এখন চলছে শীতকাল। শীতকালে বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
এভাবে অতিথি পাখি শিকার পরিবেশের জন্য যেমন হুমকির কারণ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অনুচিৎ। কারণ তারা বিপদাপন্ন অবস্থায় নিজ দেশে থেকে বাংলাদেশে এসেছে বাঁচার আশা নিয়ে। সেখানে তাদের এভাবে শিকার করা ঠিক নয়। শান্তির ধর্ম ইসলামসহ প্রত্যেক ধর্মেই সব ধরনের জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে।
ইসলামের পাঁচ ভিত্তির অন্যতম হলো- নামাজ। এই নামাজের পর শ্রেষ্ঠ ইবাদত ‘সৃষ্টির সেবা। ’ নামাজ ফরজ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘সৃষ্টির সেবা’ নামাজের থেকেও অধিক গুরুত্ব লাভ করে। যেমন নামাজরত ব্যক্তি যদি জানতে পারে যে, কাছেই একজন মানুষ বা একটি প্রাণী বিপদে পড়েছে, তার জীবন সঙ্কটাপন্ন, দেরি হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে, কিংবা অঙ্গহানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে ওই ব্যক্তি কিংবা প্রাণীটিকে বিপদমুক্ত কারার বা ক্ষতি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। পরে ফিরে এসে নামাজ শেষ করতে হবে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শত্রুমিত্র ভেদাভেদ ভুলে অসহায় মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেছেন। নবী (সা.)-এর দয়া ও দরদ থেকে বাদ পরেনি সাধারণ কীটপতঙ্গ, পশুপাখি, জীবজন্তু এমনকি বৃক্ষরাজিও। হাদিসে এ সবের প্রতি দয়া প্রদর্শনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। তন্মধ্যে এই বিখ্যাত ঘটনাটি তো সবারই জানা।
একদিন এক বালক পাখির বাসা থেকে দু’টি ছানা নিয়ে যাচ্ছিল। মা পাখিটা ছানার শোকে পাগলপ্রায় হয়ে ওই বালকটির মাথার উপর উড়াউড়ি করতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বালকটিকে বললেন, ‘ছানা দু’টি বাসায় রেখে এসো। দেখছ না মা পাখিটি কেমন পাগল হয়ে তোমার মাথার ওপর উড়াউড়ি করছে, নিজের জীবনের মায়া পর্যন্ত নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথায় ওই বালক ছানা দু’টিকে পাখির বাসায় রেখে এলো। ছানা দু’টিকে পেয়ে মা পাখিটি বাচ্চা দু’টিকে অনেক আদর-সোহাগ করল, তা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) খুব খশি হলেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা গৃহপালিত পশুর প্রতি খুব যত্নশীল হবে। তাদের ঠিকমতো খেতে দেবে। তারা যাতে কষ্ট না পায় এমন থাকার ব্যবস্থা করবে। তারা যা বহন করতে পারে তার অতিরিক্ত কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। নবী (সা.) গর্তস্থ কীটপতঙ্গদের জীবন রক্ষার নিমিত্তে গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। কারণ গর্তে পিঁপড়া ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ থাকে। তারা মারা যেতে পারে (কষ্ট পেতে পারে)। পশু-পাখির প্রতি এমন দয়া-মায়ার প্রেক্ষিতেই নবী (সা.)-কে শুধু মানুষের নবী না বলে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ (বিশ্ববাসীর জন্য রহমত) অভিধায় ভূষিত করা হযেছে।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, দুনিয়ার বুকে যদি কোনো পশু অন্য পশুকে আঘাত করে আর আঘাতপ্রাপ্ত পশুটি প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ না পায় তাহলে দু’টো পশুকেই হাশরের ময়দানে উপস্থিত করানো হবে এবং অত্যাচারিত পশুটিকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। বাদ যাবে না অত্যাচারী মানুষেরাও। একবার ভাবুন, পশুরা প্রতিশোধ নিচ্ছে মানুষের ওপর, তখন কী ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে তা সহজেই অনুমেয়। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি যদি কারো ওপর দয়া করো তাহলে তোমার ওপরও দয়া করা হবে। ’
উপরোল্লেখিত হাদিসসমূহের আলোকে বলা যায়, অসুস্থ পশুপাখির সেবা করা, তাদের আশ্রয় প্রদান করা, অভুক্ত পশু-পাখিকে খাওয়ানো অনেক সওয়াবের কাজ। সুতরাং আশ্রয়প্রার্থী কোনো পাখীকে শিকার করে রসনাতৃপ্ত করা যে জঘন্যতম অপরাধ- এটা আর নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। এভাবে পশু-পাখি শিকার, ভোজন, ক্রয়-বিক্রয় ইসলামের শিক্ষার বিপরিতও বটে।
বাংলাদেশ সময় ১৭৫৭ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫