ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

শান্তিময় পৃথিবী গড়তে বিশ্ববাসীর করণীয়

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬
শান্তিময় পৃথিবী গড়তে বিশ্ববাসীর করণীয়

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। একটি যুদ্ধবিহীন বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সাল থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব অনুসারে ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন থেকেই প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শান্তিকামি মানুষ দিবসটি পালন করে আসছে। এ বছরও অস্ত্র এবং সন্ত্রাসমুক্ত বিশ্বের দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হবে।

সুন্দর ও মানবিক জীবনযাপনের জন্য ‘শান্তি’ মানুষকে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে অদৃশ্যভাবে প্রেরণা যোগায়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেসব মৌলিক বিষয় বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার তন্মধ্যে ‘শান্তি’ অন্যতম।

সৃষ্টিগতভাবে মানুষ শান্তিপ্রত্যাশী হলেও, চাইলেই শান্তি মেলে না। তবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানবতার ধর্ম ইসলামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা ইসলামে কোনো শ্রেণি বৈষম্য নেই। ইসলাম শ্রেণিবিভেদকে সমর্থন করে না। আর এ কারণেই ধর্ম হিসেবে একমাত্র ইসলাম মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পেরেছে।

পৃথিবীর ইতিহাসের নানা বাঁকে, যুগে যুগে অনেকেই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ও কর্মসূচি দিয়েছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত শান্তি মেলেনি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শান্তি মিশন। তিনি মানুষের সামগ্রিক জীবনের প্রতিটি ধাপে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, সে চিন্তায় কর্মপদ্ধতি প্রদান করে গেছেন। সমকালীন মানুষসহ কিয়ামত অবধি আগত মানুষকে তিনি দিয়ে গেছেন কাঙ্ক্ষিত শান্তির সন্ধান। মানবজীবনে যেসব পথে অশান্তি আসতে পারে, তিনি সেগুলো বন্ধ করেছেন। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে-ই, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদে থাকে। ’

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে তিনি যেসব মূলনীতি ঘোষণা করেন, সেগুলো হলো- বর্ণ বৈষম্য নিষিদ্ধ করা, ন্যায়সঙ্গত বিচার করা, বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা, জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা, দরিদ্র-অভাবীদের ধনীদের সম্পদে অধিকার দেওয়া, বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা, জীবন-সম্মান ও সম্পদ রক্ষার নিশ্চয়তা, চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সহনশীল হওয়া। এখানে উল্লেখিত বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে মানা হলে আজও অশান্ত এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

আসলে সমস্যাসঙ্কুল এই বিশ্বে যেখানে মানুষ মৌলিক মানবিক অধিকারবঞ্চিত, দেশে দেশে হানাহানি ও যুদ্ধবিগ্রহ, ঝরছে নিরীহ মানুষের রক্ত, যেখানে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতপার্থক্য সহ্য করা হচ্ছে না, সেখানে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ এবং সর্বজনীন শিক্ষা অনুসরণই বহুপ্রত্যাশিত শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। গড়তে পারে নিরাপদ, সংঘাতমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ একটি পৃথিবী।

আমাদের মনে রাখতে হবে আজকের পৃথিবী আগামীর ভবিষ্যৎ। সুতরাং পৃথিবীতে যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। সমাজের শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে ইসলাম সব ধরনের অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাসী বোমা হামলা, সামরিক আগ্রাসন, জুলুম-নির্যাতন, অন্যের অনিষ্ট সাধন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও নরহত্যার বিরোধী। নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কখনোই প্রশ্রয় দেয় না।

ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরবে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকত। ইসলামের আগমনে রক্তপাত ও হানাহানির অবসান ঘটে। সব রকম চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই ইসলামপরিপন্থী। পৃথিবীতে অহেতুক হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ন্যায়-অন্যায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ-বিগ্রহে বহু দেশ ও জাতি ধ্বংসের পথে চলেছে। মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে এসব বন্ধ করা অতি জরুরি। যেখানে সংলাপ-সমঝোতা চলে না বা বন্ধ থাকে- সেখানেই শুরু হয় বলপ্রয়োগ, সংঘাত, রক্তপাত, সন্ত্রাস, সহিংসতা, হানাহানি, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ, ক্ষমতার মোহে দম্ভ-অহমিকা, প্রতিহিংসা প্রদর্শন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধ-বিগ্রহ। অথচ ইসলাম বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষে মানুষে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্য স্থাপনের মাধ্যমে একটি শান্তিময় পৃথিবী গড়ার তাগিদ দিয়েছে।

পৃথিবীবাসীর স্বস্তি, শান্তি, কল্যাণ ও প্রগতিকে ত্বরান্বিত এবং নিশ্চিত করার স্বার্থে শান্তিবাদী আঙ্গিকের একটি শুভতর প্রবর্তনার বিষয়টি অবশ্যই মানবিক বিবেচনায় রাখার উদ্যোগ চাই। এর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি হালের বিশ্ব নেতারা গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করে সে অনুযায়ী কর্মপন্থা নিধারণ করলেই কেবল এবারকার ‘শান্তি দিবস’ পালন স্বার্থক হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।