটি কর্মসূচি এই সূরায় ঘোষণা করেছেন। সেগুলো হলো- ১. ফাসাব্বিহ (আল্লাহর তাসবিহ পাঠ তথা পবিত্রতা বর্ণনা করা)। ২. বিহামদি রব্বিক (আল্লাহর হাম্দ তথা শুকরিয় আদায় করা)। ৩. ওয়াসতাগফির (যুদ্ধের সময় ভুলভ্রান্তি তথা সীমালঙ্ঘন থেকে রবের কাছে ক্ষমা চাওয়া)।
সুতরাং, বিজয় দিবসে মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং দেশের জন্য আত্মদানকারী সব শহিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। মুসলিম উম্মাহর উচিৎ ইসলামি সংস্কৃতি অনুসরণের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
জেএইচ