১৩৬৯ হিজরি সনে বাদশাহ আবদুল আজিজ প্রতিষ্ঠা করেন সৌদি আরবের প্রথম সমৃদ্ধ ও আধুনিক এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইসলামের বিভিন্ন দিকের উচ্চশিক্ষার সঙ্গে এখানে রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উন্নত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ।
সৌদি আরবের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে আধুনিক বিষয়গুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে একটি সুন্দর, সুনিয়ন্ত্রিত, সুচিন্তিত কারিকুলাম দ্বারা পরিচালিত। সৌদিতে সব ধরনের শিক্ষা অবৈতনিক। সর্বোপরি সব শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য বই-পুস্তক আলাদা আঙ্গিকে রচিত ও প্রণীত।
সৌদি আরবের উচ্চশিক্ষা উচ্চতর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। বর্তমানে সৌদি আরবে উচ্চ শিক্ষার হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয়।
সৌদি আরবে প্রায় ৩০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সৌদি আরবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- বাদশাহ সউদ বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়াদ (১৯৫৭ খ্রি.), বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়, জেদ্দা (১৯৬৪ খ্রি.), মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা (১৯৬১ খ্রি., এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ শতাংশ আসন বিদেশি ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত), উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কা মুকাররমা (১৯৫০ খ্রি.), নাজরান বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৮ খ্রি.) ও রিয়াদ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় (২০০২ খ্রি.)।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশেষ মেগা পরিকল্পনায় বর্তমানে প্রায় এক লাখ সৌদি ছাত্র-ছাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধ্যয়নরত। তাদের বেশিরভাগ আমেরিকা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করছে।
উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় মক্কা নগর থেকে কিছু দূরে হারামের সীমানার ভেতরে আরাফাতের ময়দানের আগে তায়েফ রোডের পাশে অবস্থিত। এখানে ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক সাবজেক্টগুলোর পড়ালেখার মানও বেশ উন্নত। আধুনিক ক্লাসরুম, সুপরিসর ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি, উন্নত হোস্টেল ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা উপযোগী সুন্দর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।
সৌদি আরবের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য আলাদা ক্যাম্পাস আছে। উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য আলাদা ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এখনও ছেলে শিক্ষার্থীদের মতো সব সুযোগ-সুবিধা মেয়েরা আলাদাভাবে ভোগ করেন।
বর্তমানে স্কলারশিপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করছেন। তাদের একজন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া ওয়া দিরাসা ইসলামিয়া অনুষদের ছাত্র। তিনি জানালেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে। এখানে মসজিদে হারামের সম্মানিত ইমাম ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস থেকে শুরু করে মসজিদের হারামের অন্য ইমাম-খতিবরা ক্লাস নেন।
তিনি আরও জানালেন, এখানে মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশে বিশ্বের মেধাবী ছাত্ররা সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ পাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের আওতাধীন সুবিধাগুলো হলো- শিক্ষার্থীরা ফ্রি থাকার পাশাপাশি মাসিক বৃত্তি পাবেন। তাদের যাবতীয় বেতন ও পরীক্ষার ফি মওকুফ। মেডিকেল সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বিবাহিত ছাত্ররা সপরিবারে এখানে থাকতে পারেন। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে প্রতিবছর বিনামূল্যে নিজ দেশ থেকে ঘুরে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যাওয়া ও আসার টিকিট।
তাদেরকে হজ-ওমরা আদায় করানো হয়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানগুলো শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। সৌদি আরবের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে (মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত) আরব দেশগুলো ব্যতীত অন্য দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমেই সরাসরি অনার্স কোর্সে অধ্যয়নের সুযোগ নেই।
এক্ষেত্রে তাদেরকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে হয়। অতঃপর ভাষা শিক্ষা ইনিস্টিটিউটের সন্তোষজনক ফলাফল অর্জিত হলে- অনার্স কোর্সে অধ্যয়নের সুযোগ হয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনারব ভাষাভাষীদের জন্য আরবি ভাষা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলোতে ভর্তির জন্য আরবি ভাষা শিক্ষা প্রস্তুতিমূলক কোর্স, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ট্রেনিং কোর্স ইত্যাদি।
সামনের মহররম মাস থেকে অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এমএইউ/জেডএস