বেশিরভাগ সামাজিক অনাচারের পেছনে লোভ-লালসার বিরাট প্রভাব রয়েছে। তাই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) লোভ-লালসাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেছেন, ‘তোমরা লোভ-লালসা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা এ জিনিসই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে এবং পরস্পরকে রক্তপাত ঘটানোর ব্যাপারে উসকে দিয়েছে।
যদি বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পরও মানুষের মনে তৃপ্তি না আসে, তাহলে বুঝতে হবে তার মনে লোভ বাসা বেঁধেছে। লোভী ব্যক্তি নিজের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। হাতে যা আছে তাতে সুখী না থেকে অন্যায়ভাবে আরো বেশি কিছু পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। অতিরিক্ত কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা ও অন্যের বস্তু আত্মসাৎ করার প্রবণতা ইসলামসম্মত নয়। লোভাতুর দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তির জীবনে কখনো শান্তি আসতে পারে না।
লোভের বশবর্তী হয়ে কিছু মানুষ ধর্ম-কর্ম ভুলে নিজের জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে। লোভ-লালসা মানুষকে অন্ধ করে তার বিবেকবুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে তাকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য বিচারের ক্ষমতা নির্মূল করে ফেলে। তাই লোভ মানুষের চরম শত্রু, জীবনের বিনাশ সাধনই এর কাজ। লোভ-লালসা নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতেই হবে, নইলে মানুষের নৈতিকতার বিকাশ, সৎ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন করা সম্ভব হবে না।
দুর্নীতিবাজ লোভাতুর ব্যক্তি কখনো পরোপকার ও জনকল্যাণকর কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় না। লোভ-লালসা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন অর্থসম্পদ, মানসম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ক্ষমতা, পদমর্যাদা, প্রসিদ্ধি ও সুখ্যাতি লাভের প্রবল লোভ মানব চরিত্র গঠন ও সংশোধনের পথে বিরাট অন্তরায়।
এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যা দিয়ে আল্লাহ তোমাদের কাউকে অপর কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা তার লালসা করো না। ’ -সূরা আন নিসা: ৩২
ধর্মপ্রাণ মুমিন বান্দা কখনো অন্যের সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকায় না। ধনসম্পদ আহরণ দোষের হয় তখন, যখন অন্যের সম্পদের ওপর লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করা হয় এবং অবৈধ উপায়ে তা অর্জনের চেষ্টা চালানো হয়।
খ্যাতি-ক্ষমতা-প্রতিপত্তি ও ধনসম্পদের মোহ সমাজজীবনে সব অনিষ্টের মূল। প্রকৃতপক্ষে ধন-সম্পদের লিপ্সা ও খ্যাতির প্রতি অতিশয় মোহ নিতান্তই ক্ষতিকারক।
নবী করিম (সা.) উপমাসহকারে বলেছেন, দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ ছাগলের পালে ছেড়ে দিলে যে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, সম্মান লিপ্সা ও সম্পদের লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য তার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। ’ –তিরমিজি
এ জন্য মানুষের মধ্যে ঘুষ-দুর্নীতি, হিংসাবিদ্বেষসহ নানা মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি হয়। পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, কলহ-বিবাদ, হানাহানি এমনকি পর্যায়ক্রমে তা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ, গুম ও খুনখারাবির কারণ হয়ে যায়।
ধনসম্পদের লোভ-লালসা ও আত্মসাৎপ্রবণতা মানুষের মন্দ স্বভাবের মধ্যে অত্যন্ত ঘৃণ্য ব্যাপার। লোভী অন্যের ধনসম্পদের প্রতি লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এবং অবৈধ উপায়ে তা হস্তগত করার হীন অপপ্রয়াস চালায়। পবিত্র কোরআনে এমন জঘন্য লোভ-লালসাকে চিরতরে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) লোভ-লালসাকে দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণার উপকরণ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ইমান ও লোভ এক অন্তরে একত্র হতে পারে না। এর কারণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কেননা, ইমানের পরিণাম হচ্ছে ধৈর্য, সহনশীলতা ও অল্পে তুষ্ট থাকা। লোভ-লালসার পরিণাম অশান্তি, ধৈর্যহীনতা ও অস্বস্তিবোধ। ’ -নাসাঈ ও তিরমিজি
বলা হয়ে থাকে, ‘লোভী বঞ্চিত। ’ যেহেতু লোভ মানুষের সব দুর্নীতি ও অপকর্মের মূল উৎস, তাই ইহলৌকিক ও পরকালীন জীবনে সাফল্যের জন্য লোভ-লালসার কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। মানুষকে সৎ চরিত্রবান হতে হলে, মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হলে ও আদর্শ সুশীলসমাজ গড়তে হলে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমানের উচিত জীবনের সর্বক্ষেত্রে লোভ-লালসা ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৭
এমএইউ/