আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন কিছু মহৎ গুণ দিয়ে। এসব মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়।
একদিন বিকেলবেলা মহানবী (সা.) এক বনের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন বনের ধারে একটি তাঁবু। তাঁবুর সামনে গাছের সাথে একটি হরিণী বাঁধা। তিনি লক্ষ্য করলেন হরিণীটির চোখ দু’টো ছলছল করছে। দুধের ভারে বাঁট দু'টি পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তিনি বুঝতে পারলেন, নিশ্চয়ই হরিণীটির দুগ্ধপোষ্য বাচ্চা রয়েছে। হরিণীটি হয়তো সকালে ধরা পড়েছে। তাই বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেনি। তিনি শিকারিদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা হরিণীটিকে ছেড়ে দাও। কারণ মায়ের দুধ না পেয়ে কয়েকটি কচি বাচ্চা হয়তো প্রাণ হারাবে। ’
শিকারীরা ছিল ইহুদি। বনের পশুদের প্রতি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এমন দরদ দেখে তারা হরিণীটিকে ছেড়ে দিল এবং সবাই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।
আরেকদিনের ঘটনা। এক বালক পাখির বাসা থেকে দু’টি পাখির ছানা নিয়ে যাচ্ছিল। মা পাখিটা ছানার শোকে পাগলপ্রায় হয়ে বালকটির মাথার ওপর উড়াউড়ি করতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বালকটিকে বললেন, ‘ছানা দু’টি বাসায় রেখে এসো। দেখছ না, মা পাখিটি কেমন অস্থির হয়ে তোমার মাথার ওপর ওড়াউড়ি করছে!’ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথা শুনে বালকটি ছানা দু’টিকে বাসায় রেখে এলো। ছানা দু’টিকে পেয়ে মা পাখিটি আদর সোহাগ করতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রাসূল (সা.)-এর আনন্দের আর সীমা রইল না।
জীবে দয়া সম্পর্কিত এমন বহু ঘটনা রয়েছে। হাদিসে আছে, এক দুশ্চরিত্র মহিলার জন্য বেহেশতের ফায়সালা হয় তৃষ্ণার্ত একটি কুকুরকে পানি পান করানোর বিনিময়ে, অন্যদিকে অত্যন্ত ইবাদতগোজার এক মহিলাকে দোজখে দেয়া হয় একটি বিড়ালকে কষ্ট দেয়ার কারণে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহতায়ালা মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্ট প্রতিটি জীবের ওপর দয়া করা মানুষের ইমানি দায়িত্ব। সমাজের অনেকেই পশু-পাখিসহ বিভিন্ন জীব-জন্তুকে কষ্ট দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। হাদিসে জীব-জন্তুর ওপর দয়া করার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সজীব বস্তু ও প্রাণীর উপকার করাতে সওয়াব রয়েছে। তাই আসুন, মানুষ হিসেবে আমরা মানবিক হই, জীব-জন্তু ও পশু-পাখির প্রতি দয়াশীল হই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘন্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
এমএ/