ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হাজিদের সেবায় মসজিদে হারামের নানা উদ্যোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭
হাজিদের সেবায় মসজিদে হারামের নানা উদ্যোগ গভীর রাতেও মানুষ মশগুল পবিত্র কাবার তাওয়াফে। ছবি: বাংলানিউজ

মক্কা নগরী থেকে: মসজিদে হারামে রয়েছে আল্লাহতায়ালার বরকতময় ঘর পবিত্র কাবা। এটি হচ্ছে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর, যে ঘরে দিন-রাত মানুষ ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটায়। এক মুহূর্তও থাকে না বিরতি।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর যা বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত। এ ঘর সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।

’ -সূরা আলে ইমরান: ৯৬

 
মসজিদে হারামের চত্বরে গিয়ে মিশেছে অনেকগুলো পথের মোহনা। এসব পথের ধারে রয়েছে প্রচুর দোকান-পাট, মার্কেট ও হোটেল। হজ মৌসুম উপলক্ষে এগুলো চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে। এমনকি স্বর্ণ ও জুয়েলারি দোকানগুলোও। তবে মসজিদে হারাম থেকে মাইকের আওয়াজ ভেসে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি-বাট্টা একেবারে বন্ধ। দোকানের সামনে একটা কাপড় ঝুলিয়ে তারা নামাজে চলে যায়।
 
এমনও দেখা গেছে, কোনো দোকানে আপনি ৩টি জিনিস কিনতে গেছেন, তার দু’টো আপনি নিয়েছেন, তৃতীয়টি দেওয়ার আগে আজান হয়ে গেছে, তাহলে আপনি আর তৃতীয়টি পাবেন না। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।
 
এখানকার অধিবাসী থেকে শুরু করে কাজের সন্ধানে আসা প্রবাসীদেরও জামাতে নামাজ আদায় করতে হয়। বস্তুত নিয়মিত নামাজ আদায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল।
 
এভাবেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে হাজিদের জন্য খাবার বিতরণ করা হয়।  ছবি: বাংলানিউজনামাজের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে নামাজিদের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সমাজ অশ্লীলতা থেকে মুক্ত হয়। কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে। -সূরা আনকাবুত: ৪৫
 
জামাতে নামাজ আদায় করলে পারস্পরিক হৃদ্যতা, আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়, মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। এতে দুনিয়ার জীবন সুখ-শান্তিতে ভরে ওঠে।
 
মসজিদে হারামে মুসল্লিদের কোরআন তেলাওয়াতের দৃশ্য নিয়মিত বিষয়। মসজিদে হারামের বিভিন্ন ফ্লোরে একটু পর পর কোরআন রাখার তাক রয়েছে। উপস্থিত হাজি কিংবা মুসল্লিরা দীর্ঘ সময় নিয়ে খুব আবেগ দিয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন। অনেককে দেখা গেছে, ওইসব তাকে কোরআন কিনে রেখে আসছেন।
 
কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরের মরিচা দূর হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় অন্তরগুলো মরিচাযুক্ত হয় যেমন লোহাতে পানি লাগলে মরিচা ধরে, কেউ বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ! অন্তরের মরিচা দূর করার উপায় কী? নবী করিম (সা.) বললেন, অধিক মৃত্যুর স্মরণ এবং কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত। -মিশকাত শরিফ
 
মসজিদে হারামে প্রতিদিন বাদ আসর ও বাদ ফজর মুসল্লিরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে উপযুক্ত শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরআন বিশুদ্ধভাবে পড়ার জন্য চেষ্টা করেন। এ জন্য প্রচুর লোক নিয়োগ দেওয়া আছে।
 
 হজে এসে মৃত্যুবরণকারীদের কাফন-দাফন হয় যেভাবে

বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তেলাওয়াত করুন সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। ’ –সূরা মুজ্জাম্মিল: ৪
 
হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে কোরআন (বিশুদ্ধভাবে) শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। ’ সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত জানা।
 
প্রতিদিন বাদ আসর এবং বাদ মাগরিব বিশিষ্ট আলেম ও মসজিদে হারামের ইমামরা মসজিদের বিভিন্ন স্থানে দ্বীনি বিষয়ে কথা বলেন, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
 
মসজিদে হারামে বিভিন্ন প্রবেশ পথ সংলগ্ন রয়েছে, বিভিন্ন মাসয়ালা জানার সুযোগ। সেখানে অভিজ্ঞ আলেমরা আছেন, উপস্থিত কারো কোনো মাসয়ালা জানার হলে তিনি সেখানে গিয়ে তা জেনে আসতে পারেন।
 
মসজিদে হারামে দেখা যায় অনেক মুসল্লি প্রায় প্রতিদিনই নফল রোজা পালন করছেন। বিশেষ করে সোমবার ও বৃহস্পতিবার। এ জন্য দেখা যায়, মাগরিবের আজান দিলে খুব সামান্য (খেজুর ও জমজম) ইফতার করে জামাতে অংশ নিচ্ছেন অনেকে।  
 
মসজিদে হারামে আসা-যাওয়ার পথে দেখা যায়, বিশেষ করে বিভিন্ন ওয়াক্ত নামাজের শেষে সৌদি সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে পানি, খাবার, খেজুর, জুস, লাবাং ইত্যাদি বিতরণ করা হয়। এখান থেকে শত শত মানুষ খাবার সংগ্রহ করে থাকেন। এসব খাবারের মানও বেশ ভালো।
 
খাবার বিতরণকারীরা অত্যন্ত বিনয় ও আগ্রহের সঙ্গে হাজি সাহেবদের খাবার দিয়ে থাকেন।
 
প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পরই মসজিদে হারামের চত্ত্বর, মসজিদের ভেতরের ফ্লোর ও বাইরের চত্বরগুলো নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।
 
ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মক্কার মিসফালার একটি কাপড়ের দোকানে ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজবাথরুমগুলো পরিষ্কার করা হয়। অজুর স্থানে হ্যান্ড ওয়াশ রাখা আছে, প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন।
 
মক্কা শহরের রাস্তাঘাট খুবই পরিষ্কার। রাস্তায় রাস্তায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বড় পলিথিন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। কাগজের টুকরা বা অন্য কোনো ময়লা পড়ামাত্র তা উঠিয়ে পলিথিনে ভরে রাখেন। এই পরিচ্ছন্নতা কমীদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি।
 
হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। ’
 
মসজিদে হারামের ভেতরে একটু পর পর জম জম (ঠাণ্ডা ও নরমাল) পানি ভর্তি ছোট ছোট ঝাড় ও সঙ্গে ওয়ানটাইম গ্লাস রাখা আছে, আছে মসজিদে হারামের চত্বরগুলোতেও পানির সুব্যবস্থা। সেখান থেকে যার যতো ইচ্ছা পানি পান করতে পারেন, কোনো বাধা নেই।
 
এভাবেই নানা ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগে মসজিদে হারাম কর্তৃপক্ষ আগত মুসল্লি বিশেষ করে হাজিদের সেবা দিয়ে থাকেন। তাদের একটাই লক্ষ্য, কোনো হাজির যেনো সামান্যতম কষ্টও না হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭
এমএইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।