অন্য ইবাদত থেকে হজের আমল একটু কঠিন। হজ পালনের ক্ষেত্রে হজের সঠিক মাসআলার জ্ঞান যেমন জরুরি, তেমনি তা আদায়ের কৌশল এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে করণীয় বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখাও জরুরি।
হজে যে সব ভুল হতে দেখা যায় তা সাধারণত উদাসীনতার কারণেই হয়ে থাকে। তাই এখানে সহজে ঘটে এমন কিছু ভুল উল্লেখ করা হলো। যেন হজপালনকারীরা এ সব ভুল-ভ্রান্তি থেকে বেঁচে সুষ্ঠুভাবে হজ আদায়ে সক্ষম হন।
ইহরামের দুই রাকাত নামাজের জন্য ইহরাম বিলম্বিত করা
ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ম আছে। তাই অনেককে দেখা যায়, এই দুই রাকাত নামাজের সুযোগ না পাওয়ার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকেন। এমনকি এই দুই রাকাত নামাজ পড়তে না পারার কারণে কেউ কেউ ইহরাম ছাড়াই মিকাতের ভেতর পর্যন্ত চলে যায় অথচ ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। তারা যেহেতু ইহরামের আগে দুই রাকাত নামাজ আদায়কে জরুরি মনে করে তাই তারা এমনটি করে থাকে। অথচ ইহরামের আগে নামাজ পড়া সকল মাজহাবেই মুস্তাহাব; জরুরি কিছু না।
পক্ষান্তরে ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করা নাজায়েজ। সুতরাং ইহরামের আগে নামাজের সুযোগ পেলে তো তা আদায় করা চাই, কিন্তু সুযোগ না পেলে সে কারণে ইহরাম বাঁধাকে বিলম্ব করবে না।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম সংক্রান্ত ভুলসমূহ
অনেকে মনে করে থাকেন, ইহরামের কাপড় পরে নামাজ পড়ার পর নিয়ত করলেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। এ ধারণাও ভুল। এগুলো দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না। নিয়ত আরবিতে করা হোক বা বাংলাতে, সশব্দে করা হোক বা মনে মনে এর দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না; বরং নিয়তের পর তালবিয়া পড়লে ইহরাম পূর্ণ হয়। অতএব বোঝা গেল, ইহরাম সম্পন্ন হয় দুই কাজের সমন্বয়ে-
১. হজ বা উমরার নিয়ত করা।
২. তালবিয়া পড়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...)।
মক্কাগামীদের জন্য জেদ্দায় ইহরাম বাঁধা
কেউ কেউ আগে থেকেই ইহরাম বাঁধা ঝামেলা মনে করেন এবং ভাবেন, ইহরাম বেঁধে নিলেই তো ইহরামের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়ে যাবে। বিমান যেহেতু জেদ্দায় অবতরণ করবে তাই জেদ্দায় ইহরাম বাঁধার ইচ্ছায় ইহরামকে বিলম্বিত করেন। অথচ মিকাতের বাইরের হাজীদের জন্য ইহরাম ব্যতীত মিকাত অতিক্রম করা জায়েয নেই। বাংলাদেশ থেকে হজে গমনকারী হাজীদের জন্য মিকাত হলো- ‘কারনুল মানাযিল ও যাতু ইরক’ যা অতিক্রম করেই জেদ্দায় যেতে হয়। যদি কেউ বিনা ইহরামে মিকাত অতিক্রম করে, তবে তার জন্য পুনরায় মিকাতে ফিরে এসে ইহরাম বেঁধে যাওয়া জরুরি। যদি তা না করে তবে দম ওয়াজিব। যেহেতু বিমানে থাকা অবস্থায় মিকাতের জায়গা নির্ধারণ করা কঠিন বা ওই সময় ঘুমিয়ে পড়া, অন্যমনষ্ক থাকা ইত্যাদি হতে পারে। তাই বিমানে চড়ার আগে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরাম বেঁধে নেওয়ার কথা বলা হয়।
সেলাইবিহীন কাপড় বা চপ্পলের জন্য ইহরাম বিলম্বে বাঁধা
কেউ কেউ ইহরামের কাপড় না পরে বিমানে উঠে যায়। অথবা মদিনা থেকে গাড়িতে উঠে পড়ে। এরপর যখন গাড়ি বা বিমানের মধ্যে পরিধানের কাপড় বদলিয়ে ইহরামের কাপড় পরা কষ্টকর হয় কিংবা কাপড় লাগেজে থেকে যায়। তখন তারা সেলাইবিহীন কাপড় পরতে না পারার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রম করে ফেলে। ফলে দম ওয়াজিব হয়। অথচ মিকাত অতিক্রমের আগে সেলাইযুক্ত কাপড়ের অবস্থায়ই যদি ইহরাম বেঁধে নিত এবং গাড়ি বা বিমান থেকে অবতরণের পরেই ইহরামের কাপড় পরে নিত তবে তার অন্যায়টা দম ওয়াজিব হওয়ার মতো বড় হতো না। ইহরাম অবস্থায় এ কয়েক ঘণ্টা (১২ ঘণ্টার কম) সেলাই করা কাপড় পরে থাকার কারণে একটি পূর্ণ সদকা ফিতর আদায় করে দিলেই চলত।
ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যাবে না, মনে করা
অনেকেই মনে করেন, যে কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হয়েছে সে কাপড় হালাল (ইহরাম শেষ) হওয়ার আগ পর্যন্ত বদলানো যাবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। ওই কাপড় নাপাক না হলেও বদলানো যাবে।
তাওয়াফের সময় ছাড়াও ইজতিবা করা
অনেককে দেখা যায়, ইহরামের প্রথম থেকেই ইজতিবা (বাম কাঁধের ওপর চাদর রেখে ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে পরিধান করা) করে থাকে এবং হালাল হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকাকে শরিয়তের হুকুম মনে করে। এটি ভুল। এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ মাকরূহ হবে।
আবার কেউ কেউ তাওয়াফের সময় ইজতিবা করে এবং এ অবস্থায় সাঈও করে থাকে এবং তাওয়াফের মতো সাঈতেও তা করা শরিরতের বিধান মনে করে। অথচ সাঈতে ইজতিবা করার বিধান নেই। এমনকি সকল তাওয়াফেও এটি সুন্নত নয়। বরং যে তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয় শুধু সেই তাওয়াফেই ইজতিবা করতে হয়। সুতরাং নফল তাওয়াফে ইজতিবা নেই। কেননা নফল তাওয়াফের পর সাঈ নেই।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৭
এমএইউ/