ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে জনপ্রতিনিধির যেসব গুণ থাকা চাই 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৪
ইসলামে জনপ্রতিনিধির যেসব গুণ থাকা চাই 

একটি সভ্যসমাজের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিনিধিত্বপূর্ণ সমাজব্যবস্থা। আর তাই প্রতিনিধিত্বপূর্ণ সমাজ দিয়েই আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানবসভ্যতার সূচনা করেছিলেন।

আদিপিতা হজরত আদম (আ.) ছিলেন মানবজাতির প্রথম প্রতিনিধি ও প্রথম নবী।

যুগে যুগে মহান আল্লাহ তাআলা যত নবী ও রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাদের সবাইকেই সমকালীন মানবগোষ্ঠীর সর্বোত্তম গুণাবলির অধিকারী করে ওই সমাজের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।  

বস্তুত জনপ্রতিনিধি বিশাল জনগোষ্ঠীর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বহন করেন।  

জনপ্রতিনিধির সামগ্রিক যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ওপর ভিত্তি করে কোনো সমাজ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। সুতরাং জনপ্রতিনিধির বৈশিষ্ট্যগুণে যেমন একটি সমাজ ইতিহাসের স্বর্ণচূড়ায় আরোহণ করতে পারে, তেমনি তার ব্যর্থতা একটি জাতিকে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করতে পারে।  
জনপ্রতিনিধিত্বের সবচেয়ে বড় অঙ্গন হলো জাতীয় সংসদ। সুতরাং সংসদ নির্বাচনই যে বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে জন্যই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের গুরুত্ব সীমাহীন।  

একটি অগ্রসরমাণ জাতির প্রতিনিধির মধ্যে কী কী গুণ থাকা উচিত, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম সেটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সেসব গুণাবলি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।  

তাকওয়া বা আল্লাহভীতি 
যেকোনো জনপ্রতিনিধি সর্বপ্রথম তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া আবশ্যক। আল্লাহভীতি ও তাকওয়া মুমিনকে সর্বদা নিজ কর্তব্য পালনে তৎপর রাখে। বৈধ-অবৈধতার সীমারেখায় তাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ মুত্তাকি বা আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছোট-বড় সব কাজেই পরকালীন জবাবদিহিতার কথা চিন্তা করে। তাই আল্লাহভীরু, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিই জনপ্রতিনিধিত্বের সম্মানজনক আসনে সর্বাধিক উপযুক্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের একজন মাত্র পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদের বিভিন্ন দল ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিতি অর্জন করতে পারো। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সে, যে সবার চেয়ে বেশি মুত্তাকি। ’ (সুরা আল-হুজুরাত, আয়াত : ১৩) 

আমানতদারি ও ন্যায়পরায়ণতা 
সাধারণত নির্বাচনী এলাকার ও সেখানে বসবাসকারী জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ও অনুদান এসে থাকে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তার। সুতরাং জনপ্রতিনিধি আমানতদার না হলে জনগণ বঞ্চিত হবে। এলাকায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের উন্নয়ন হবে না। ফলে জনপ্রতিনিধি আমানতদার ও ন্যায়পরায়ণ হওয়া অত্যাবশ্যক। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করছেন যে তোমরা আমানতকে তার উপযুক্ত প্রাপকের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। আর মানুষের মাঝে যখন কোনো বিষয়ে বিচার-ফয়সালা করবে, তখন অবশ্যই ইনসাফের ভিত্তিতে তা করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন। (সূরা আন্-নিসা : ৫৮) 

চরিত্র ও ব্যবহার মানোত্তীর্ণ হওয়া 
এক হাদিসে আছে একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষকে আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামতগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম কোনটি? রাসুল (সা.) বলেন, উত্তম চরিত্র। (মুসনাদে আবু দাউদ, হাদিস : ১৩২৯) 

জনপ্রতিনিধি অবশ্যই উন্নত চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী হওয়া চাই। কারণ চরিত্রহীনকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ঘৃণা করে। আল্লাহ তাআলাও তাকে পছন্দ করেন না। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আমাকে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে পাঠানোর সময় শেষ অসিয়ত হিসেবে বলেন, ‘তুমি অবশ্যই তোমার চরিত্রকে সুন্দর করবে। কারণ মানুষের মধ্যে যার চরিত্র বেশি সুন্দর, সে দ্বীনদারির দিক থেকেও তাদের মধ্যে উত্তম। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং : ২১৯৮৯) 

হৃদয়বান ও জনদরদি হওয়া 
জনপ্রতিনিধি আন্তরিক, হৃদয়বান ও জনদরদি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ জনপ্রতিনিধি যদি জনতার প্রতি ভালোবাসা না রাখে, জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক যদি বন্ধুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে তার দ্বারা জনগণের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব নয়।  

ভালোবাসা ও আন্তরিকতার মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধি এলাকার জনগণ ও মহান আল্লাহর প্রিয় ও আস্থাভাজন হয়ে ওঠা সম্ভব। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অনুগ্রহ ও দয়াবানদের ওপর দয়াময় আল্লাহ দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সুতরাং জমিনের অধিবাসীদের ওপর তোমরা দয়া করো, তাহলে আসমানওয়ালা—অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়া করবেন। (বুখারি ও মুসলিম) 

জনসেবার মন-মানসিকতা থাকা 
জনসেবার মানসিকতা জনপ্রতিনিধির আবশ্যিক অনুষঙ্গ। জনগণের সেবা করতে না পারলে তাদের নেতা হওয়ার কোনো সার্থকতা নেই।  

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হয়েও রাসুল (সা.) উম্মতের সেবা করে গেছেন জীবনভর। সাহাবায়ে কেরামও (রা.) রাসুল (সা.)-এর এ শিক্ষা ও আদর্শ লালন করেছিলেন। ফলে তাদের শাসনামলে জনসাধারণ উন্নত জীবনযাপনের পাশাপাশি বেশ শান্তি-সুখ ও সমৃদ্ধিতে ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।