ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইজতেমার মাঠ সমাচার

ইসলাম ডেস্ক, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫
ইজতেমার মাঠ সমাচার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আগে বেশ কিছু স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও ১৯৬৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ‘বিশ্ব ইজতেমা’ টঙ্গির তুরাগ তীরসংলগ্ন ১৬০ একর (এখন প্রায় ১৭৫ একর) জায়গার বিশাল খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জায়গাটি ১৯৯৫ সালে সরকার বিশ্ব ইজতেমার ময়দান হিসেবে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়।

সরকারি নকশা অনুযায়ী, গাজীপুরের সদর উপজেলার মাছিমপুর মৌজার ৯০ দশমিক ৮৮ একর ও টঙ্গি মৌজার ৬৯ দশমিক ১২ একর জমি নিয়ে ইজতেমা ময়দান। ময়দানের দক্ষিণ-পশ্চিমে তুরাগ নদ, উত্তরে টঙ্গি-আশুলিয়া বাইপাস সড়ক, পূর্বে কিছু অংশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং বাকি অংশে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানা। তবে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের ১৬০ একর জমির মধ্যে প্রায় ২০ একর বেদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব জমিতে ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, একটি কথিত মাজার ও বস্তি গড়ে উঠেছে। কিছু জমি চলে গেছে তুরাগের পেটে।

বাংলাদেশে ১৯৪৬ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা হয়ে আসছে। শুরুতে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা হত। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা হয়। ইজতেমায় মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে এখানেই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে ২০১০ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে সম্পন্ন হচ্ছে।

ইজতেমার স্থানটি একটি উন্মুক্ত মাঠ। যা বাঁশের খুঁটির ওপর চট লাগিয়ে ছাউনি দিয়ে ইজতেমার জন্য প্রস্তুত করা হয়। শুধুমাত্র বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়ার ব্যবস্থা করা হয়। সংযোগ দেওয়া হয় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইনের। সমাবেশস্থলটি প্রথমে খিত্তা ও পরে খুঁটি নম্বর দিয়ে ভাগ করা হয়। অংশগ্রহণকারীগণ খিত্তা নম্বর ও খুঁটি নম্বর দিয়ে নিজেদের অবস্থান সনাক্ত করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাওয়ারি মাঠের বিভিন্ন অংশ ভাগ করা থাকে। বিদেশি মেহমানদের জন্য আলাদা নিরাপত্তাবেষ্টনীসমৃদ্ধ এলাকা থাকে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরাই কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। পুরো সমাবেশের আয়োজনই করে থাকেন একঝাঁক ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বেচ্ছাসেবক। যারা আর্থিক, শারীরিক সহায়তা দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই সমাবেশকে সফল করতে সচেষ্ট থাকেন।

ইজতেমার মাঠের ভেতরে কোথাও কোনো মুভি ক্যামেরা ঢুকতে দেওয়া হয় না। ইজতেমার বিশাল মাঠটি ইজতেমার সময় বাদে বাকি সময়টুকু খালি পড়ে থাকে। এমনকি বন্যার সময় পানির নিচে ডুবে যায় পুরো মাঠ। ইজদেমার মাঠের বেশ কয়েকটি প্রবেশমুখ রয়েছে। এখন সবগুলো প্রবেশমুখে তাবলিগের ব্যবস্থাপনায় পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর এখন আর কেউ ইজতেমার মাঠে প্রবেশ করতে পারে না। ইজতেমার মাঠের পশ্চিম-উত্তর পার্শ্বে রয়েছে মাল-সামানা রাখার গুদাম ঘর। রয়েছে একটি মাদরাসা ও মসজিদ। বেশ কয়েক বছর আগেও ইজতেমার মাঠ অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। এখন প্রায় পুরো মাঠই ঘিরে ফেলা হয়েছে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে। অবশ্য দিনের বেলা টঙ্গি এলাকার লোকজন সেখানে হাটতে ও খেলাধুলা করার সুযোগ পায়। মাঝে-মধ্যে কিছু গরু-ছাগলকেও ঘাস খেতে দেখা যায়। এখন ইজতেমার মাঠের মসজিদে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ বয়ান হয়, প্রচুর লোক শবগুজারি করতে আসেন। বলতে গেলে, এখন প্রায় পুরো বছরই ব্যবহৃত হয় ইজতেমার মাঠ। বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন সময়ে মাঠের উন্নয়নে বেশ অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে মাঠের চারপার্শ্বে বহুতল বিশিষ্ট অনেকগুলো বাথরুম নির্মাণ ও মাঠ মাটি দিয়ে ভরাট করে ইজতেমার মাঠকে ব্যবহার উপযোগী করে দিয়েছেন।

ইজতেমা মাঠের উত্তর পাশে প্রবেশের দুইটি গেইট রয়েছে। পূর্ব পাশে দু’টি গেইট এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে আরো বেশ কয়েকটি গেইটসহ মোট ১৭টি প্রবেশ পথ রয়েছে। এসব প্রবেশ পথ ও সেনাবাহিনীর তৈরি ভাসমান সেতু দিয়ে ইজতেমায় আগত লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি আসা-যাওয়া করেন। ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমার মাঠে তৈরি করা হয়েছে কমপক্ষে ২শ’ মোকাব্বির মঞ্চ। ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময় ওই মঞ্চ থেকে একজন মোকাব্বির (ব্যক্তি) আল্লাহ আকবর বলবেন, বাকিরা তা শুনে বলবেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ইজতেমা মাঠে এবং তার চারপাশ এলাকায় মুসল্লিদের বয়ান শুনার সুবিধার্থে ১০ থেকে ১২ হাজার ছাতা মাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশ কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত মাইকের ব্যবস্থা করেছেন।

ইজতেমা মাঠের পশ্চিম কোনে নদীর পাড়ে রয়েছে একটি লাশ ঘর। ইজতেমায় আগত  মুসল্লিদের কেউ যদি অসুস্থ হয়ে মারা যায় তাহলে তার লাশ ওই ঘরে রাখা হয়। লাশ ঘরের পাশে একটি মালামাল হারানো ও প্রাপ্তির ঘর রয়েছে। ইজতেমার নিরাপত্তায় পাঁচস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ, টহল পুলিশ, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকে। দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য ৩টি হেলিপ্যাড প্রস্তুত রয়েছে। ইজতেমার নিরাপত্তায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজারের মতো পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। এতোসব আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতা শুধু আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভের জন্য। এখন প্রশ্ন হলো, কাঙ্খিত সেই ভালোবাসা আমার-আপনার জন্য বরাদ্দ আছে তো!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।