ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

অস্ট্রিয়ায় মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বেড়েছে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৫
অস্ট্রিয়ায় মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বেড়েছে

ইউরোপে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র হয়েও অস্ট্রিয়া এক শ’ বছর আগে (১৯১২ সালে) ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে (তখন) বসবাসকারী কয়েক হাজার মুসলিমকে দেশের নাগরিকত্বে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এক শ’ বছর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্ট সেই আইনে (ইসলামিক ল’) সংশোধনী এনে অস্ট্রিয়ায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, এমন করে ইসলাম বিকাশের সুযোগ সম্প্রসারিত করল।



এর ফলে অস্ট্রিয়ার রাজনীতিকেরা মনে করছেন, আইনের এই সংশোধনগুলো অস্ট্রিয়ায় মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করবে এবং জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করার বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

অস্ট্রিয়ায় ইসলামিক ল’ পাস হয়েছিল ১৯১২ সালে। ১৯০৮ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য মুসলিম অধ্যুষিত বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা দখল করে নিলে সেখানকার মুসলিম অধিবাসীরা খ্রিস্টানদের শাসনের অধীনে চলে আসে। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হলে মুসলিমরা ব্যাপকভাবে নিজ নিজ দেশে ফিরে যায় এবং মাত্র কয়েক শ’ মুসলিম অস্ট্রিয়াতে বাস করতে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইসলামিক ল’ বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০১৪ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে, ২০১২ সালের লোক গণনায় অস্ট্রিয়াতে বসবাসকারী মুসলিমদের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখের অধিক বলে পাওয়া যায়, যা অস্ট্রিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ।
বেশ কয়েক বছর ধরে মুসলিম নেতারা সরকারের কাছে দেন-দরবার করে আসছিল যে, প্রয়োজনীয় আইনের সুরক্ষা না থাকায় অস্ট্রিয়ায় মুসলিমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকরূপে বসবাস করছে। তাদের দাবি পূরণে ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রীয় পার্লামেন্ট ‘ইসলামিক ল’-তে কিছু সংশোধনী এনে আইনটিকে যুগোপযোগী করল।

ওই সংশোধনীসমূহে ইসলামের সরকারি স্ট্যাটাস নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মুসলিমদের অধিকারগুলো সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে ইসলামি আচার-আচরণ কিংবা মুসলিম উৎসব পালনের জন্য মুসলিমরা তাদের কর্মস্থল থেকে ছুটি নিতে পারবে। এই অাইনবলে হাসপাতালে, কারাগারে এবং সশস্ত্রবাহিনীতে অবস্থানকালে মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুশাসনগুলো পালন এবং হালাল খাবার আহার করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে ইমাম প্রশিক্ষণের জন্য ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইসলামি অধ্যয়ন প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।

সংশোধনীতে অস্ট্রিয়ার কোনো ইসলামি গ্রুপের দেশের বাইরে থেকে অর্থায়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অস্ট্রিয়ার কোনো মসজিদে বিদেশী ইসলামি ধর্মনেতার নেতৃত্ব প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সব ইমামকে জার্মান ভাষায় কথা বলতে হবে এবং মুসলিম ইমামদের ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি প্রোগ্রাম থেকে উত্তীর্ণ হয়ে অথবা সমমানের অন্য কোনো প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হয়ে তাদের ‘পেশাগত যোগ্যতা’ প্রমাণ করতে হবে। সংশোধনীতে অস্ট্রীয় আইনকে শরিয়া আইনের ওপরে স্থান দিয়ে বলা হয়েছে মুসলিম সংগঠনগুলোকে ‘অস্ট্রীয় সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে’, অন্যথায় সেগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হবে। ‍

এক শতাব্দী আগে অস্ট্রিয়া সরকারিভাবে ইসলামকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন মুসলিমদের রাষ্ট্রীয় সমাজের সাথে সংহত করার পথে অস্ট্রিয়া হয়তো আবার দিশারী হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি অস্ট্রিয়ায় মুসলিমদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।
-অন ইসলাম অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘন্টা, জুন ০৪, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।