পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে রক্ষা করে’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫)। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক মানুষ নিয়মিত নামাজ পড়ে তার পরও নানাবিধ অন্যায়-অনচার ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত থাকে।
এমন প্রশ্নের জবাবে অভিজ্ঞ চিন্তাবিদ আলেমরা বলেছেন, এর বহুবিধ কারণ। যার অন্যতম কারণ হলো—
নামাজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করা। যারা নামাজ পড়ে কিন্তু নামাজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না, তাদের নামাজ তাদেরকে পৃথিবীতে পাপ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে না, আখেরাতেও দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করবে না। তাই নামাজীদের নামাজের শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নামাজ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
নামাজ থেকে দু’ভাবে শিক্ষা নিতে হবে। ১. নামাজ অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষা ও ২. নামাজে পঠিত বিষয়সমূহ থেকে শিক্ষা। নামাজ অনুষ্ঠান থেকে নেয়া শিক্ষা আবার দু‘ভাগে বিভক্ত। ক. ব্যক্তি জীবনের শিক্ষা ও খ. সমাজ জীবনের শিক্ষা। পঠিত বিষয়গুলো থেকে নেয়া শিক্ষা কয়েক ভাগে বিভক্ত- ক. সূরা ফাতেহা থেকে শিক্ষা, খ. অন্য সূরা থেকে শিক্ষা ও গ. তাসবিহ পড়া থেকে শিক্ষ।
নামাজ তার অনুষ্ঠান থেকে নামাজীকে ব্যক্তিজীবনে যে সব শিক্ষা দেয় তার অন্যতম হলো—
১. আল্লাহর আদেশ মানার মানসিকতা সৃষ্টি করা। নামাজের শিক্ষাগুলোর মধ্যে এটাই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন মানুষ তার সকল কাজ কর্ম ফেলে নামাজ পড়তে যায়। একাগ্রতার সাথে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে, রুকু-সেজদা করে। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয় পাঠ করে। আন্তরিকতার সাথে দোয়ায় গুনাহ মাফ চায় ও রহমত প্রার্থনা করে। তারপর ক্ষমা ও রহমত প্রাপ্তির পূর্ণআস্থা নিয়ে সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করে। এটাই আল্লাহতায়ালার আদেশ। বান্দা শুধু আল্লাহর আদেশ পালনার্থে ও আল্লাহর ভয় থেকেই এটা করে। তাই নামাজীরা একমাত্র আল্লাহতায়ালার আদেশ মানার মানসিকতা থেকেই নামাজ পড়ে থাকে। নামাজে যেভাবে মানুষ আল্লাহর হুকুম মানার চেষ্টা করে, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেও সে যেন এভাবে আল্লাহর হুকুম মেনে চলে নামাজ মূলত এটাই শিক্ষা দেয়।
২. নামাজ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ কোরআন থেকে জানার মানসিকতা তৈরি করে। নামাজে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিম থেকে তেলাওয়াত করতে বলেছেন। এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা ইসলামকে কোরআন থেকে জানার শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো কোরআনে রয়েছে। যারা কোরআনের অনুসরণ করবে তারা কখনও পথভ্রষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
৩. নামাজ পর্দা করার শিক্ষা দেয়। আল্লাহতায়ালা নামাজে সতর ঢাকা ফরজ করে দৈনিক পাঁচবার প্রতিটি নারী-পুরুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তোমাদের ওপর পর্দার বিধান মেনে চলা ফরজ। ব্যক্তিজীবনের শান্তি, সামাজিক জীবনের শৃঙ্খলা ও পরলৌকিক জীবনের সফলতা এই বিধান মেনে চলার মধ্যেই নিহিত। যে বা যারা নামাজ থেকে শিক্ষা না নিয়ে পর্দা প্রথাকে অবহেলা করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পঠিত বিষয় থেকে শিক্ষা। ক. সূরা ফাতেহা থেকে শিক্ষা, খ. অন্য সূরা থেকে শিক্ষা ও গ. তাসবিহ পড়া থেকে শিক্ষা।
ক. সূরা ফাতেহা থেকে শিক্ষা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কমপক্ষে ৩২ বার সূরা ফাতেহা পাঠ করা হয়- এর শিক্ষা অসংখ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
১. একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার ও শুধু তার কাছেই সাহায্য চাওয়ার অঙ্গীকার করা।
২. আল্লাহর পছন্দনীয় ও তার পক্ষ থেকে পুরস্কৃত মানুষের পথে চলার তওফিক কামনা করা।
খ. কোরআনের অন্য সূরা থেকে শিক্ষা। নামাজে ছোট আয়াত হলে কমপক্ষে তিন আয়াত পরিমাণ তেলাওয়াত করার আদেশ দিয়ে পুনঃ পুনঃ কোরআন তেলাওয়াত তথা বছরে একবার পূর্ণ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে করে কোরআনের সকল আদেশ-নিষেধ বান্দার সামনে আসবে।
গ. তাসবিহ থেকে শিক্ষা। নামাজী প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কমপক্ষে ২৯৯ বার ‘সুবহান’ তাসবিহটি পাঠ করেন। আল্লাহতায়ালা বান্দাকে নামাজে দাঁড় করিয়ে প্রতিদিন তার মুখ থেকে কমপক্ষে ২৯৯ বার ‘সুবহান’ তাসবিহটি বের করে তার কাছ থেকে এই অঙ্গীকার আদায় করে নেন যে, সে শিরক করবে না। হাদিস শরিফে আছে, ‘বান্দা শিরকমুক্ত থাকলে অবশ্যই বেহেশত পাবে আর শিরকযুক্ত হলে নিঃশ্চিত দোজখে যাবে। -মুসলিম
ইমানের দাবী হলো- প্রতিটি মুসলমানকে নামাজী হতে হবে। নামাজ পরিত্যাগ করা কুফুরি। প্রতিটি নামাজীকে নামাজ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে অন্যথায় তার নামাজ ব্যর্থ হবে। আর ব্যর্থ নামাজীর পরিণতি জাহান্নাম বলে পবিত্র কোরআনের সূরা মাউনে ইরশাদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘন্টা, মার্চ ০২, ২০১৫