রোববার (২২ জানুয়ারি) ইজতেমার ময়দানে আগত মুসল্লি ও তাবলিগি সাথীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ হেদায়েতি বয়ান দেওয়া হয়। বিশেষ করে যারা ইজতেমা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে তাবলিগের কাজে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
হেদায়েতি আলোচনা শেষে মোনাজাত ও দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন মাওলানা সাদ। ওই আলোচনায় তিনি বলেন, আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে দোয়া। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমার কাছে দোয়া করো, আমি তা কবুল করবো। ’
বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি অত্যন্ত খুশি হন। হজরত নবী করিম (সা.) কে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, আপনি যখন (দাওয়াতের কাজ থেকে) অবসর লাভ করেন, তখন ইবাদতে আত্মনিয়োগ করুন। ইবাদতের পর দোয়ায় লেগে যান। দাওয়াত, ইবাদত এবং দোয়া- এই তিন কাজে নবী করিম (সা.) নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। সুতরাং আমাদেরও এই তিন কাজে জুড়ে থাকতে হবে।
মোনাজাত বিনয়ের সঙ্গে করা অপরিহার্য। উদাসীন অন্তরের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। তাই মোনাজাতের পূর্বে মাওলানা সাদ সবাইকে আল্লাহর দিকে বিনয়ী হয়ে বসতে বলেন। অতঃপর আরবি ও উর্দুতে ৩২ মিনিট সময় ধরে তিনি মোনাজাত করেন।
বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতে মাওলানা সাদ বিশ্ববাসীর জন্য ইহ-পরকালীন সুখ-শান্তি ও সফলতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে নিজেদের পাপ মার্জনা ও হেদায়েতের পাশাপাশি সকল ফেতনা ও দুর্যোগ থেকে উম্মতের হেফাজত কামনা হয়।
মোনাজাতের শুরুতে মাওলানা সাদ কোরআন ও হাদিসে যেসব দোয়া বর্ণিত আছে, প্রথমে সেগুলো পাঠ করেন। এসব দোয়া খুবই তাৎপর্যবহ ও ব্যাপক অর্থবোধক। ওই সব দোয়ায় বলা হয়েছে-
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা পাপ করে নিজেদের ওপর সীমাহীন জুলুম করেছি। তুমি যদি ক্ষমা ও দয়ার দৃষ্টি না দাও তাহলে আমরা নির্ঘাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে উভয়জগতের কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে আখেরাতের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা এবং আখেরাতের আজাব থেকে মুক্তি দান করুন। আমরা সেসব কল্যাণ কামনা করছি যা প্রিয় নবী (সা.) আপনার কাছে প্রার্থনা করেছেন এবং ওই সব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি- যেগুলো থেকে নবীজি আশ্রয় চেয়েছেন।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে পরিপূর্ণ ঈমান এবং অগাধ বিশ্বাস প্রার্থনা করছি। পরকালে তোমার প্রিয় নবীর সান্নিধ্য কামনা করছি। আমাদেরকে তোমার পথের দাঈ হিসেবে কবুল করো। তুমি যেসব আমল ও কথা পছন্দ করো- আমাদেরকে সেসব আমলের তাওফিক দাও।
ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে সাহায্য করো। তোমার রহমত থেকে আমাদেরকে নিরাশ করো না। তোমার প্রিয় বান্দাদের যা দিয়েছো আমাদেরকে তা দান করো। তোমার কাছে আমরা যাবতীয় কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং সমস্ত অকল্যাণ থেকে পানাহ চাচ্ছি।
হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সৎচরিত্র ও স্বচ্ছলতা প্রার্থনা করছি। তোমার কাছে ক্ষমা, নিরাপত্তা ও সফলতা কামনা করছি। তোমার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাচ্ছি। যেসব আমল জান্নাতে যাওয়ার উসিলা হবে, আমাদেরকে সেসব আমলের তাওফিক দাও এবং যেসব আমল জাহান্নামে নিয়ে যাবে, আমাদেরকে তা থেকে বিরত রাখো।
হে আল্লাহ! আমাদের গোনাহসমূহ মাফ করুন, আমাদের চিন্তা ও পেরেশানি দূর করুন। আমাদের বিপদাপদ অপসারিত করুন, আমাদের জাগতিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করে দিন। যারা অসুস্থ তাদের পূর্ণ সুস্থতা দান করুন।
হে আল্লাহ! মুসলমানদের তুমি হেফাজত করো। কাফেরদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করো। আমাদেরকে দ্বীনের ওপর অটল-অবিচল রাখো। আমাদের সংশোধন করো, অন্তর থেকে হিংসা, বিদ্বেষ দূর করে দাও। পরস্পরে সম্প্রীতি দান করো। আমাদের অন্তরে তাকওয়ার সম্পদ ঢেলে দাও এবং অন্তরকে কলুষমুক্ত করো।
হে আল্লাহ! তুমি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তোমার জন্য কোনো কিছুই অসাধ্য নয়। তুমি আমাদের কাজ-কর্ম সহজ করে দাও। আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তওবা করছি- আমাদের হাতগুলোকে রিক্ত করে ফিরিয়ে দিও না।
হে আল্লাহ! আমরা পাপী, তা স্বীকার করছি। লজ্জিত হয়ে তোমার দুয়ারে তওবার হাত প্রসারিত করেছি। দয়া করে তুমি আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দাও। গোনাহের সমুদ্র থেকে তুলে হেদায়েতের রাজপথে স্থান দাও। আমাদের মন্দকর্মগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দাও।
হে আল্লাহ! তোমার জিকির, শোকর ও ইবাদতের জন্য আমাদের কবুল করো। পুরো উম্মতকে হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখো। তাবলিগ জামাতের উসিলায় সমগ্র পৃথিবীতে হেদায়েতের আলো ছড়িয়ে দাও। এই জামাতের চেষ্টা ও মেহনতের বদৌলতে সমগ্র পৃথিবী থেকে কুফর ও শিরকের নাপাকি দূর করে দাও। মানুষকে আঁধার থেকে আলোর ভূবনে পরিচালিত করো।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে নবীজির সুন্নত ও আদর্শের ওপর পরিচালিত করো। শতধা বিচ্ছিন্নতা থেকে উম্মতকে হেফাজত করো। উম্মতের ঈমান, আমল, চরিত্র ও জান-মালকে সংরক্ষণ করো। মাদারিসে দ্বীনিয়াকে সব ধরনের সঙ্কট থেকে রক্ষা করো। এসব দ্বীনি মাদরাসা থেকে ইলমের যে রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়- তার মাধ্যমে সমগ্র জাহানের অজ্ঞতা ও অন্ধকার বিদূরীত করো।
হে আল্লাহ! এই ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমায় আগত সকল মুসলমানকে কবুল করো। ইজতেমায় যত আমল হয়েছে সেগুলো কবুল করো। ইজতেমাকে দেশবাসীর জন্য এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য হেদায়েতের উপলক্ষ বানাও।
হে আল্লাহ! যারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দোয়ায় অংশ নিয়েছে, প্রত্যেকের মাকসাদ পূর্ণ করো। যারা আমাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন, তাদের নেক নিয়ত পুরা করো। অসুস্থদের সুস্থতা দান করো, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দাও, যারা মিথ্যা মামলায় পতিত হয়ে কষ্টের জীবন অতিবাহিত করছে তাদেরকে মুক্তির ব্যবস্থা করো।
হে আল্লাহ! যা কিছু প্রার্থনা করা হলো- তা কবুল করো। যা চাওয়া হয়নি, অথচ আমাদের প্রয়োজন তা আমাদের দান করো। আমাদের প্রয়োজন সম্পর্কে তুমি বেশি জানো, সুতরাং আমাদের সব প্রয়োজন তোমার গায়েবি খাজানা থেকে পূর্ণ করে দাও। আমাদের দোয়াগুলোকে কবুল করো। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
এমএইউ/