আমাতুল লফিত বিনতে নাসিহ (রহ.) ছিলেন হাম্বলি মাজহাবের বিখ্যাত নারী ফকিহ (আইনবিদ), আধ্যাত্মিক সাধক ও সুলেখক। তিনি ছিলেন বিখ্যাত সাহাবি সাআদ বিন উবাদা আনসারি (রা.)-এর বংশধর ছিলেন।
আমাতুল লতিফ (রহ.) ছিলেন একটি ঐতিহ্যবাহী দ্বিনি পরিবারের সন্তান। যারা ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা ও বহুমুখী দ্বিনি খেদমতের জন্য বিখ্যাত। আরব বিশ্বের রাজনীতিতেও তাদের জোরাল প্রভাব ছিল। তারা বহু মাদরাসা ও জ্ঞানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। অসংখ্য ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিশেষত ফিকহে হাম্বলির ওপর তাঁদের অনবদ্য সব রচনা রয়েছে। তাঁর পূর্ণ নাম আমাতুল লতিফ বিনতে নাসিহুদ্দিন আবিল ফারাজ আবদুর রহমান বিন নাজাম খাজরাজিয়্যা আনসারিয়্যা। তাঁর জন্ম তারিখ সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।
আমাতুল লতিফ (রহ.) সাআদ বিন উবাদা (রা.)-এর বংশধর ছিলেন। তাঁদের পূর্বপুরুষরা মদিনায় বসবাস করতেন। সেখান থেকে তারা সিরাজে চলে যান। সেখান থেকে শামে চলে আসেন এবং সেখানেই খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর দাদার দাদা আবুল ফারাজ আবদুল ওয়াহেদ বিন মুহাম্মদ সিরাজি (রহ.) ছিলেন বিশিষ্ট ফকিহ, মুফতি, ওয়ায়েজ ও লেখক। প্রাথমিক জীবনে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে বসবাস করতেন। সেখান থেকে দামেস্ক গমন করেন। তিনি ‘শায়খুশ শাম’ উপাধিতে ভূষিত হন। হাম্বলি মাজহাবের প্রভাবশালী আলেম হওয়ার কারণে তাঁদের পরিবারকে ‘বায়তু ইবনিল হাম্বলি’ নাম দেওয়া হয়। তাঁর দাদা নাজাম বিন আবদিল ওয়াহাব (রহ.) সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর বন্ধু ও সহচর। তাঁর পিতা নাসিহুদ্দিন আবদুর রহমান (রহ.)-ও ছিলেন বিশিষ্ট ফকিহ, মুহাদ্দিস, ওয়ায়েজ, লেখক, ঐতিহাসিক ও বীর যোদ্ধা। তাঁকে ‘শায়খুল হানাবিলা’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল। তিনি ‘ইবনুল হাম্বলি’ নামেও প্রসিদ্ধ। শায়খ নাসিহুদ্দিন (রহ.) ঐতিহাসিক হিত্তিন যুদ্ধে এবং বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের অভিযানে সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
আমাতুল লতিফ (রহ.) কর্মজীবনে রাবেয়া খাতুন (রহ.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি রাজমহলের নারীদের কোরআন, হাদিস ও ফিকহের পাঠদান করতেন। রাবেয়া খাতুন (রহ.) তাঁকে ভালোবাসতেন তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জন্য। তিনি তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করতেন, তাঁর কথা রাখতেন। আমাতুল লতিফ (রহ.)-এর জন্য রাবেয়া খাতুন (রহ.) হাম্বলি মাজহাবের অনুসারীদের জন্য একটি পৃথক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আমাতুল লতিফ (রহ.)-এর প্রতি অগাদ বিশ্বাস থাকায় তিনি তাঁর কথা অনুসারে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। যার বেশির ভাগ আমাতুল লতিফ (রহ.) মাদরাসার প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি মাদরাসা হলো, মাদরাসাতুল হাদিস, মাদরাসাতুস সাহিবাহ, মাদরাসাতুর রিবাত ইত্যাদি। ৬৪৩ হিজরিতে রাবেয়া খাতুন (রহ.) ইন্তেকাল করলে তিনি কঠিন পরিস্থির মুখোমুখি হন। তিন বছর তাঁকে একটি দুর্গে বন্দি করে রাখা হয়। বন্দিজীবন থেকে মুক্তি লাভের পর তিনি বিয়ে করেন এবং স্বামীর সঙ্গে হিমসে চলে যান।
আল্লামা ইবনে কাসির ও আল আলাম গ্রন্থকারসহ ঐতিহাসিক লেখেন, তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের বর্ণনায় কেবল দুটি বইয়ের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। তা হলো : কিতাবুত তাসদিদ ফি শাহাদাতিত তাওহিদ এবং কিতাবু বিররিল ওয়ালিদাইনি। বাকি রচনাগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।
৬৫৩ হিজরিতে (১২৫৫ খ্রি.) মহান এই নারী রাহবা নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে মাদরাসাতুল হাদিসের পাশে সমাহিত করা হয়। মৃত্যু সময় তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ রেখে যান। যার আর্থিক মূল্য ছিল ছয় লাখ রৌপ্য মুদ্রার সমান। এছাড়াও তিনি বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদও দান করে যান।
তথ্যসূত্র : সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৭/২৬; তারিখুল ইসলাম : ১৪/৭৪১
বাংলাদেশ সময়: ০৭১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৪
এসআই