১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। ১৯৭৩ সালের এ দিনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৮তম অধিবেশনে ৩১৯০ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরবিকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
পৃথিবীর প্রায় ২৮ কোটি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা আরবি। আর ২৫ কোটি মানুষ আরবিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। ২৫টি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের দাপ্তরিক ভাষা আরবি। জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষার একটি আরবি। তাই যুগ ও বাস্তবতার নিরিখে আরবি ভাষা বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী একটি ভাষা।
অর্থনৈতিক বিবেচনায়ও আরবি ভাষা বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি ধরা হয় রেমিটেন্স। আর এ রেমিটেন্সের সিংহভাগই অর্জিত আরবি ভাষার দেশসমূহ থেকে। তাই দেশের রেমিটেন্স বাড়ানোর স্বার্থে, দেশের অর্থনীতিকে আর চাঙা করার স্বার্থে, দেশের আয় ও উন্নতির স্বার্থে আরবি ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
আমাদের দেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ জীবিকার তাগিদে আরব দেশগুলোতে যায়। অথচ আরবি ভাষার সঙ্গে তাদের পূর্ব কোনো সম্পর্ক থাকে না। আরবি ভাষার সঙ্গে মোটামুটি সম্পর্ক থাকলে এ লোকগুলো আরব দেশে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারত। নিজেদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা আরও বেশি আদায় করে নিতে পারত।
সরকার একটু উদ্যোগী হলে অনেক কিছুই করতে পারে। দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে সরকার আরব দেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য স্বল্প মেয়াদে ব্যবহারিক আরবি ভাষা শিক্ষাকোর্স চালু করতে পারে। এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে রেমিটেন্সের ওপর।
ইসলামের সঙ্গে এ জনপদের সম্পর্ক হাজার বছরেরও বেশি। সুদীর্ঘ এই সময়ের প্রতিদিন এ ভূখন্ডের মানুষ নিদ্রা ত্যাগ করে নতুন দিনের যাত্রা শুরু করে যে আজানের সুমধুর সুর শোনে তা-ও কিন্তু আরবি ভাষার কিছু বাক্য। দলমত নির্বিশেষে এ দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে প্রতিদিন সামান্য হলেও কোরআন পড়ে থাকে। তারও ভাষা আরবি।
এ দেশের তিন লক্ষাধিক মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবেলা দলবদ্ধভাবে ও এককভাবে যে নামাজ পড়া হয় তার ভাষাও আরবি। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, তিনি যে দল ও মতের হোন কেন; নামাজের কারণে প্রতিদিন তাকে কম করে হলেও মোট আধা ঘণ্টা সময় নিবীড়ভাবে আরবি ভাষার সঙ্গে কাটাতে হয়। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে তাকে দশ মিনিট আরবিতে খুতবা শোনতে হয়। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী তাদের জন্মের পর মুহূর্তে সর্বপ্রথম যে শব্দ শোনে, যে বাক্যগুলো দিয়ে পৃথিবীর নতুন জীবনে তারা বরণীয় হয়, সমাদৃত হয়, অভিনন্দিত হয়- সেই আজানের ভাষাও আরবি। আবার পৃথিবী থেকে তাকে চিরবিদায় দেওয়া হয় আরবি ভাষায়। জানাজার নামাজ, লাশ কবরে রাখার দোয়া, কবর মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দোয়া সবই আরবিতে। তাই আরবি ভাষার সঙ্গে এ দেশের মানুষের সম্পর্ক জন্ম-মৃত্যুর সম্পর্ক। শুধু জন্ম-মৃত্যু নয় বরং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিত্যদিনের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক সুকঠিন এক সম্পর্ক।
তুলনামূলকভাবে বিদেশি ভাষাগুলোর মধ্যে আরবি ভাষা অনেক সহজ। সামান্য উদ্যোগ নিলে মানুষের জন্য আরবি ভাষা শেখার সহজ পথ ও পন্থা বের করা সম্ভব। সঙ্গত কারণেই এবারের আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবসের দাবি হোক, শিক্ষার সর্বস্তরে আরবি ভাষার অন্তর্ভুক্তি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এমএইউ/