এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর ভরসা করো সেই জীবিত সত্ত্বার (আল্লাহর) ওপর, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। ’ -সূরা ফুরকান: ৫৮
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.) কে তার ওপর ভরসা করার আদেশ করেছেন।
যে ব্যক্তি তার ওপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন- তাকে সাহায্য ও সমর্থন করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ওপর ভরসা করবে, সে তো এমন কিছুর ওপর ভরসা করলো- যে মৃত্যুবরণ করবে, বিলীন ও ক্ষয় হয়ে যাবে। দুর্বলতা ও অপারগতা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রয়েছে। এ কারণে তার প্রতি ভরসাকারীর আবেদন বিনষ্ট হয়ে যায়, সে হয়ে যায় দিশেহারা।
এ থেকেই বুঝা যায় আল্লাহর ওপর ভরসা করার ফজিলত ও মর্যাদা কি? তার সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ককে গভীর করার গুরুত্ব কতটুকু?
তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা করার অর্থ হলো- দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় বিষয়ের কল্যাণ লাভ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সঠিকভাবে অন্তর থেকে আল্লাহর ওপর নির্ভর করা। বান্দা তার প্রতিটি বিষয় আল্লাহর ওপর সোপর্দ করবে। ঈমানে এই দৃঢ়তা আনবে যে, দান করা না করা, উপকার-অপকার একমাত্র তিনি ছাড়া আর কারো অধিকারে নেই।
আল্লাহতায়ালা মুমিন বান্দাদেরকে তাওয়াক্কুলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে পবিত্র কোরআনে অনেক আয়াত উল্লেখ করেছেন। যেমন- ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে আল্লাহর ওপরেই ভরসা করো। ’ -সূরা মায়েদা: ২৩
হাদিসেও তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব ও তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রিজিক দান করতেন, যেমন পাখিকে রিজিক দান করে থাকেন। যারা খালি পেটে সকালে বের হয় এবং পেট ভর্তি হয়ে রাতে ফিরে আসে। ’ –আহমাদ ও তিরমিজি
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ রাখতে হবে, বিশুদ্ধভাবে আল্লাহর ওপর ভরসার সঙ্গে আবশ্যক হলো- জীবিকার উপায়-উপকরণ অনুসন্ধান করা ও কাজ করা- ভরসা করে বসে না থাকা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর মুমিনরা যেন আল্লাহর ওপরই ভরসা করে। ’ -সূরা মায়েদা: ১১
এখানে ভরসা করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। আর তা নির্দেশিত যাবতীয় বিষয়ের উপকরণকে শামিল করছে। সুতরাং নির্দেশিত উপকরণ অবলম্বন না করে বা কাজ না করে শুধু ভরসা করে বসে থাকা বিরাট ধরণের অপারগতা- যদিও এতে তাওয়াক্কুল পাওয়া যায়। সুতরাং কোনো মানুষের জন্য উচিত নয়, ভরসাকে অপারগতায় রূপান্তরিত করবে অথবা অপারগতাকে ভরসায় রূপান্তরিত করবে। বরং যে সমস্ত উপকরণ সে অবলম্বন করবে তার মধ্যে ভরসাও শামিল থাকবে।
ইসলামি স্কলাররা বলেন তাওয়াক্কুল দুই প্রকারের-
১. এমন বিষয়ে তাওয়াক্কুল করা- যে ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো ক্ষমতা নেই।
২. বাহ্যিক উপায়-উপকরণ ও বস্তুর ওপর ভরসা করা।
বৈধ ভরসা হলো- একজন মানুষ অপরজনকে তার পক্ষ থেকে কোনো কাজ আদায় করার দায়িত্ব দেওয়া। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি উক্ত বিষয়ে সামর্থ্য রাখবে। এক্ষেত্রেও সে ব্যক্তির ওপর পুরাপুরি নির্ভর করবে না। বরং উক্ত বিষয় বাস্তবায়নের জন্য সে নিজে এবং ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে।
তাওয়াক্কুলের বাস্তবায়ন এবং বৈধ উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়কে আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য এ উদাহরণটি উল্লেখযোগ্য- হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতের সময় মদিনার দিকে যাওয়ার জন্য মক্কা রওনা হন। পরে ‘সওর’ নামক গুহায় আত্মগোপন করেন। হজরত আবু বকর (রা,) নবী করিম (সা.)-এর হিজরতের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যখন ‘গারে সওরে’ ছিলাম তখন আমি ওপর দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম মুশরেকদের পা আমাদের মাথার ঠিক ওপরে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায় তাহলেই আমাদেরকে দেখতে পাবে। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘আমাদের দু’জন সম্পর্কে তোমার ধারণা কি হে আবু বকর! আল্লাহ আমাদের তৃতীয় জন। অর্থাৎ আমাদের সাহায্যকারী। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
যে কথা পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিলো, তিনি ছিলেন দু’জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। ’ -সূরা তওবা: ৪০
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে, সে অকল্পনীয়ভাবে তার মর্যাদা লাভ করবে, তার ফলাফল ভোগ করবে। আর সে হবে সর্বাধিক উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষ, সবচাইতে সুখি মানুষ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। ’ -সূরা ত্বালাক: ৩
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৭
এমএইউ/