ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রিয় নবীর যুগান্তকারী উদ্যোগসমূহ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬
শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রিয় নবীর যুগান্তকারী উদ্যোগসমূহ ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে আজ। এ বছর বিশ্বব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী হিসাবে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

এবারের প্রতিপাদ্য হলো- ‘অতীতকে জানবো, আগামীকে গড়বো। ’

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ‘দেশে বর্তমানে ৪৫ লাখ বয়স্ক নিরক্ষর রয়েছেন। তাদের সাক্ষর জ্ঞান দেওয়ার জন্য তিন বছর মেয়াদি ৫৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সাক্ষর জ্ঞানের হার ৭১ শতাংশ। ’

বয়স্ক শিক্ষার দিকটি বরাবরই আমাদের দেশে উপেক্ষিত। ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোনো বয়সের প্রত্যেক নর-নারীর জন্য শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন ফরজ। আমরা জানি, সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। দক্ষ ও সুশিক্ষিত জনশক্তি দেশের সম্পদ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ইত্যাদি ক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নয়নের জন্য সমাজ থেকে ধর্মীয় নিরক্ষরতা দূর করা অত্যাবশ্যক।

ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে শেষ নবীর প্রতি প্রথম বাণী ছিলো শিক্ষা বিষয়ক। ইরশাদ হয়েছে, ‘পড়, তোমার রবের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। ’ এ ছাড়া আল্লাহতায়ালা প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবী এবং রাসূলদের শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেই তাদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনাকে আমি এমন সব জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি যা আপনিও জানতেন না এবং আপনার পূর্বপুরুষও জানতো না। ’ –সূরা আল আনআম : ৯২

শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মহান শিক্ষকরূপে এসেছিলেন। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান বা সেনাপতির পরিচয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরেননি। বরং তিনি নিজিকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্বভরে বলেছিলেন, ‘আমি মানবতার জন্য শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। ’

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে আমরা আরও দেখতে পাই, ‘জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক নর-নারীর ওপর ফরজ হিসেবে বিবেচ্য। ’ নবী করিম (সা.) জ্ঞানান্বেষণে যুক্ত হতে এত বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন যে, তার বাণী শিক্ষাদর্শনের কালোত্তীর্ণ উপমারূপে গণ্য হয়েছে। তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘রাতের কিছু সময় জ্ঞানের অনুশীলন করা সারারাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। ’

এভাবেই মহানবী নিরক্ষরতামুক্ত সমাজ গঠন, শিক্ষা ও জ্ঞানদক্ষতার উন্নয়নের ধারণা গোটা মানবজাতির সামনে তুলে ধরে শিক্ষার মৌলিক নীতিমালা পেশ করেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়ত লাভের পর তিনি মক্কা নগরীর সাফা পর্বতের পাদদেশে ‘দারুল আরকাম’ নামেও একটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন। বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এটিই ইতিহাসের সর্বপ্রথম শিক্ষালয়।

মদিনায় যাওয়ার তিনি ‘কু‍বা’ নামক স্থানে সর্বপ্রথম একটি ক্ষুদ্র মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন ও পরে মদিনায় মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। এই মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সা.) আসরের নামাজের পরে অধিকাংশ সময় এখানে তিনি শিক্ষাদানে ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি নারীদের শিক্ষার জন্য তিনি সপ্তাহের একটি দিন ধার্য করে রেখেছিলেন। সে দিনটিতে নারীরা নির্ধারিত কক্ষে জমায়েত হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করত।

২য় হিজরিতে (৬২৩ খ্রিস্টাব্দ) মাকরামাহ ইবনে নাওফেল আল আনসারের ঘরে আবাসিক ধরনের ‘দারুল কারবাহ’ নামে একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। মদিনার দ্বিতীয় শিক্ষালয়টি হলো- হজরত আবু আইউব আনসারী (রা.)-এর বাসভবন। এখানে রাসূল (সা.) দীর্ঘ আট মাস শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

এভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষার আলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রাসূল (সা.) নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সাহাবিরা যেন কোরআন শরিফের আয়াত মুখস্থ করার সুযোগ পায় এ জন্য তিনি কোরআনের আয়াত তিন তিনবার আবৃত্তি করতেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় মদিনায় ৯টি মসজিদ ছিল। এসব মসজিদের প্রত্যেকটিতে নিকটবর্তী অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য সমবেত হতো। এখানে কোরআন শিক্ষা করা ছাড়াও ধর্মীয় নানা বিধান, হস্তলিপি, বংশ ইতিহাস, ঘোড়দৌড়, বিদেশি ভাষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি বিষয়ক পরামর্শ থেকে শুরু করে আত্মরক্ষার কৌশল বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো।

এক কথায় বলা যায়, বিশ্বব্যাপী একটি নিরক্ষরতা মুক্ত সমাজ গঠনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তার শিক্ষালয়ে ক্রীতদাস, আরব, অনারব, প্রতিপত্তিশালী, নিরীহ, সবাই এক কাতারে বিদ্যাশিক্ষা লাভের সমান সুযোগ ও মর্যাদা পেতেন। এভাবে রাসূলের শিক্ষায়তনে সার্বজনীনতার এ দিকটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এর মধ্যে প্রবেশাধিকার লাভের জন্য বর্ণ ও আকৃতি, দেশ ও রাষ্ট্র, জাতি ও বংশ এবং ভাষা ও উচ্চারণ ভঙ্গিমার কোনো প্রাচীর ছিলো না, বরং ওই সময়ে দুনিয়ার সব জাতি, সব বংশ, সব দেশ ও সব ভাষাভাষীর জন্য শিক্ষার দ্বার ছিল উন্মুক্ত।

রাসূলের (সা.) শিক্ষানীতির আরেকটি অনুষঙ্গ হচ্ছে- অমুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা। মুসলমানদের জন্য নেওয়া শিক্ষাকর্মসূচির পাশাপাশি তিনি অমুসলিমদের জন্যও শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। কেননা এটা ছিল তাদের প্রাপ্য মৌলিক অধিকার। হাদিসে আছে, অনেক ইহুদি রাসূলের (সা.) কাছে আসতো এবং ধর্মীয় জ্ঞানশিক্ষায় অংশগ্রহণ করতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।