লন্ডনের গৃহহীন মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন কয়েক হাজার মুসলমান। তারা তাদের সাধ্যমতো দান করলেন।
লন্ডনের মুসলমানদের এই দানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ টন। এর বেশিরভাগই খাদ্যপণ্য। আসন্ন বড়দিনে যাতে লন্ডনের রাজপথে কোনো গৃহহীন অভুক্ত না থাকেন- সে জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় মুসলমানরা।
লন্ডনের দুঃস্থ ও অভাবীদের সাহায্যের জন্য ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা মুসলিম এইডের আহবানে সাড়া দিয়ে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। তাদের কেউ খাদ্য সামগ্রী দান করেছেন; আবার কেউ তা গ্রহণ করেছেন।
দ্য লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড এর রিপোর্ট অনুযায়ী এমন আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন সাড়ে সাত হাজার মুসলমান। পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) ইস্ট লন্ডন মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর স্বেচ্ছাসেবকরা খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহে নামেন।
সংগৃহীত খাবারের মাঝে রয়েছে চাল, পেস্তা, টিনজাত বিভিন্ন শুকনো খাবার ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য। স্থানীয় মুসলমানদের কাছ থেকে এসেছে এসব ডোনেশন। এখন সংগৃহীত খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হবে অভাবী মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে লন্ডনের রাস্তায় যেসব মানুষ অবস্থান করেন তাদের মধ্যে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও দাতব্য সংস্থা মুসলিম এইডের কর্মকর্তা বলেছেন, সংগৃহীত খাবারের বেশি অংশ দেওয়া হবে যারা মুসলিম নন এমন মানুষের হাতে।
উল্লেখ্য, মুসলমানদের এমন উদ্যোগে সমর্থন প্রকাশ করতে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারাও উপস্থিত হয়েছিলেন ইস্ট মসজিদ প্রাঙ্গনে। তাদের একজন স্থানীয় গীর্জার রেভারেন্ড গ্যারি ব্রাডলি। তার মতো আরও অনেকে এ উদ্যোগকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, মানবতার জন্য অভিন্ন লক্ষ্যে সব ধর্মের মানুষ একত্রে কাজ করার এটা একটি উদাহরণ।
অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ, সেখানে বাড়ছে বাসা ভাড়া। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হোস্টেল ও কাউন্সিলের হাউজিংয়ের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে।
২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে। এ বৃদ্ধি শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ। যেকোনো রাতে ইংল্যান্ডের রাস্তায় ঘুমান প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ছাড়াও রয়েছেন গৃহহীন মানুষ। তারা নিজেদের যথাসম্ভব আড়াল করে রাখতে চান।
অভাবীদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচির প্রসঙ্গে মুসলিম এইড প্রতিনিধি মাওলানা আবুল কালাম বলেন, এমন উদ্যোগ নিতে পেরে আমরা খুশি। আসলে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখা ঈমানের দাবি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। ’ আমরা কেবল এই হাদিসের পাঠ অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছি।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রধান ইমাম শায়খ আবদুল কাইয়ুম বলেছেন, ‘দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি এমন সমবেদনা প্রকাশের মাধ্যমে সত্যিকারের ইসলামের রূপ প্রকাশ পায়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এমএইউ/