ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মুমিনের মনোবল যেভাবে বৃদ্ধি পায়

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
মুমিনের মনোবল যেভাবে বৃদ্ধি পায়

সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য মনোবল ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনোবল ভেঙে গেলে মানুষ ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে, সাফল্য তার কাছে হয়ে যায় সোনার হরিণ।

ইসলাম মানুষকে মনোবল ধরে রাখার শিক্ষা দিয়েছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে মনোবল ধরে রাখার জাদুকরী নির্দেশনা।

তা হলো মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখা, তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করা, সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। নিচে তা তুলে ধরা হলো :

১. মুমিনের প্রচেষ্টা নিষ্ফল নয় : ইসলাম মানুষকে সর্বাবস্থায় নিজের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়। কেননা মুমিনের বৈধ প্রচেষ্টা কখনো নিষ্ফল হয় না। মহান আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, ‘তুমি ধৈর্য ধারণ কোরো, কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্কর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৫)

২. প্রচেষ্টায় খোলে পথ : মুমিন যখন আল্লাহর ওপর নির্ভর করে নিজের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে থাকে, আল্লাহ অসম্ভব বিষয়ের দরজাও খুলে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সত্কর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন। ’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

৩. ধৈর্যই মনোবল, মনোবলে মুক্তি : কোরআনের একাধিক স্থানে মানুষকে ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ধৈর্যই মনোবল। কেননা প্রতিকূল পরিস্থিতি সহ্য করা, হতাশ না হওয়া এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার নাম ধৈর্য। মনোবল একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের; যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)

৪. বর্তমানে সন্তুষ্টদের জন্য সুদিনের বার্তা : মহান আল্লাহই মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকামী এবং তিনিই সুদিন ও দুর্দিনের স্রষ্টা। তাই মুমিন দুর্দিনেও আল্লাহর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে না, বরং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ কোরো, তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই অধিক দেব আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

৫. আমার প্রভু সর্বশক্তিময় আল্লাহ : মুমিন সুদিন ও দুর্দিন সব সময় নিজের মেধা, যোগ্যতা ও ক্ষমতার ওপর নির্ভর না করে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। আর আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করলে তোমাদের ওপর জয়ী হওয়ার কেউই থাকবে না। আর তিনি তোমাদের সাহায্য না করলে, তিনি ছাড়া কে এমন আছে, যে তোমাদের সাহায্য করবে? মুমিনরা আল্লাহর ওপরই নির্ভর করুক। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬০)

৬. আমি অক্ষম, আল্লাহ নন : দুর্দিনে মানুষ কখনো কখনো নিজেকে অক্ষম মনে করে, তবে তার মনে রাখা উচিত মহান প্রতিপালক আল্লাহ অক্ষম নন। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এ জন্য মুমিন কখনো হতাশ হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর আশিস থেকে তোমরা নিরাশ হয়ো না। কেননা আল্লাহর আশিস থেকে অবিশ্বাসী সম্প্রদায় ছাড়া কেউ নিরাশ হয় না। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮৭)

৭. পাপের ভারে ভাঙে মনের শক্তি : পার্থিব জীবনে যে বিপদ-আপদ ব্যক্তিকে স্পর্শ করে তার জন্য ব্যক্তির ভুলভ্রান্তি ও পাপ-পঙ্কিলতাও দায়ী। এ ছাড়া পাপ মানুষের মানসিক শক্তি ও মনোবল ভেঙে দেয়। এ জন্য মুমিন বিপদগ্রস্ত হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়। পাপের পঙ্কিলতা দূর হলে ব্যক্তির মনোবলও ফিরে আসে এবং আল্লাহর অনুগ্রহে সে বিপদ মুক্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ এমন নন যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদের শাস্তি দেবেন। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩৩)

৮. আল্লাহর স্মরণে ফেরে মনোবল : মনোবল ভেঙে গেলে মানসিক যে অস্থিরতা তৈরি হয় তা আল্লাহর জিকির ও স্মরণের মাধ্যমে দূর হয়। ফলে জিকির করলে মানুষের মানসিক প্রশান্তি ও মনোবল ফিরে আসে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়; জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। ’ (সুরা : রাআদ, আয়াত : ২৮)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জানি, তারা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়; সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কোরো। আর তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। ’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৯৭-৯৮)

৯. উত্তম পথেই আসে সুদিন : আপনার পথ যদি ভুল হয়, তবে আপনি হোঁচট খাবেন এবং দিন দিন আপনার মনোবল ভাঙতে থাকবে। তাই হোঁচট খেলে আরো নির্মল পথ বেছে নিন। দেখবেন আপনি এগিয়ে যাওয়ার সাহস খুঁজে পাচ্ছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে কাজে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। ’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২)

১০. সুদিন আপনার দোরগোড়ায় : আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে অবিরাম কষ্টে নিপতিত করে রাখেন না। দুর্দিন দিয়ে পরীক্ষা করার পরই সুদিন দান করেন। তাই আপনি যদি বিপদগ্রস্ত হন, তবে বিশ্বাস করুন, সুদিন আপনার দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই আছে স্বস্তি, অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। ’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।