সৌদি আরবে আজ জিলহজ মাসের ৬ তারিখ। সে হিসেবে আর মাত্র ৩ দিন পর ৯ জিলহজ আরাফা দিবস।
এই দিন লাখ লাখ মানুষ একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করার জন্য এমন এক মরুভূমির ময়দানে সমবেত হয়ে থাকেন, যার ওপর খোদায়ি রহমতের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়ার অস্তিত্ব নেই। আরাফার বালুকাময় উঁচু-নিচু এই মরুভূমিতে অবস্থানরত সাদা-কালো, আরব-অনারব, আমির-গরিব, বাদশাহ-প্রজার ভেতর আজ নেই কোনো ভেদাভেদ। এখানে প্রভাব-প্রতাপশালী একজন বাদশাহকেও অন্যদের মতো আল্লাহর সামনে হাজির হতে হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে আগত লাখো মুসলমানকে এখানে একই পোশাক পরিহিত দৃষ্টিগোচর হয়। সবাই একই আল্লাহর তাসবিহ-তাহলিলে থাকেন রত। সবার মুখ থেকেই মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরীর স্লোগান বের হয় একটিই। ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ’
হজ এমন একটি ইবাদত, যা অন্যসব ইবাদত-বন্দেগি থেকে স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী। হজ আমাদের এটাই শিক্ষাই দেয় যে, মানুষের চূড়ান্ত ভালোবাসা একমাত্র সঠিক প্রাপক ওই সত্তা, যিনি আমাদের এবং এই বিশ্ব জগতের সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন। যদি ইবাদত-বন্দেগি করতেই হয়, তবে তারই করতে হবে। কোনো কিছু চাইতে হলে তার কাছেই চাইতে হবে, ডাকতে হলে তাকেই ডাকতে হবে, প্রার্থনা করতে হলে তার কাছেই প্রার্থনা করতে হবে।
কোরআন শরীফের বহু স্থানেই হজের তাত্পর্য-গুরুত্ব অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় উচ্চারিত হয়েছে। ইসলাম এই ইবাদতকে যে পরিমাণ গুরুত্ব দিয়েছে, তা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদিস থেকেই অনুধাবন করা যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘স্পষ্ট কোনো প্রয়োজন যাকে হজ থেকে বিরত করেনি কিংবা অত্যাচারী কোনো বাদশাহও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি কিংবা কোনো অসুস্থতাও এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। এ সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি যদি হজ না করেই মারা যায়, তাহলে সে ইহুদি হয়েও মারা যেতে পারে কিংবা খ্রিস্টান হয়েও মারা যেতে পারে। ’
বোখারি এবং মুসলিম শরিফে বর্ণিত আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে হজ আল্লাহর দরবারে মাকবুল হিসেবে গৃহীত হবে, তার প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। ’
হজের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য দ্বারা সুসমৃদ্ধ হয়। একটু চিন্তা করে দেখুন, যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর-বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছেন, তাকে কোন জিনিস এই সফরের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে? তার মাথায় কোন বোঝাটা ছিল যে, তাকে নিজ ঘর-বাড়ি ছাড়তে হবে? নিজের আবাসভূমির আরাম-আয়েশকে কোরবানি দিয়ে, হাজার হাজার মাইলের কষ্টকর রাস্তা অতিক্রম করে, মরুভূমির উঁচু-নিচু পথ পাড়ি জমানোর কী প্রয়োজনটা ছিল তার? অথচ যেখানে সে এত কিছু ত্যাগ করে তীব্রবেগে ছুটে আসছে বাহ্যিকভাবে অন্তর আকর্ষণের তেমন কিছুই তো নেই সেখানে। চিন্তা করলে দেখা যাবে একজন হজ পালনকারীকে এই সফরে আগ্রহী করার ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর প্রেম, আল্লাহর মহব্বত আর ভালোবাসার আকর্ষণ ছাড়া কোনো কিছুই এ পথের পথিক বানায়নি।
বাস্তবতা হলো এই সফরে কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত উৎসাহিত হতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তরে আল্লাহর প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি না হয়, তার রাসূলের ভালোবাসা, আখেরাতের চিন্তা এবং নিজের ফরজকে ফরজ হিসেবে সাব্যস্ত করার দায়িত্ববোধ জাগরিত না হয়।
[প্রিয় পাঠক বাংলানিউজের আয়োজনে গ্রামীণ ফোন থেকে আপনি পেতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ইসলামী তথ্যসেবা। আজ রয়েছে অভিশপ্ত শয়তান প্রসঙ্গে আলোচনা। আপনি চাইলেই তা শুনে নিতে পারেন। এ জন্য গ্রামীণ ফোনের যেকোনো নম্বর থেকে ডায়াল করতে হবে ৮৮৭৭ নম্বরটি। আপনি সাবস্ক্রাইব করে দিনভর শুনতে পারেন এই আয়োজন। সঙ্গে রয়েছে সবশেষ নিউজ আপডেট, রাশিফল, ট্রাফিক আপডেটও। আর সারাদিনের সব তথ্যের জন্য খরচ মাত্র ১ টাকা। এখনই সাবস্ক্রাইব করতে ডায়াল করুন ৮৮৭৭। ]
হজের সফরে একটি এমন পর্যায় অতিবাহিত হয়, যেখান থেকে ইহরাম ছাড়া অতিক্রম করা জায়েজ নয়। এখানে পৌঁছে হজের এই মুসাফির নিজের বাহ্যিক শোভাবর্ধন, পোশাকের যাবতীয় সৌন্দর্য পরিহার করে, সুগন্ধি বর্জন করে, সেলাই করা কাপড় ছেড়ে দিয়ে নতুন এক জগতের মুসাফির বনে যায়। এখন আর তার জন্য মাথা ও মুখ ঢাকা জায়েজ নেই, কোনো প্রাণী শিকারের অনুমতি নেই, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপনেরও কোনো সুযোগ নেই, এখন সে মাত্র দুটি সাদা কাপড়ে ঢাকা, যা এই কথার ঘোষণা করছে যে, এতক্ষণ পর্যন্ত সে যা কিছুই করেছে এখন সেসব থেকে একেবারে সম্পর্ক ছিন্ন করে একমাত্র আল্লাহতায়ালার দরবারের ভিখারী হয়ে গেছে।
ইহরামের এই ফকিরি অবস্থায় ওই মুসাফিরের অন্তরে নম্রতা, অক্ষমতা, দুর্বলতা, অসামর্থ্যতা, অসহায়ত্বতা আর বিনয়ের সৃষ্টি করে দেয়। গর্ব-অহঙ্কার, লৌকিকতার মর্মমূলে আঘাত হেনে তাকে চুরমার করে দেয়া হয়। এভাবে যখন আল্লাহর বান্দা তার সফরের দীর্ঘ পথপরিক্রমা অতিক্রম করে তার পবিত্র ঘরে পৌঁছে যায়। তখন আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া ছাড়া তার অন্য কিছু হুঁশই থাকে না। এখানে নিজের ব্যক্তিত্ব, অস্তিত্ব ও গর্ব-অহঙ্কার সবকিছু ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে ওই ঘরের চার পাশে পাগলের মতো চক্কর মারতে থাকে, ঘুরতে থাকে। তার পাথরগুলোকে চুমো দিতে থাকে। তার চৌকাঠ ধরে অঝোরে কান্নাকাটি করতে থাকে। সেটা কী আর বলে বা লিখে শেষ করা যাবে?
হজের এসব আমলে দ্বারা এ কথাই প্রমাণ হয় যে, এর প্রতিটি কাজেই উত্তম বৈশিষ্ট্য, উত্তম চরিত্র এবং আদর্শ মানুষ গঠনের অনুপম নিদর্শন রয়েছে। মানবজাতি এসব বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে নিজেকে আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এমএ/
** হজের জন্য প্রস্তুত মক্কা, নেই রাজনীতির অনুমতি
** তালবিয়া পাঠ ও হাজরে আসওয়াদে চুমুর ফজিলত
** ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই চলবে হজ অ্যাপ
** হজ পালনের সময় রাজনীতি পরিহার করুন
** সৌদি আরব পৌঁছেছেন আট লাখ হজযাত্রী
** হজ কবুলের জন্য পালনীয় বিষয়সমূহ
** ১২০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে কাবার নতুন গিলাফ
** এক হাজার ফিলিস্তিনিকে হজ করাবেন সৌদি বাদশাহ সালমান
** হজ : তাওহিদবাদী বিশ্বমানবের ঐক্য
** পবিত্র কাবা শরিফের ক্যালিগ্রাফি
** পবিত্র কাবা নির্মাণের সময় যেসব দোয়া কবুল হয়েছিল
** ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কী হজপালন করতে পারবেন?
** প্রিয়নবীর হাতেগড়া যে মসজিদ
** হজ পালনের সময় সেলফি তোলা হারাম
** এবার মাত্র ২ লাখ সৌদি বাসিন্দা হজের সুযোগ পাচ্ছেন
** তিন মিটার উঁচুতে ভাঁজ করে রাখা হলো কাবার গিলাফ
** হাজিদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে মসজিদে হারামের দুই শতাধিক দরজা
** পৃথিবীর বড় ঘড়ি মক্কা ঘড়ি
** হজের সময় দোয়া কবুলের স্থানসমূহ
** হজের কোরবানির পশুর দাম নির্ধারণ
** শারীরিকভাবে সামর্থ্য থাকা অবস্থায়ই হজে যাওয়া উচিত
** কবুল হজের বিনিময় নিশ্চিত জান্নাত
** রিকশা চালিয়ে হজের টাকা জোগাড়
** পবিত্র কাবা শরিফের মর্যাদা
** হজে যাওয়ার আগে বান্দার হক পূরণ করে যেতে হবে
** হজের সফরে মৃত্যুবরণকারীর মর্যাদা
** পকেটমারতে হজে যাওয়া, এ লজ্জা রাখি কোথায়?
** হারাম শরিফে নামাজ ও তাওয়াফের ফজিলত
** হজের সফরে খরচের প্রতিদান ব্যয় অনুপাতে প্রদান করা হবে
** হজযাত্রীদের জন্য যা জানা জরুরি
** মক্কা শরিফের দর্শনীয় কিছু স্থান
** কবুল হজের জন্য যে আমল বেশি বেশি করা দরকার
** হজ ফরজ হওয়ার শর্ত ও প্রকারসমূহ
** বদলি হজ আসলে কী?