ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

প্রাচীন কোরআনের পান্ডুলিপি আর কিতাবের জাদুঘরে

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
প্রাচীন কোরআনের পান্ডুলিপি আর কিতাবের জাদুঘরে মরক্কোতে ১৬ শতকে হাতে লেখা দালাইল আল খয়রাত। ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে ফিরে: আলো আঁধারিতে ফুটে আছে ইতিহাস খুঁড়ে তুলে আনা সব রত্ন। মহাসাগরের শত শত বছরের কল্লোল যেনো ঘুমিয়ে আছে সারি সারি কাঁচের শোকেসে।

নানা রীতির আরবী আর ফারসিতে লেখা কোরআন শরীফ, দোয়ার বই, হজ গাইড আর পবিত্র স্থানের বিবরণ সম্বলিত নকশাখচিত পুস্তকগুলো যেনো তাবৎ বিশ্বের মুসলিম ঐতিহ্যকে বেঁধে নিয়েছে মাত্র একটি ঘরের মধ্যেই।  

আরো রাখা হয়েছে হযরত মুহম্মদ (সা.) এর বংশ লতিকা আর মদিনায় তার মসজিদের নকশা।

তিন তিনটে অবুঝ শিশু কি বুঝছে কে জানে, ঘুরে ঘুরে দেখছে সব শোকেস। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন মালয় মা। সবচেয়ে ছোট শিশুটা তো মক্তব প্রদর্শনীর সামনে বসেই পড়লো রীতিমতো। যেনো প্রতীকী মক্তব্যে সে সদ্য যোগ দেওয়া মনোযোগী শিক্ষার্থী। ১৪৪৮ সালে লেখা ধর্মীয় পবিত্র স্থানের বিবরণ সম্বলিত কিতাব।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

মালয়েশিয়ার এই ইসলামিক আর্ট মিউজিয়ামকে কেনো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইসলামী জাদুঘর বলা হয় তা বুঝতে অসুবিধা হয় না গ্যালারিতে ঢুকে। ৪ তলা ভবনটিতে প্রাচীন কোরআন আর পাণ্ডুলিপির গ্যালারি নীচতলায় রিসিপশনের পাশেই।    

এখানে ১৪৪৮ সালে মক্কাহ, মদিনা ও আল কুদস শহরের পবিত্র স্থানের নকশাখচিত বিবরণ লেখা কিতাব আনা হয়েছে আল কুদস থেকে। ১৫৩৩ সালে ইরানের মুহুই আল দিন লারি’র লেখা হজের গাইড বই আনা হয়েছে সাফাভিড থেকে। সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ মোহাম্মদ বিন সৈয়দ তালিবের লেখা মদিনার ইতিহাস। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বংশ লতিকা।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

তবে কোরআন শরীফের মধ্যে মরক্কো থেকে পাওয়া ১৬ শতকের হস্তলিখিত কোরআনটিই এই মিউজিয়ামের সবচেয়ে পুরনো দালাইল আল খয়রাত কালেকশন। এ গ্রন্থের পাতায় পাতায় খিলানাকার নকশা। আরো আছে ১৫৯৫ সালে উজবেকিস্তানে, ১৭০৭ সালে মরক্কোতে, ১৭৩৫ তুরস্কে, ১৭৩৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাভায় লিখিত নকশাকাটা কোরআন।

আছে ১৬৪৮ সালে লেখা তুরস্কের কাবাগৃহ খচিত রঙিন পুস্তক, ১৭ শতকের অটোমান সাম্রাজ্যের পাণ্ডুলিপি। ১৫৩৩ সালে ইরানে ফারসিতে লেখা হজ গাইড।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

কাশ্মির থেকে ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে পাওয়া কিতাবটির অঙ্গ বিন্যাস আরো চমৎকার। উনিশ শতকের কাশ্মিরের আরো পাণ্ডুলিপিতেও নকশা। খোলা পাতায় ফুলের নকশার ভেতরে আরো বইয়ের নকশা কেটে লেখা হয়েছে হরফ-আয়াত। একই শতকে মালয় উপদ্বীপ থেকে পাওয়া গ্রন্থটিতেও বইয়ের ভেতরে বইয়ের নকশা কেটে হরফ লেখা।

ভারতের লোহারুর নবাব আল দীন খান বাহাদুরের নির্দেশে ১৮৭৯ সালে আল হাফিজ মাহমুদ মোহাম্মদ এর লেখা কিতাব ছাড়াও আছে বিশ শতকের গোড়ার দিকে তুরস্ক থেকে পাওয়া কয়েকটি কিতাব। ১৯০৪ সালে উজবেকিস্তানের বুখারা থেকে পাওয়া কিতাবটিতে কালোর মাঝে মাঝে লাল কালির হরফ। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে মিশর বা ইয়েমেনে লেখা কাসিদা আল রুরদাহ।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

কোরআন আর কিতাব ছাড়াও আদম (আ.) ও হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বংশ লতিকাও মধ্য এশিয়া থেকে উদ্ধার করে এনে রাখা হয়েছে এখানে। মদীনায় মুহাম্মদের (সা.) মসজিদের নকশাও দ্যুতি ছড়াচ্ছে গ্যালারির একপাশে।

আছে মিশর বা ইয়েমেন থেকে উদ্ধার করা ১৫২৬ সালের কাসিদা আল বুরদাহ, ১৬৩৩ সালে লেখা ওটোমান সাম্রাজ্যের নবাবী কেতাব,  চীন থেকে উদ্ধার করা সুফি কবি ইমাম আল বুশাইরির কাসিদা সম্বলিত ১৭ শতকের দোয়ার বই। ১৬৩৩ সালে মক্কায় লেখা নবাবী কিতাব।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

কোরআন আর হস্তলিপি গ্যালারি ছাড়াও এই জাদুঘরের উল্লেখযোগ্য গ্যালারিগুলো হলো ইসলামের ইতিহাস সম্বলিত পৃথক পৃথক ইন্ডিয়া, চায়না ও মালয় ওয়ার্ল্ড গ্যালারি। মুসলিম ঐতিহ্য সংস্কৃতি বিষয়ে ‍আছে অলংকার, টেক্সটাইল ও কাঠের পৃথক গ্যালারি। আছে অস্ত্র, কয়েন, সিল, মেটাল ও সিরামিকসেরও স্বত্যন্ত্র গ্যালারি।

কুয়ালালামপুর শহরের যে কোনো স্থান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে এখানে আসা যায়। কুয়ালালামপুর রেল স্টেশন থেকে আন্ডারগ্রাইন্ড প্যাসেজ হয়ে জাতীয় মসজিদ দিয়ে আসা যায় ইসলামিক আর্ট মিউজিয়ামে। ছাদ খোলা হুপ অন হুপ অপ বাসে চড়েও এখানে আসা যায়। দাতারান মারদেকা বা বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়া থেকে মসজিদ জামেক হয়ে দক্ষিণে মিনিট পনেরো হাঁটলেই মিউজিয়ামটি চোখে পড়বে। জাতীয় মসজিদ ছাড়াও ন্যাশনাল পার্ক ও প্লানেটোরিয়াম, বার্ড পার্ক আর পুলিশ মিউজিয়াম এখান থেকে হাঁটা পথ। ১৫৯৫ সালের আর একটি কিতাব।  ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

মিউজিয়ামে প্রবেশ মূল্য ১৪ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিতে ১৯ টাকা। তবে রেস্টুরেন্ট, শিশুদের লাইব্রেরি আর স্যুভেনির শপে ঢুকতে টিকিট প্রয়োজন হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।