সূরা মায়েদা অবতীর্ণ হয়েছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের অনেক পরে। ১২০ আয়াত বিশিষ্ট এ দীর্ঘ সূরাটি মুমিন জীবনের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
অঙ্গিকার রক্ষার কঠোর নির্দেশ দিয়ে সূরা মায়েদা শুরু হয়েছে। এরপর সাহায্য ও সহযোগিতার মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। হারাম প্রাণীর একটা তালিকা এখানে আছে।
স্বাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে যে কোনো মূল্যে ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত রাখাকে ফরজ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সত্য স্বাক্ষ্যকে তাকওয়া পরহেজগারির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাক্ষ্য প্রদান ইসলামের একটি ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিভাষা।
এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, আদালতের সামনে মামলার ব্যপারে স্বাক্ষ্য দেওয়া, পরীক্ষার্থীকে নম্বর দেওয়া, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিসি সনদ ও মেডিকেল রিপোর্টসহ যে কোনো ধরণের সনদ-সার্টিফিকেট দেওয়া, সত্যায়ন করা, নির্বাচনে ভোট প্রদান ইত্যাদি সবকিছুই স্বাক্ষ্য প্রদানের অন্তর্ভূক্ত।
এ সূরায় চুরির শাস্তির বিধান ঘোষণা করা হয়েছে। ওই শাস্তি হলো হাত কাটা। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা, চুরি করলেই ইসলাম হাত কেটে দেওয়ার কথা বলেছে। বিষয়টি অাসলে এমন নয়। চুরি করলেই হাত কেটে দিতে হবে এটি ভিত্তিহীন ও ভ্রান্ত ধারণা।
হাত কাটার শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সব চুরির ক্ষেত্রে ইসলামে হাত কাটার শাস্তি প্রযোজ্য নয়। অন্যের মাল হেফাজতকৃত ও সংরক্ষিত স্থান থেকে বিনা অনুমতিতে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় চুরি বলা হয়। তাই শর্তের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই চুরির শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না। যেমন সংরক্ষিত স্থান শর্ত থাকায় জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে (মসজিদ, ঈদগাহ, পার্ক, ক্লাব, স্টেশন, রেল, জাহাজ, যাত্রী ছাউনি, যাত্রী বিশ্রামাগার ইত্যাদি স্থানে) কেউ মাল চুরি করলে তার হাত কাটা হবে না। গাছের ফল, মধু, খেতের ফসল চুরি করলে হাত কাটা যাবে না।
গৃহের প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত চাকর, মিস্ত্রি, বন্ধু ঘর থেকে কোনো কিছু নিয়ে গেলে তারও হাত কাটা যাবে না। পকেটমার, ছিনতাইকারী ও প্রতারণা করে সম্পদ আত্মসাৎকারীর হাত কাটা যাবে না। গচ্ছিত সম্পদ অস্বীকার করে আত্মসাৎ করলে হাত কাটা যাবে না। যৌথ মালিকানাধীন মালের কোনো শরিক- যদি সে মাল থেকে চুরি করে তারও হাত কাটা যাবে না। রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে চুরি করলে হাত কাটা যাবে না। উপরোক্ত সবক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা বিচারক কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রদান করা হবে। তা ছাড়াও হাত কাটার দন্ড প্রয়োগের জন্য দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী পুরুষের স্বাক্ষ্য প্রদান করতে হবে।
ঘুষের সমালোচনা করে এটা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ঘুষকে উপহার, বখশিশ, হাদিয়া, অফিস খরচ, সম্মানী কিংবা স্পিড মানি ইত্যাদি যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন- তা অবৈধ ও অপবিত্র; এটা নাপাক ও হারাম।
মানবতার ধর্ম ইসলাম- জননিরাপত্তার স্বার্থে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘুষকে হারাম করেছে। ঘুষের উৎসমুখ বন্ধ করতে যেয়ে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, শাসক, বিচারককে প্রদত্ত উপহারকেও হাদিসে ঘুষ আখ্যায়িত করা হয়েছে। এভাবেই আল্লাহতায়ালা এ সূরা নাজিলের মাধ্যমে দুর্নীতির মূলে আঘাত করেছে।
সূরা মায়েদায়া মানুষের এসব বিষয় আলোচনার পাশাপাশি ব্যক্তি চরিত্রের উন্নয়ন থেকে শুরু করে পরিবার ও সমাজের উন্নতি সাধনের লক্ষে সব ধরনের মাদক, জুয়া, মূর্তিপূজা এবং ভাগ্য নির্ণয়কে হারাম ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৫
এমএ/