ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হজ: খোদার সান্নিধ্যে বান্দার যাত্রা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
হজ: খোদার সান্নিধ্যে বান্দার যাত্রা হজ: খোদার সান্নিধ্যে বান্দার যাত্রা

মুসলিম মিল্লাতের আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হজ। এটি শুধু একটি ইবাদতই নয়, মুসলিম জাহানের ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধনকে আরও অটুট ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করার অসামান্য উদাহরণ।

হজের মাধ্যমে উম্মতকে যেমন একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রয়েছে, তেমনি যথাযথ ইবাদত-বন্দেগি পালন করে মহান অাল্লাহর অপার করুণার বারিধারায় সিক্ত হয়ে পাপ-পঙ্কিলতা পরিত্যাগ করে উন্নত মনুষ্যত্ব হৃদয়ে ধারণ করতে পারেন যে কেউ।  

নিরবচ্ছিন্ন ইবাদত ও একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে বান্দা যেতে পারে আল্লাহর অসীম করুণার তৃপ্তিময় সান্নিধ্যে।

আল্লাহকে পাওয়ার উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে হজের বরকতপূর্ণ দিনগুলো। এ সময় পুরোপুরি পাপাচার পরিত্যাগ করে বান্দা অর্জন করতে পারে আল্লাহর নৈকট্য।

সর্বোপরি কথা হলো, বিশ্বজনীন এই ইবাদতের ভিত্তিতে মানবতা পৌঁছতে সক্ষম হয় আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার প্রান্তসীমায়। যার দরুণ ইনসানিয়াত পার্থিব এ নশ্বর নিখিল ভূবনেও প্রাপ্ত হয় এক অসীম স্রষ্টার অপার্থিব সান্নিধ্যের সন্ধান। যার ফলশ্রুতিতে পরমাত্মার পরম করুণায় ধন্য হয় মানবাত্মার সবজীবন। যেখানে থাকে না পাপাচারের কৃঞ্চ-কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘপুঞ্জের ঘনঘটা; এ যেন শুধু আল্লাহর সান্নিধ্যে তার আনুগত্যশীল বান্দার দারুণ এক মিলনমেলা।

তাই তো আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের স্বীয় সান্নিধ্যের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘মানুষের ওপর আল্লাহর অধিকার এই যে, যারা এই ঘর পর্যন্ত পোঁছানোর সামর্থ্য রাখে তারা এর হজ পালন করবে। ’ -সূরা আল ইমরান: ৯৭
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আর মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে, আর সব (পথক্লান্ত) শীর্ণ উটের পিঠে, বহু দূরের গভীর পর্বত সংকুল পথ বেয়ে। ’ -সূরা হজ: ২৭

আর এটি আল্লাহর কুদরতের মহিমা যে, মক্কার পাহাড়চূড়া হতে উচ্চারিত সেই অনুচ্চ আহবান আজ পৃথিবীর কোণায় কোণায় পৌঁছে গেছে। প্রত্যেক হজ ও ওমরা সম্পাদনকারী হজ ও ওমরার সময় সেই আহবানে ‘লাব্বাইক’ বলে  সাড়া দিয়ে থাকেন। আর হৃদয়ের গভীর থেকে বলেন, হে করুণাময়! আমি তোমার কুদরতি কদমে লুটিয়ে পড়ে তোমারই রহমত আর মাগফিরাত কামনা করি।

হজের পরিপূর্ণ বরকত পেতে হলে অবশই হজ হতে হবে শুধু আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে। লোক দেখানো বা ‘হাজি’ উপাধি অর্জনের নিমিত্তে নয়। তাহলেই কেবল হজের উদ্দেশ্য সাধিত হবে আর আল্লাহর করুণা ও কল্যাণ শিশিরে সিক্ত হবে আমাদের উভজীবন।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাকে পূর্ণ করো। ’ -সূরা আল বাকারা: ১৯৬

ধৈর্য-সহিঞ্চুতা অর্জন, পাপাচার পরিত্যাগ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ সবের বাস্তব প্রশিক্ষণ রয়েছে হজে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হজ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে, অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হজ করার মনস্থ করবে, তার জন্য হজের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায়-আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয় এবং তোমরা যে কোনো সৎকর্মই করো আল্লাহ তা জানেন এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা করবে আর তাকওয়াই হলো শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে জ্ঞানী সমাজ! আমাকেই ভয় করতে থাকো। ’ -সূরা আল বাকারা: ১৯৭

হজ পালনকারীর জন্যে আছে যথাযোগ্য মর্যাদা, অসামান্য পুরস্কার ও অসংখ্য পুণ্য। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করবে এবং হজের মাঝে কোনো বাজে কথা বলা ও পাপকর্ম সম্পাদন থেকে বিরত থাকবে তাহলে সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে (হজ থেকে বাড়ি) ফিরবে যেদিন সে তার ময়ের কোলে ভূমিষ্ট হয়েছিল। ’ –সহিহ বোখারি

আল্লাহতায়ালা সবাইকে তার আনুগত্যশীল বান্দা হয়ে হজব্রত পালন করার এবং তার নৈকট্য অর্জন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।