ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

পবিত্র আশুরা শনিবার

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
পবিত্র আশুরা শনিবার ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আজ শনিবার, ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। আরবিতে আশারা মানে ১০।

তাই ১০ মহররম আশুরা নামে পরিচিত। মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি শোক ও বেদনার। আশুরার দিনে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ দিনে আল্লাহতায়ালা তার বহু কুদরত প্রকাশ করেছেন।

আশুরার গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন। যেমন, এদিন হজরত ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইদরিস (আ.) কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলেন, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।

আশুরার দিবসের একটি বিশেষ ঘটনা নবী দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) শাহাদত। মুসলমানদের জন্য এই শোক সহজ নয়। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদীতীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতের প্রেক্ষাপট ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারাবালার ঘটনার তাৎপর্য এবং গুরুত্ব মানবজীবনের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। কিন্তু প্রচলিত লোকবিশ্বাস, তৎকালীন ঘটনার প্রেক্ষাপট, ইতিহাসের ধারা বিবরণী ও হাদিসের শিক্ষা- এসবগুলোর সমন্বয় করা খুব কষ্টসাধ্য বিষয়।

হজরত মুয়াবিয়া (রা.) হজরত মুগির (রা.)-এর পরামর্শে নিজ পুত্র ইয়াজিদকে খেলাফতের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। তার নির্বাচন যথাযথ ছিল না। আর সাধারণ মানুষও শাসক হিসেবে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কে চেয়েছিল। অন্যদিকে ইসলামি শরিয়ায় বংশানুক্রমিক শাসনব্যবস্থা স্বীকৃত নয়। তাই ইয়াজিদের কাছে বাইয়্যাত (আনুগত্য স্বীকার) নিতে অস্বীকৃতি জানান হজরত হোসাইন (রা.)।

ইয়াজিদের শাসনের প্রতিবাদে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) মদিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। পরে মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশে রওনা হন। বাইয়্যাত নিতে বাধ্য করতে উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য পাঠান ইয়াজিদ। সেনাবাহিনী হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কাফেলাকে ফোরাত নদীতীরে কারবালা প্রান্তরে অবরোধ করে।

ইয়াজিদের সৈন্যদের অবরোধে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শিবিরে খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। নারী-শিশু সবাই পানির জন্য কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম ইয়াজিদ বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। অসম যুদ্ধে ইমাম হোসাইন (রা.) তার ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাত বরণ করেন। সিমার ইবনে জিলজুশান কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হোসাইনকে (রা.) শহিদ করে।

কারবালার শোকের দিনের অনেক আগেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবদ্দশায় আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হাদিসে বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসূলকে ১০ মহররম রোজা পালন করতে দেখেছি। আর বলতে শুনেছি, রমজানের রোজা ছাড়া অন্য যে কোনো সময়ের রোজার চেয়ে উত্তম মহররমের রোজা। '

আশুরা উপলক্ষে মুসলমানরা ১০ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে আগে বা পরে দুটি রোজা রাখেন।

তবে শিয়া সম্প্রদায় নিজেকে রক্তাক্ত করার রীতি, দলবেঁধে ক্রন্দন ও মাতমের মাধ্যমে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতকে স্মরণ করে। শোক মিছিল ও তাজিয়ায় মিছিল বের করে তারা। পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকা থেকে আশুরা উপলক্ষে বের করে তাজিয়া মিছিল। সেই সতেরো শতক থেকেই ঢাকার তাজিয়া মিছিল বিখ্যাত।

আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা আশুরার শিক্ষায় দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আশুরা উপলক্ষে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। অনলাইন নিউজপোর্টাল ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।