ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ক্ষমা মানুষকে মহৎ করে

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
ক্ষমা মানুষকে মহৎ করে

জুলুম-অবিচার আর অত্যাচার-নির্যাতনে যখন কেউ অসহায়ত্বের প্রান্ত সীমায় এসে যায় তখন সে কি করবে? রাগে অধৈর্য হয়ে প্রতিশোধ পরায়ণতার পথে অগ্রসর হবে? না, ধৈর্যের বাঁধ অতিক্রম করে অভিশাপ দেবে, নাকি মনের জ্বালা মিটাবে আত্মহুতি দিয়ে? আবেগাক্রান্ত মানুষ কিন্তু এ ধরণের কিছু একটা করে বসে। কিন্তু তাতে না অত্যাচারীর শিক্ষার কোনো সুযোগ আসে; না অত্যাচারিত ব্যক্তির আত্মার তৃপ্তি মেলে।

আর এমন কাজ আল্লাহতায়ালাও পছন্দ করেন না। বরং আল্লাহ চান মুমিনের চারিত্রিক মহিমা ক্ষমার গুণে সুশোভিত হয়ে উঠুক। যার সৌরভে একদিন অত্যাচারির আত্মোপব্ধির সুযোগ আসবে, অন্যদিকে অত্যাচারিত ব্যক্তিও সব ধরনের বেদনা হতে মুক্তি পাবে।

ইসলাম মনে করে, ক্ষমার মাধ্যমে জান্নাত নিকটবর্তী হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমালাভের জন্য প্রতিযোগিতা করো আর প্রতিযোগিতা করো সেই জান্নাতের জন্যে যার বিশালতা আসমান-জমিনের বিশালতার সমান, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্যে। (জান্নাতের উত্তরাধিকারি ভাগ্যবান তারা) যারা স্বচ্ছল কি অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় নিজেদের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আর যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেয়। (এটা সৎ মানুষের গুণ) আর সৎ মানুষদেরকে সবসময় আল্লাহ ভালোবাসেন। -সূরা আল ইমরান : ১৩৩-১৩৪

এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় দান করলে সম্পদ কমে না, আর ক্ষমার দ্বারা আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন। -সহিহ মুসলিম

হজরত রাসূলে কারিম (সা.) ছিলেন ক্ষমা ও উদারতার শ্রেষ্ঠ নমুনা। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে ক্ষমার মহৎ গুণটি যথার্থই আয়ত্ত্ব করতে পেরেছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তার জীবনে ক্ষমার গুণটি অধিক উজ্জ্বলতায় প্রতিভাত হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে একটি বিষেশ ঘটনা প্রনিধাণযোগ্য। একবার উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। অপবাদ রটনায় যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল তাদের একজন ছিল হজরত আবু বকর (রা.)-এর নিকটাত্মীয় মেসতাহ (রা.)। হজরত মেসতাহ (রা.) ছিলেন খুবই দরিদ্র। দৈনন্দিন জীবন যাত্রার সংস্থানও তার ছিল না। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) প্রতিমাসে তাকে খরচের জন্য নির্দিষ্ট হারে অনুদান দিতেন। নবী পত্মী এবং নিজের ঔরসজাত কন্যা হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর বিরূদ্ধে অপবাদ রটনায় তার ভূমিকার কথা জানতে পেরে হজরত আবু বকর (রা.) মেসতাহকে ভবিষ্যতে অনুদান না দেওয়ার শপথ করেন এবং তা বন্ধ করে দেন। তখন আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের আয়াত নাজিল করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা দ্বীনি মর্যাদা ও পার্থিব প্রাচুর্য্যের অধিকারী- তারা যেন এ মর্মে শপথ না করে যে তারা তাদের গরীব আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত এবং যারা আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করেছে তাদেরকে কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করবে না। বরং তাদের উচিত তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে দেয় এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে; তোমরা কি চাও না যে আল্লাহতায়ালা তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন; আল্লাহ তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। -সূরা আন নূর : ২২

লেখক: ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ



বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।