মক্কার অধিবাসীরা ছিল হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নবুওয়তের প্রতি বিশ্বাসী ও তার শরিয়ত অনুসারী। ইবরাহিমী শরিয়ত মতেও নিষিদ্ধ মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ এমনকি জন্তু শিকার নিষিদ্ধ ছিল।
মোটকথা, তারা মহান আল্লাহর চিরাচরিত নিয়মের বিরুদ্ধে বছরের যেকোনো চার মাসকে তাদের সুবিধামতো নিষিদ্ধরূপে গণ্য করে নিত। যে মাসকে ইচ্ছা, জিলহজ বা রমজান নামে অভিহিত করত। এমনকি অনেক সময় যুদ্ধবিগ্রহে ১০টি মাস অতিবাহিত হলে বর্ষপূর্তির জন্য আরও কয়েকটি মাস বাড়িয়ে দিয়ে বলত- এ বছরটি হবে চৌদ্দ মাস সম্বলিত। অতঃপর অতিরিক্ত চার মাসকে সে বছরের নিষিদ্ধ মাসরূপে গণ্য করত।
মূলত তারা দ্বীনে ইবরাহিমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে বছরের চারটি মাসের সম্মান করে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত। কিন্তু আল্লাহতায়ালা মাসের যে ধারাবাহিকতা রেখেছেন, তাতে নানা হেরফের করে নিজেদের স্বার্থ পূরণ করে নিত। ফলে সেসময় কোন মাস প্রকৃত রমজান বা শাওয়াল এবং কোন মাস প্রকৃত জিলকদ বা রজব তা নির্ধারণ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছিল।
অষ্টম হিজরি সনে যখন মক্কা বিজিত হয় এবং নবম সালে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) হজরত আবু বকর (রা.) কে হজের মৌসুমে কাফেরদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ঘোষণার জন্য পাঠিয়েছিলেন, সে মাসটি প্রকৃত প্রস্তাবে যদিও ছিল জিলহজ মাস, কিন্তু জাহেলি যুগের সেই পুরনো প্রথা অনুসরণে তা জিলকদই সাব্যস্ত হলো এবং সে মতে তাদের সে বছরের হজের মাস ছিল জিলহজের স্থলে জিলকদ।
অতঃপর দশম হিজরি সনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের জন্য মক্কায় আগমন করেন, তখন অবলীলাক্রমে এমন ব্যবস্থাও হয়ে যায় যে, প্রকৃত জিলহজ জাহিলি হিসাব মতেও জিলহজই সাব্যস্ত হয়। এ জন্য মহানবী (সা.) মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খুতবায় ইরশাদ করলেন, ‘কালের চক্র ঘুরেফিরে সেই নিয়মের ওপর এসে গেল, যার ওপর আল্লাহ আসমান ও জমিনের সৃষ্টি করেন। ’ অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে যে মাসটি জিলহজ তা জাহিলি প্রথানুসারে জিলহজই সাব্যস্ত হয়ে গেল। -মাআরিফুল কোরআন
জাহিলি প্রথায় মাস গণনার এই রদবদল ও বিনিময়ের ফলে কোনো মাস বা দিন বিশেষের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইবাদত ও শরিয়তের হুকুম আহকাম পালনেও বিস্তর জটিলতা সৃষ্টি হতো। যেমন- জিলহজের প্রথম দশকে রয়েছে হজের আহকাম, দশই জিলহজে কোরবানি, দশই মহররমের রোজা, মাহে রমজানের রোজা এবং বছরের শেষে জাকাত আদায়ের হুকুম প্রভৃতি।
মুসলিম বিশ্বে চাঁদের হিসাবে অনেক ইবাদত-বন্দেগি, আমল অনুশাসন পালিত হওয়ায় হিজরি সনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মূলত এসব কারণেই প্রয়োজন হয়ে পড়ে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও পরিকল্পিত সন গণনার হিসাব। আর সেটাই হলো, হিজরি সন।
সুতরাং হিজরি সনকে শুধু তারিখ গণনার জন্য যতটা মনে রাখা দরকার, তারচেয়ে বেশি দরকার ইবাদত-বন্দেগি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদনের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এমএ/
** স্বাগতম হিজরি নববর্ষ ১৪৩৭
** পবিত্র আশুরা ২৪ অক্টোবর