সিরাতে ইবনে হিশাম। সিরাত শাস্ত্রের অনবদ্য একটি গ্রন্থ।
এই মহান লেখক বসরায় জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই লালিত-পালিত হন। এরপর তিনি মিসরে গমন করেন। সেখানে দ্বিতীয় হিজরির শেষাংশ এবং তৃতীয় হিজরির প্রথার্ধ অতিবাহিত করেন। মিসরে অবস্থানকালে তিনি ইমাম শাফেয়ি রহমাতুল্লাহি আলাইহির সান্নিধ্য লাভ করেন। যা ছিলো আব্বাসীয় খেলাফতের বিকাশকাল। এ সময় মুসলিম বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি ও বিকাশ ঘটে। ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার ন্যায় সিরাতও একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্রে পরিণত হয়।
এ গ্রন্থটি মূলত সিরাতে ইবনে ইসহাকের সংক্ষিপ্তরূপ। ইবনে হিশাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি সিরাতে ইবনে ইসহাক থেকে (নিজস্ব মূলনীতির আলোকে) অপ্রয়োজনীয় ও ভিত্তিহীন বিষয়গুলো পরিহার তাকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করেন। যা বর্তমানে সিরাতে ইবনে ইসহাক নামে খ্যাত। কোথাও কোথাও কিছু সংযোজন ও সমালোচনাও করেছেন। আবার কখনো অন্যান্য মনীষীর বর্ণনার সঙ্গে ইবনে ইসহাকের বর্ণনার তুলনা বা যাচাই-বাছাইও করেছেন। ওই গ্রন্থের সংকলনে তার অনুসৃত পদ্ধতির কিছু বর্ণনা তিনি গ্রন্থের শুরুতেই দিয়েছেন। তিনি সৃষ্টির সূচনা থেকে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশধরদের ইতিহাস পর্যন্ত যা কিছু সিরাত সংশ্লিষ্ট মনে করেননি এবং যেসব কবিতার সঙ্গে সিরাতের যোগসূত্র খুঁজে পাননি তা তার সংকলন থেকে বাদ দিয়েছেন।
সিরাতে ইবনে ইসহাকের সংক্ষিপ্তকরণের ক্ষেত্রে ইবনে হিশাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার শিক্ষক আবু মুহাম্মাদ যিয়াদ ইবনে আবদুল মালেক আল বুকায়ির মধ্যমপন্থা গ্রহণ করেন এবং তাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সেসব বিষয় বাদ দিযেছি; যার বর্ণনা অনেকের কাছে অপ্রীতিকর লাগবে অথবা যা বুকায়ি নিজের বর্ণনা দ্বারা আমাদের কাছে প্রামাণ্য বলে সাব্যস্ত করেননি। ’
সিরাতে ইবনে হিশামে আলোচিত বিষয়গুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। তাহলো-
ক. জাহিলি যুগের ইতিহাস। যেখানে তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশসহ অন্যান্য আরব গোত্রগুলোর ইতিহাস এবং মক্কা ও ইয়ামানের ইতিহাস আলোচনা করেছেন।
খ. মক্কা ও মদিনায় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও ইতিহাস।
গ. হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুদ্ধ ও সামরিক অভিযানসমূহ।
গ্রন্থটি প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সিরাত পাঠকদের নিকট একটি সাধারণ গ্রহণীয় এবং প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা ও কাজ করেন অথচ সিরাতে ইবনে হিশামের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটেনি এবং তা থেকে উপকৃত হয়নি এমনটি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে খাল্লিকান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘ইবনে হিশামই ইবনে ইসহাকের সংগৃহীত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামরিক ও সাধারণ জীবনোতিহাসসহ গোটা জীবনোতিহাসকে একত্রিত, সংকলিত ও সংক্ষিপ্ত করেছেন। এটাই বর্তমানে সিরাতে ইবনে হিশাম নামে পাঠক সমাজের হাতে শোভা পাচ্ছে। ’
‘আস সীরাতুন-নাবাবিয়্যাহ’ নামক সিরাতশাস্ত্রের এই মূল্যবান সম্পদটি বাংলাভাষী পাঠকদের জন্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ‘সীরাতুন্নবী (সা.)’ নামে গ্রন্থটির প্রথম প্রকাশ ১৯৯৪ সালে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ মোট ৪ খণ্ডে বইটি প্রকাশ করেছে। তবে তারও পূর্বে ইসলামিক সেন্টার বাংলাদেশ কর্তৃক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশের পর থেকে তারা এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি সংস্করণ প্রকাশ করে বাজারজাত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এমএ
** সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা নিয়ে কিছু কথা
** ইতিহাসের প্রথম সিরাতগ্রন্থ
** মুসলমানদের স্বমহিমায় জেগে ওঠার দিন
** নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন
** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে
** সিরাত কাকে বলে?
** নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
** ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
** নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস